ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

‘শেষ সম্বল বেইচ্যা হজে যাইতিছি, সবার দোয়া চাই’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১২৬ ঘণ্টা, জুলাই ২৯, ২০১৭
‘শেষ সম্বল বেইচ্যা হজে যাইতিছি, সবার দোয়া চাই’ হজক্যাম্পে হজযাত্রী আব্দুল বারেক; ছবি- দিপু

ঢাকা: হজযাত্রীদের পদচারণায় এখন মুখরিত আশকোনা হজক্যাম্প। হাজীক্যাম্পের সর্বত্র হজযাত্রী ও তাদের স্বজনদের উপচে পড়া ভিড়।  হজের উদ্দেশ্যে সৌদি আরবে রওনা হওয়ার আগে হজযাত্রীরা প্রয়োজনীয় টুকিটাকি কাজ সেরে নিচ্ছেন এখানেই।

সৌদি আরবে হজের সময় পশু কোরবানির জন্য কেউ বাংলাদেশি টাকা রিয়ালে ভাঙ্গিয়ে নিচ্ছেন।  কেউ হাতে ধরে আছেন ই-ভিসা  প্রিন্ট কপিসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র।

 অনেকে হজ অফিস থেকে পাওয়া বিশেষ আইডি কার্ড গলায় ঝুলিয়েছেন।

এতো ভিড়ের মধ্যে হজক্যাম্পের প্রথম তলার ফ্লোরে বসে আছেন আব্দুল বারেক (৭০)। পরনে সাদা লুঙ্গি ও সাদা চাদর।  পাশে রাখা ছোট হাতব্যাগ থেকে সাদা চুল ও দাঁড়িতে মনের আনন্দে সুগন্ধি ব্যবহার করছেন তিনি।

তার জন্মস্থান কুড়িগ্রাম জেলার চর রাজিবপুরে।  জীবনে কোনোদিন স্কুলের আঙ্গিনা মাড়াননি বারেক।  দারিদ্রতার সঙ্গে লড়াই করেই জীবনের ৭০ বছর পার করেছেন। অভাব ও অনটনের মধ্যে থেকে পাঁচ ছেলে হাবিবুর রহমান, ফুল মিয়া,হাফিজুর রহমান, রফিকুল ইসলাম ও হানিফ আলীকে বড় করেছেন।  এছাড়া অনেক কষ্টে দুই মেয়ে রাবিয়া খাতুন ও বানেচা খাতুনের বিয়ে দিয়েছেন।   সম্পদ বলতে বাড়ি ভিটার ৮ কাঠা ও ধানি জমি ১৬ কাঠা।  মোট ২৪ কাঠা জমির মালিক হলেও তিন লাখ টাকা ঋণ আছে বারেকের।  কোনো ছেলে-মেয়ের নামে এক কাঠা জমিও দিতে পারেননি তিনি।

এতো অভাব অনটনের মধ্যে থাকলেও সৌদি আরবে হজ করার স্বপ্নে বিভোর ছিলেন বাল্যকাল থেকেই।  হজের স্বপ্ন পূরণ করতে গিয়ে শেষ সম্বল ১৬ কাঠা জমি বিক্রি করেছেন তিনি।  প্রায় ছয় লাখ টাকা দিয়ে এই জমি বিক্রি করেছেন। তিন লাখ টাকা দিয়ে ঋণ পরিশোধ করেছেন আর বাকি তিন লাখ টাকা দিয়ে হজে যাচ্ছেন বারেক।  এখন সম্বল বলতে বাড়ি ভিটার ৮ কাঠা জমি অবশিষ্ট আছে তার। হজক্যাম্পে অন্যান্য হজযাত্রীদের সঙ্গে আব্দুল বারেক হজযাত্রী বারেক উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেন, ‘শ্যাষ সম্বল ১৬ কাঠা জমি বেইচ্যা হজে যাইতিছি, সবার দোয়া চাই। আমার আয় ইনকাম নাই দিবারও কেও নাই। তাই জমি বেইচ্যা হজে যাইতিছি।  তিন লাখ টাকা দিয়া ঋণ শোধ করছি।  আর বাকি ট্যাকা নিয়া হজে যাইতিছি। হজে সগগলের জন্যেই দোয়া করমু। ’

তবে হজ করতে এসে খানিকটা বিড়ম্বনায় পড়েছিলেন বারেক।  বৃহস্পতিবার ফজরের আযানের সময় কুড়িগ্রাম থেকে হজ ক্যাম্পে আসেন তিনি। একই এলাকার মোয়াল্লেম মাওলানা ফরিদুল হকের নিকট ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা জমা দিয়ে ছিলেন।   কিন্তু মোয়াল্লেম এই হজযাত্রীকে রেখে স্ত্রী,  পুত্র, পুত্রবধু ও শাশুড়িকে নিয়ে বৃহস্পতিবার সৌদি আরবে হজ পালন করতে চলে গেছেন।

এতে করে সাময়িকভাবে ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন বারেক।  তবে বারেকের সাময়িক সমস্যা সমাধান হয়েছে হজ ক্যাম্পের হস্তক্ষেপে। শনিবার রাতে সৌদি এয়ারলাইন্সের হজফ্লাইটের যাত্রী তিনি।  

আরেক হজ যাত্রী কুড়িগ্রাম চর রাজিবপুরের রবিউল ইসলাম।  দারিদ্র জয় করে হজে যাচ্ছেন তিনিও।  মনের ইচ্ছা শক্তি থাকলে দারিদ্র কোনো প্রতিবন্ধকতা হতে পারে না বারেক ও রবিউলের কথায় সেটা ফুটে উঠেছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৭ ঘণ্টা, জুলাই ২৯, ২০১৭
এমআইএস/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।