ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

‘শক্তিশালী ও সুস্থ মুমিন দুর্বল মুমিনের চেয়ে উত্তম’

মাহফুজ আবেদ, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫৫ ঘণ্টা, জুলাই ১৫, ২০১৭
‘শক্তিশালী ও সুস্থ মুমিন দুর্বল মুমিনের চেয়ে উত্তম’ জনস্বাস্থ্য পরিচর্যার পরই ইসলাম রোগ-প্রতিরোধের প্রতি জোরালো তাগিদ দিয়েছে এবং চিকিৎসা-ব্যবস্থা গ্রহণ করতে উৎসাহিত করেছে

বর্তমান সময়ের আলোচিত একটি রোগ হচ্ছে- চিকুনগুনিয়া। ছোট-বড় সবাই এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। চিকিৎসকদের মতে, চিকুনগুনিয়া মরণঘাতী কোনো রোগ নয়। এ নিয়ে অহেতুক ভীত বা আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।

সুস্থ থাকার জন্য এমন সচেতনতা প্রয়োজন। চিকিৎসাব্যবস্থায় এ বিষয়ে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা রয়েছে।

জনস্বাস্থ্য পরিচর্যা ও রোগ-প্রতিরোধের বিষয়ে ইসলাম সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদান করেছে। সতর্কতা সত্ত্বেও কোনো জটিল ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে গেলে এর চিকিৎসাসেবা সুনিশ্চিত করার প্রতি জোরালো তাগিদ দেওয়া হয়েছে। পবিত্র কোরআন ও হাদিসের আলোকে জনস্বাস্থ্য পরিচর্যার বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে।  

সবল ও সুস্থতা ইসলামের কাম্য। তাই ইসলাম জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়ে অত্যন্ত গুরুত্বারোপ করেছে। সুস্থ ও সবল থাকাকে অনুপ্রাণিত করে বলা হয়েছে, ‘শক্তিশালী ও সুস্থ মুমিন দুর্বল মুমিনের চেয়ে উত্তম। ’

এ প্রসঙ্গে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ঈমানদার ব্যক্তির শারীরিক শক্তি আছে, তিনি শ্রেষ্ঠ ও আল্লাহর কাছে প্রিয় সেই মুমিন অপেক্ষায় যে দুর্বল, শক্তিহীন, যার শারীরিক শক্তি কম। ’

ইবাদত-বন্দেগির জন্য যথেষ্ট শারীরিক শক্তি প্রয়োজন। দৈহিক শক্তি আল্লাহর অন্যতম শ্রেষ্ঠ নিয়ামত। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) পাঁচটি অমূল্য সম্পদ হারানোর আগে এগুলোর কদর করার কথা বলেছেন। এর অন্যতম হচ্ছে- স্বাস্থ্য ও সুস্থতা।  

মানবদেহে যেসব কারণে নানাবিধ রোগ বাসা বাঁধে এগুলোর মধ্যে অপরিণামদর্শী খাদ্যাভ্যাস এবং অতিশয় ভোজন অন্যতম, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর ও হুমকিস্বরূপ।  

জনস্বাস্থ্য পরিচর্যার পরই ইসলাম রোগ-প্রতিরোধের প্রতি জোরালো তাগিদ দিয়েছে এবং চিকিৎসা-ব্যবস্থা গ্রহণ করতে উৎসাহিত করেছে। যে জিনিসগুলোর কারণে মানুষের রোগ-ব্যাধি হয় ইসলাম সেগুলোকে নিষিদ্ধ করে দিয়েছে। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের স্লোগান হচ্ছে, ‘চিকিৎসার চেয়ে রোগ-প্রতিরোধ উত্তম। ’

হাদিস শরিফে চিকিৎসা-সংক্রান্ত অধ্যায়ে জনস্বাস্থ্যের ব্যাপারে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা আলোচিত হয়েছে। আল্লাহ যেখানে মানুষ সৃষ্টি করেছেন, তার আশপাশে খাদ্যশস্যের ভেতর রোগব্যাধির শেফা বা আরোগ্যও দিয়েছেন।  

হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সব সুন্নত বিজ্ঞানভিত্তিক ও স্বাস্থ্যসম্মত। কেউ যদি ঘুম থেকে জাগা, পানাহার, চালচলন, মলমূত্র ত্যাগসহ যাবতীয় আমল সুন্নত অনুযায়ী সম্পাদন করেন তাহলে জটিল রোগের ঝুঁকি থেকে তিনি মুক্ত থাকতে পারবেন। যেমন মাটির ঢিলা ব্যবহার, হাঁচি ও হাই তোলার সময় নাক ঢেকে রাখা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা, মিসওয়াক করা, রাগ নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য খুবই সহায়ক।

ইসলামি শরিয়ত মানবস্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য যেমন গুরুত্ব দিয়েছে, তেমনি তা কার্যকরের ফলপ্রসূ উপায় বাতলে দিয়েছে। যেমন নেশাজাতীয় দ্রব্য ধূমপান, মাদককে হারাম করা, পরিমিত আহার, সময়ানুগ খাবার গ্রহণ প্রভৃতি। কাজেই জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য সচেষ্ট হওয়া ঈমানের দাবি।
 
তবে অসুস্থ হলে আল্লাহর ওপর ভরসার পাশাপাশি চিকিৎসাসেবার জন্য ব্যবস্থাপত্র গ্রহণ করাও ইসলামের শিক্ষা। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘হে আল্লাহর বান্দাগণ! তোমরা চিকিৎসা করো। কারণ যিনি রোগ দিয়েছেন, তিনি তার প্রতিকারের জন্য ওষুধের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। ’

এক ব্যক্তি হজরত রাসূলুল্লাহকে (সা.) প্রশ্ন করেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমরা রোগ হলে চিকিৎসা করি, তা কি তাকদির পরিপন্থী নয়? উত্তরে তিনি বললেন, না, চিকিৎসা গ্রহণ করাই হলো তাকদির। ’

ইসলাম মানবতার কল্যাণের জন্য যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন তার সবটুকুই করেছে। অসুস্থ ব্যক্তির সঙ্গে উত্তম আচরণ এবং তার চিকিৎসাসেবার জন্য সুস্থ ব্যক্তিকে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।

হাদিস শরিফে মুমিন ব্যক্তির জন্য ছয়টি অভ্যাসের মধ্যে কোনো পীড়াগ্রস্ত ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়া এবং তার সেবা-শুশ্রূষাকে অন্যতম হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। রোগীকে দেখতে যাওয়া, তার কপালে হাত রাখা এবং তার জন্য আল্লাহর দরবারে দোয়া ও প্রার্থনা করার জন্য ঈমানদারকে বারবার উৎসাহিত করা হয়েছে।  

এছাড়া পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশের প্রতিও ইসলাম বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। রোগ-ব্যাধি ছড়ানোর বড় কারণ হচ্ছে অপরিষ্কার ও নোংরা পরিবেশ। ‘পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ’ বলে হাদিস শরিফে ঘোষিত হয়েছে। পরিবেশের ভারসাম্যতা নষ্ট হতে পারে এমন কোনো কার্যক্রমই ইসলামে স্বীকৃত নয়।  

এজন্য ইসলামসম্মত পরিবেশ গড়ে তুলতে পারলে রোগ-বালাই থেকে রক্ষা পাওয়া সহজতর হয়। ইসলামের এ চমৎকার নির্দেশনা মোতাবেক জীবন পরিচালনা করা হলে ইহলৌকিক শান্তি ও পরকালীন সফলতা অবশ্যম্ভাবী। তাই ইসলামের স্বাস্থ্যনীতি অনুসরণ করা মুসলমান হিসেবে প্রত্যেকের জন্য অত্যাবশ্যক। আল্লাহ আমাদের তওফিক দান করুন। আমিন।

ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ২০৫৫ ঘণ্টা, জুলাই ১৫, ২০১৭
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।