ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

সামাজিক অনাচার দূরীকরণে আইয়ামে বীজের রোজা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৩৪ ঘণ্টা, জুলাই ৩, ২০১৭
সামাজিক অনাচার দূরীকরণে আইয়ামে বীজের রোজা সামাজিক অনাচার দূরীকরণে আইয়ামে বীজের রোজা

আইয়ামে বীজের রোজা রাখা সুন্নত। সাহাবি আবদুল মালেক বিন কুদামা বিন মালহান (রা.) বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে আইয়ামে বীজ তথা চন্দ্রমাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে রোজা রাখার নির্দেশ দিতেন। -সুনানে আবু দাউদ

ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) সফর ও মুকিম অবস্থায় কখনও আইয়ামে বীজের রোজা ভঙ্গ করতেন না। -সুনানে নাসাঈ

বর্ণিত হাদিস থেকে প্রমাণ হয়, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) তার প্রিয় সাথীদের আইয়ামে বীজের রোজা রাখার জন্য বিশেষভাবে নির্দেশ দিতেন; কিন্তু এই নির্দেশ আবশ্যকতার ভঙ্গিতে ছিল না বরং তা ছিল নফল তথা অতিরিক্ত আমল হিসেবে।

নবী করিম (সা.) সাহাবিদের এই রোজা রাখতে বলতেন, কিন্তু তাদের সবাই এ নির্দেশ পালন করতেন না; যা থেকে প্রমাণ হয়- তার এ নির্দেশ নফল হিসেবে ছিল ওয়াজিব হিসেবে নয়।

আইয়ামে বীজ আরবি দু’টি শব্দের সমন্বয়ে গঠিত। আইয়াম অর্থ দিবসসমূহ। আর বীজ অর্থ শুভ্র, সাদা, শ্বেত, খাঁটি, নির্ভেজাল...। চন্দ্রমাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখকে আইয়ামে বীজ বলা হয়।

আইয়ামে বীজ তথা চন্দ্র মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ চাঁদ পূর্ণতা পায়। এ জন্য এ সময়ে মাটি ও মানুষের ওপর এর প্রভাবও পড়ে সর্বোচ্চ। ফলে ভূপৃষ্ঠ ও মানুষের অভ্যন্তরে এ আকর্ষণের মাত্রাও বৃদ্ধি পায়। ভূভাগে এ আকর্ষণ প্রকাশিত হয় সাগর-নদীতে জোয়ার-ভাটার মাধ্যমে আর মানুষের মধ্যে এটির প্রকাশ ঘটে চঞ্চলতা, আবেগ-উদ্বেগ, গোঁড়ামি, দুশ্চিন্তা, অস্থিরতা, মানবিক ও স্নায়ুবিক উত্তেজনা ইত্যাদি বৃদ্ধির মাধ্যমে, যার সর্বশেষ ফলাফল দাঁড়ায় অপরাধপ্রবণতা বৃদ্ধির মাধ্যমে।

ইবনে সীনা (৯৮০-১৩৭ খ্রি.) তার ‘আল-কানুন ফীত্-তীব’ গ্রন্থে বলেন, ‘মাসের প্রথম ভাগে শিঙ্গা লাগাতে নিষেধ করা হয়েছে, কারণ এ সময়ে মিক্সার ঠিকমতো প্রভাব বিস্তার করতে পারে না। একইভাবে মাসের শেষ ভাগেও শিঙ্গা ব্যবহার না করতে বলা হয়েছে। কারণ এ সময়ে এর কার্যকরণ ক্ষমতা হ্রাস পায়; বরং মাসের মধ্যার্ধে এর ব্যবহারের নির্দেশ এসেছে, যাতে চাঁদের আলো ও আকর্ষণ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মিক্সারের কার্যকরণ ক্ষমতার পূর্ণতা পায়। ’

আইয়ামে বীজের সময়কালে ভূপৃষ্ঠের ওপর এই প্রভাবের প্রমাণ পাওয়া যায় এ দিনগুলোতে নদী-সাগর পাড়ে গেলে। কেননা এ সময়ে জোয়ার ও ভাটা সর্বোচ্চ সীমায় অবস্থান করে এবং পানির তীব্রতা বেড়ে যায়। দেখা যায় অন্য সময়ে জোয়ারে যত পানি থাকে এ সময়ে ভাটাতে সমপরিমাণ পানি থাকে।

একইভাবে মানুষের ওপর চাঁদের এ প্রভাবের প্রমাণ পাওয়া যায় ওই দিনগুলোতে আদালত, পুলিশ থানা বা বিচারালয়ে গেলে। দেখা যায়, বড় বড় অপরাধ, হত্যা, চুরি, বিচ্ছেদ, ধর্ষণ ইত্যাদি এ সময়কালে বৃদ্ধি পায়।  

‘রোজা ঢালস্বরূপ’ হওয়ায় প্রবৃত্তির যাবতীয় খামখেয়ালিপনা থেকে নিজেকে বিরত রাখা সম্ভব হয়।

হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) কর্তৃক আইয়ামে বীজের রোজার অসিয়তের মধ্যে তাই নিহিত রয়েছে এক চিরন্তন মুজেজা। চাঁদের পূর্ণতা ও মানবীয় অপরাধপ্রবণতা বৃদ্ধির এ দিনগুলোতে রোজা মানবিক উৎকর্ষতা সাধন, অপরাধ নিয়ন্ত্রণ, বিভিন্ন দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণের এক বিজ্ঞানময় পদ্ধতির বহিঃপ্রকাশ- যা একজন উম্মি নবীর গৃহীত বাস্তবমুখী এক কর্মসূচি।

অতএব মানুষের আত্মিক, মানবিক, পারিবারিক, সামাজিক ও আন্তর্জাতিক জীবনের বিভিন্ন সমস্যা দূরীকরণের ক্ষেত্রে আইয়ামে বীজের রোজা এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৫ ঘণ্টা, জুলাই ০৩, ২০১৭
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।