ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

মসজিদের কাজ না করে লভ্যাংশের নামে অর্থ আত্মসাৎ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১১২ ঘণ্টা, জুলাই ১১, ২০১৯
মসজিদের কাজ না করে লভ্যাংশের নামে অর্থ আত্মসাৎ

মৌলভীবাজার: মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল থানা জামে মসজিদের উন্নয়ন কাজ না করে লভ্যাংশের নামে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদার কামাল আহমদের বিরুদ্ধে। তার এ কাজে সহযোগিতা করেছেন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নক্সাকার (এসএই) মো. মনিরুজ্জামান।

এলজিএইডি ও মসজিদ কমিটি সূত্রে জানা যায়, গত বছর শ্রীমঙ্গল থানা জামে মসজিদের উন্নয়ন কাজের জন্য ১০ লাখ টাকার বরাদ্দ দেয় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। মসজিদের সীমানা প্রাচীর, দেয়ালের টাইলস ও ফ্লোরে টাইলসের কাজের জন্য ৯ লাখ ১৪ হাজার টাকা চুক্তিতে মৌলভীবাজারের মাতারকাপন এলাকার কামাল আহমদকে কাজের ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়।

 

চুক্তি অনুযায়ী ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও তা বিলম্ব করেন ঠিকাদার কামাল। এরপর কামাল কাজ না করে মসজিদ কমিটির হাতে ৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা তুলে দেন। নিজে কাজ না করে এমন অর্থ লেনদেন সম্পূর্ণ নিয়মবহির্ভূত। এরপর চুক্তিমূল্যের কম টাকা মসজিদ কমিটিকে বুঝে নিতে বাধ্য করেন এলজিইডি’র নক্সাকার মনিরুজ্জামান। ওই টাকার সঙ্গে আরও টাকা যোগ করে মসজিদ কমিটি এলজিইডির কাজের শিডিউলের চেয়ে উন্নত কাজ করান। যে কাজে একজন প্রকৌশলী বিনামূলে করেছে বলে জানিয়েছে মসজিদ কমিটি।  

কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী কাজের ঠিকাদার নিজে কাজ না করে নক্সাকার মো. মনিরুজ্জামানকে হাত করে কমিটির কাজকে নিজের নামে দেখিয়ে বিল তুলে নেন কামাল। এ কাজে তাকে সহযোগিতা করার জন্য মনিরুজ্জামান টাকার ভাগ পেয়েছেন।

এ ব্যাপারে মসজিদ কমিটির মতোয়াল্লি সোনা মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, মসজিদের নামে ১০ লাখ টাকার কাজ এসেছে আমরা জেনেছি। আমরা ঠিকাদারের অপেক্ষায় ছিলাম। হঠাৎ একদিন ঠিকাদার কামাল আহমদ ও নক্সাকার মনিরুজ্জামান আমাদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। এরপর ৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা আমাদের হাতে তুলে দেওয়ার কথা বলে তারা জানান আমরা যেন আমাদের চাহিদা মত কাজ করিয়ে নেই। বাকি টাকা কোথায়? জিজ্ঞেস করলে তারা জানায়, বাকিটা ট্যাক্স কাটা হয়েছে। এরপর কয়েক কিস্তিতে তারা আমাদের সে টাকা দেয়। পরে আমাদের কমিটির একজন প্রকৌশলী বিনা পারিশ্রমিকে আমাদের কাজ করে দেন। এলজিইডির ঠিকাদার কোনো কাজ করেনি।

কাজ না করে লভ্যাংশ নেওয়ার কথা স্বীকার করে ঠিকাদার কামাল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, আমি আমার লাইসেন্স দিয়ে কাজ নিয়েছি। সে হিসেবে আমার লাভ রেখে দিয়েছি। কাজ না করে আমি বিল তুলেছি কিভাবে তা এলজিইডির কর্মকর্তাদের জিজ্ঞেস করেন।

জানা যায়, ঠিকাদার কামাল আহমদ জামায়াত ইসলামের রুকন (নেতা)। তার বাড়ি মৌলভীবাজার সদর উপজেলার মাতার কাপন এলাকায়। তিনি বিভিন্ন দপ্তরের টেন্ডার নিয়ে কর্মকর্তাদের অর্থের বিনিময়ে বিভিন্নভাবে হাত করে কাজ না করিয়ে টাকা তুলে নেন।

নক্সাকার মো. মনিরুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, আমি দেখেছি শিডিউলের কাজ হয়েছে। আমি সে রিপোর্ট অফিসে দিয়েছি। সে কি করেছে তা আমার দেখার বিষয় না।

উপজেলা প্রকৌশলী সঞ্জয় মোহন সরকার বাংলানিউজকে বলেন,   সামাজিক অবকাঠামো উন্নয়ন কাজের আওতায় এই কাজটি করা হয়েছে। কোনো ঠিকাদার নিজে কাজ না করে স্থানীয়দের সঙ্গে অর্থ লেনদেনের সুযোগ নেই। কাজ করতে না পারলে ঠিকাদার আমাদের জানাবে।

এলজিইডি’র কর্মকর্তার যোগসাজশের বিষয়ে তিনি বলেন, কোনো কর্মকর্তা লেনদেনের মাঝখানে থাকতে পারেন না। তিনি শুধু কাজ পর্যবেক্ষণ করবেন। এই কাজের মেয়াদ শেষ ও বিল তুলে নেওয়া হয়েছে। এখন আমাদের করার কিছু নেই। তবুও বিষয়টি খতিয়ে দেখব।  

বাংলাদেশ সময়: ২১১৩ ঘণ্টা, জুলাই ১০, ২০১৯
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।