ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

মিষ্টি গাছ || মহিউদ্দীন আহ্‌মেদ

গল্প/ইচ্ছেঘুড়ি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫০১ ঘণ্টা, মে ৩০, ২০১৭
মিষ্টি গাছ || মহিউদ্দীন আহ্‌মেদ মিষ্টি গাছ

আজ কলতান বিদ্যানিকেতনে যেমন খুশি তেমন আঁকো প্রতিযোগিতা। এতে অংশ নিচ্ছে প্লে ও নার্সারি ক্লাসের শিক্ষার্থীরা। তারা ছবি আঁকায় ভীষণ ব্যস্ত।

আজ কলতান বিদ্যানিকেতনে যেমন খুশি তেমন আঁকো প্রতিযোগিতা। এতে অংশ নিচ্ছে প্লে ও নার্সারি ক্লাসের শিক্ষার্থীরা।

তারা ছবি আঁকায় ভীষণ ব্যস্ত।

ঢাকা থেকে একজন চিত্রশিল্পী এসেছেন। তার নাম কালাম চৌধুরী। তিনি চারুকলা বিভাগের শিক্ষক। চুলগুলো সাদা এবং ঘাড় পর্যন্ত লম্বা। দেখে মনে হচ্ছে মাথায় নীল আকাশের সাদা সাদা মেঘ পরিপাটি করে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। গোঁফগুলোও সাদা। আর ঠোঁট দুটো লাল টকটকে। তিনি নিয়মিত পান খান। অনেক ছবির ভেতর থেকে তিনিই বাছাই করবেন সেরা ছবিটি।
 
পুরো স্কুলজুড়ে সাজ সাজ রব। বাচ্চারা স্কুল ড্রেসের পরিবর্তে নানারকম রঙিন পোশাক পরেছে। শিক্ষকরাও সেজেছেন বাহারি সাজে।

স্কুল গেটের বাইরে অস্থায়ী দোকান বসেছে। সেখানে বিক্রি হচ্ছে নানান পসরা। যেমনÑ আইসক্রিম, বাদাম, চকোলেট, পপকর্ন, বেলুন- আরো কতো কী! এ যেনো রীতিমতো মেলা!

কেউ এঁকেছে গ্রামের দৃশ্য, কেউ এঁকেছে প্রজাপতি, কেউবা এঁকেছে আকাশে ডানা মেলে উড়ে যাওয়া এক ঝাঁক পাখির ছবি। কিন্তু নীল এঁকেছে একটি গাছের ছবি। তাতে থোকা থোকা মিষ্টি ধরেছে। দেখে মনে হচ্ছে মিষ্টিগুলো টসটসে রসে ভরা। নীল এটির নাম দিয়েছে মিষ্টি গাছ।

ছবিটি দেখে মুখে হাত চেপে হাসতে হাসতে জিসান বললো, ‘এটা তুমি কী এঁকেছো নীল? গাছে কি কখনো মিষ্টি ধরে? কিচ্ছু হয়নি!’
নীল কিছু বললো না। চুপচাপ বসে রইলো।  

জিসান ইশারায় প্রিয়ন্তীকে নীলের ছবিটি দেখালো। প্রিয়ন্তী ছবিটি দেখে কিছুই বুঝতে পারলো না। মুচকি হেসে নীলকে কিছু একটা বলতে চাইলো। কিন্তু নীল ওর দিকে তাকালো না। কারণ নীল বুঝতে পেরেছে, প্রিয়ন্তীও ওর ছবিটি দেখে হাসাহাসি করবে।   এরই মধ্যে ঘণ্টা পড়ে গেলো।

আর্ট মিস বললেন, ‘টাইম ইজ ওভার। কেউ জায়গা থেকে উঠবে না, কথাও বলবে না। ’

আর্ট মিস সবার ছবি নিয়ে গেলেন। জানা গেলো, কিছুক্ষণের মধ্যেই শিল্পী স্যার ছবিগুলো দেখবেন এবং ঘোষণা করবেন কার ছবিটি সেরা।
 
আবার ঘণ্টা পড়লো।
শিল্পী স্যার সবাইকে নিয়ে স্কুল মাঠে গেলেন। সবাই সবুজ মাঠে বসলো। দূর থেকে দেখে মনে হলো যেন ইয়া বড় একটি পদ্ম ফুটেছে স্কুল মাঠে।
সবগুলো ছবি শিল্পী স্যারের হাতে। বাচ্চারা অধীর আগ্রহে তার দিকে তাকিয়ে আছে।  

শিল্পী স্যার পান চিবোতে চিবোতে বাচ্চাদের দেখতে লাগলেন। তার লাল ঠোঁট দুটিতে যেনো হাসির ফোয়ারা বইছে। চোখ দুটি আনন্দে চিকচিক করছে। বোঝা যাচ্ছে, বাচ্চাদের সঙ্গ পেয়ে তিনি খুবই আনন্দিত।  
তিনি বললেন, ‘তোমরা সবাই সুন্দর এঁকেছো। তোমাদের অনেক অনেক ধন্যবাদ। ’  

হেড মিস বাচ্চাদের হাততালি দেওয়ার ইঙ্গিত করলেন। সবাই হাততালি দিলো। মনে হলো, হাততালি নয়, একসঙ্গে অসংখ্য খই ফুটে উঠলো।
শিল্পী স্যার বললেন, ‘যেমন খুশি তেমন আঁকো প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী তোমরা সবাই শুভেচ্ছা পুরস্কার পাচ্ছো। ’

হেড মিসের নির্দেশে নাসিমা খালা সবার হাতে রং, পেন্সিল ও খাতা দিলো।

অপেক্ষার পালা শেষ।
শিল্পী স্যার অনেকগুলো ছবির ভেতর থেকে একটি ছবি তুলে নিলেন। বাচ্চাদের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘তোমাদের মধ্যে কে, আহমেদ আরিয়ান নীল?’
‘ইয়েস স্যার’- বলে এক হাত উঁচু করে উঠে দাঁড়ালো নীল।       
শিল্পী স্যার মিষ্টি হেসে বললেন, ‘ও তুমি! আমার কাছে চলে এসো প্লিজ!’
নীল তার কাছে গেলো।
শিল্পী স্যার নীলকে আদর করে চুমো খেলেন। তারপর নীলের ছবিটি সবাইকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখালেন এবং বললেন, ‘আমার বিচারে এটিই সেরা ছবি। ’

তারপর তিনি তার ব্যাগ থেকে সুন্দর একটি তুলি বের করে নীলের হাতে তুলে দিলেন। এটি ছিলো শিল্পী স্যারের পক্ষ থেকে নীলের জন্য বিশেষ পুরস্কার।  

আর একবার হাততালির খই ফুটলো।

শিল্পী স্যার বললেন, ‘তোমাদের যখন যা আঁকতে ইচ্ছে করবে তা-ই আঁকবে। এটাই ছবি আঁকার নিয়ম। নীলের ছবিটা দেখো। ওর মিষ্টি গাছে অসংখ্য মিষ্টি ধরেছে। কী অদ্ভুত ব্যাপার! তাই না?’
সবাই বললো, ‘জ্বি স্যার। ’

তিনি নীলের জন্য সবাইকে আর একবার হাততালি দিতে বললেন। মুহুর্মুহু হাততালির শব্দে পুরো স্কুল মাঠ মুখরিত হয়ে উঠলো।  

অনুষ্ঠান শেষে জিসান নীলকে বললো, ‘তোমার ছবিটি যে এতো সেরা হয়েছে, আমি বুঝতেই পারিনি!’

নীল বললো, ‘আমিও বুঝতে পারিনি। ’  

 ইচ্ছেঘুড়ি

বাংলাদেশ সময়: ১০৩৫ ঘণ্টা, মে ৩০, ২০১৭
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।