ঢাকা, সোমবার, ১৫ পৌষ ১৪৩১, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

ডানার খোঁজে | নাজিয়া ফেরদৌস

গল্প/ইচ্ছেঘুড়ি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২১৫ ঘণ্টা, আগস্ট ৩, ২০১৭
ডানার খোঁজে | নাজিয়া ফেরদৌস  ডানার খোঁজে

পরীদের রাজ্যে একটি টুকটুকে পরীর জন্ম হলো। পরীটা দেখতে এতো সুন্দর এতো ফুটফুটে যে তার দিকে তাকালে আর চোখ ফেরানো যায় না। কিন্তু তার জন্মের পরই ঘটলো এক অদ্ভুত কাণ্ড! সবাই দেখলো যে ছোট্ট পরীটির ডানা নেই। সে একেবারে মানুষের মতো হয়েছে। সবাই ভীষণ চিন্তায় পড়লো। ডানা ছাড়া তো সে পরীর দেশে থাকতেই পারবে না। উড়তেও পারবে না, ঘুরতেও পারবেনা। এখন কী হবে?

পরীরা চিন্তা করলো রানির কাছে যাবে। তারা ফুটফুটে পরীকে নিয়ে রানির দরবারে গিয়ে হাজির হলো।

এতো সুন্দর পরী কিন্তু তার ডানাই নেই! কি আশ্চর্য! পরী রানি চিন্তা করতে থাকলেন। দু’দিন ধরে তিনি শুধু চিন্তা করলেন আর অনেক বই পড়লেন। তারপর বললেন হাজার বছরে এমন একবারই হয়। এই পরীটাকে পৃথিবীতে রেখে আসতে হবে। যদি সে ভালো কাজ করে তবে ধীরে ধীরে তার ডানা ফিরে আসবে। আর খারাপ কাজ করলে ডানা কখনই তৈরি হবে না। মনে রাখতে হবে এই কথা সে যেন না জানতে পারে, জানলে সে আর পরী রাজ্যে আসতে পারবে না।

রানির কথা শুনে ছোট্ট পরীকে নিয়ে তার বাবা-মা পৃথিবীতে চলে গেলো। তারা সেখানে মানুষের সঙ্গে মানুষের মতো বাস করতে লাগলো। আর ছোট্ট পরী শিখতে লাগলো কীভাবে মানুষের সেবা করতে হয়। পরীটার চোখ ছিল গাঢ় নীল রঙের। তাই সবাই তাকে ডাকতো নীলা বলে। ছোট্ট পরীর সুন্দর ব্যবহারে সবাই মুগ্ধ হতো, সবাই তাকে অনেক ভালোবাসতো।

ছোট্ট পরী তখন একটু বড় হয়েছে। একদিন সে নদীর তীরে ঘুরতে গেলো। সেখানে একটা নৌকায় বসে ছিল এক বুড়ি। সে জোরে জোরে কাঁদছিল। বুড়ির কান্না শুনে ছোট্ট পরীর খুব মায়া হলো। সে কাছে গিয়ে বললো কী হয়েছে বুড়িমা, কাঁদছো কেন? বুড়ি জানালো তার গায়ে কোনো শক্তি নেই। কিন্তু নদী পার হয়ে তাকে ওপারে যেতেই হবে। তাই সে কষ্টে কাঁদছে।

ছোট্ট পরী বলল আমি তোমাকে নদী পার করে দেবো। এই বলে সে নৌকায় চড়ে অনেক কষ্টে বৈঠা ঠেলে বুড়িকে নদী পার করে দিলো। বুড়ি খুশি হয়ে নীলার পিঠে হাত বুলিয়ে বললো তোমার অনেক ভালো হবে। বুড়ির আদরে নীলা পিঠে সুড়সুড়ি অনুভব করলো কিন্তু বাড়ির কথা মনে পড়তেই সে নৌকা নিয়ে ফিরে এলো।

আরেক দিন সে দেখলো কয়েকটি বাচ্চা রাস্তার পাশে বসে কাঁদছে। সে তাদের কাছে গেলো। জানতে পারলো ওরা সারাদিন কিছু খায়নি তাই ক্ষুধার কষ্টে কাঁদছে। নীলার খুব মায়া হলো। সে ওদের নিজের বাসায় নিয়ে গিয়ে মাকে বললো মা আমার খাবারটা ওদের দাও, আমি আজ না খেলেও হবে। মা তার কথা শুনে খুব খুশি হলেন। নীলার পিঠে হাত রেখে বললেন- তুমি খুব ভালো মেয়ে, তোমার অনেক ভালো হবে।

আবার নীলা পিঠে সুড়সুড়ি অনুভব করলো। নীলা প্রায়ই দেখতো বাবা মায়ের মন খারাপ থাকে। তারা শুধু আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে আর তাদের চোখ দিয়ে পানি পড়ে। নীলা জিজ্ঞেস করলে তারা কিছুই বলেন না। একদিন নীলা বাবা মা দু’জনকে পাশে বসিয়ে বললো- তোমাদের কীসের কষ্ট আমায় বলো, আমি তোমাদের সব কষ্ট দূর করে দেবো। এই কথা শুনে বাবা মায়ের চোখে পানি চলে এলো। তারা নীলার পিঠে হাত রাখলেন আর কাঁদতে কাঁদতে বললেন -তুমি আনেক ভালো মেয়ে তোমার অনেক ভালো হোক।

সঙ্গে সঙ্গে অদ্ভুত একটা ঘটনা ঘটলো। নীলার পিঠ থেকে বেরিয়ে এল ঝকঝকে চকচকে মস্ত দুটি নীল ডানা। সাধারণ কাপড়ের বদলে হয়ে গেলো পরীর পোশাক। নীলা তার ভালো কাজের জন্য ডানা ফিরে পেলো। তাকে নিয়ে বাবা মা পরীর দেশে ফিরে এলেন। তাকে ফিরে পেয়ে পরী রাজ্যে সবার সে কী আনন্দ!
ইচ্ছেঘুড়ি

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৮ ঘণ্টা, আগস্ট ০৩, ২০১৭
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।