ঢাকা: রাজধানীর বিমানবন্দর থানায় নয় কেজি ২৭৪ গ্রাম স্বর্ণ চোরাচালানের ঘটনায় হওয়া মামলার কাগজপত্র জালিয়াতি করে জামিন নেওয়ায় আইনজীবী-ক্লার্কসহ চারজনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
সম্প্রতি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পুলিশ পরিদর্শক মো. নুরুজ্জামান ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ চার্জশিট দাখিল করেন।
চার্জশিটে চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অভিযুক্ত ওই চার আসামি হলেন- আইনজীবী সাইফুর রহমান ওরফে মাসুম মাতুব্বর, ক্লার্ক মো. সাইদুর রহমান ওরফে ছাবদুল শেখ, তদবিরকারক আব্দুল হেকিম ও সিরাজুল ইসলাম। আসামিদের মধ্যে সাইফুর রহমান ও সাইদুর রহমান কারাগারে আছেন। আব্দুল হেকিম ও সিরাজুল ইসলাম পলাতক। আদালত চার্জশিট গ্রহণ করে পলাতক দুই আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন। আগামী ২ মার্চ পরোয়ানা তামিলের বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দিন ধার্য রয়েছে।
মামলার নথি সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের ২৭ আগস্ট সুপ্রিম কোর্টের সহকারী রেজিস্টার (ফৌজদারি আপিল শাখা) মো. সিদ্দিকুর রহমান বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় জামিন জালিয়াতির অভিযোগে এ মামলা করেন। মামলার অভিযোগে বলা হয়, বিমানবন্দর থানায় নয় কেজি ২৭৪ গ্রাম স্বর্ণ চোরাচালানের অভিযোগে একটি মামলা হয়। এ মামলার একমাত্র আসামি সিরাজুল ইসলাম গ্রেফতার হয়ে দীর্ঘদিন কারাগারে ছিলেন। মামলার অভিযোগ পাল্টে দিয়ে স্বর্ণ চোরাচালানকে মুদ্রা পাচার আইনের মামলা বানিয়ে তার জামিন করানো হয়। আসামিপক্ষে আইনজীবী ছিলেন সাইফুর রহমান।
মামলার চার্জশিটে বলা হয়েছে, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে বিমানবন্দর থানার ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২৫-এর বি ধারায় অভিযুক্ত আসামি সিরাজুল ইসলামের জামিনের জন্য নয় কেজি ২৭৪ গ্রাম স্বর্ণ চোরাচালানের ঘটনা আড়াল করেন। এর পরিবর্তে ৩৫ হাজার ৩০০ ভারতীয় মুদ্রা এবং ৬৫ হাজার ৪০০ বাংলাদেশি টাকার মুদ্রা পাচারের জাল কাগজপত্র তৈরি করে প্রতারণামূলকভাবে আদালতে উপস্থাপন করেন। এরপর ২০১৮ সালের ১৭ জুলাই বিচারপতি মো. হাবিবুল গণি ও বিচারপতি মো. বদরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ তাদের জামিন দেন। জামিন পেয়ে সিরাজুল কারামুক্তও হন।
পরবর্তীতে এ মামলার পুনরায় শুনানিকালে বিষয়টি উচ্চ আদালতের নজরে আসলে আইনজীবীর কাছে আদালত বিষয়টি জানতে চাওয়া হয়। তখন আইনজীবী সাইফুর রহমান লিখিতভাবে আদালতকে জানান, তিনি সিরাজুল ইসলামের পক্ষে স্বর্ণ চোরাচালানের কোনো মামলা শুনানি করেননি। মুদ্রা পাচারের মামলার শুনানি করেছেন এবং আদালতই তাকে জামিন দিয়েছেন।
তবে আদালত ওই আইনজীবীকে তার হাতে থাকা মামলার কপি দেখাতে বললে তিনি তা দেখাতে পারেননি। তখন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী তাকে দেওয়া ফটোকপিটি দেখান। সেই ফাইল থেকে দেখা যায়, এফআইআর এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক কাগজপত্র জালিয়াতি করে বিমানবন্দর থানার স্বর্ণ চোরাচালান মামলার স্থলে আরেকটি এফআইআর এবং কাগজপত্র প্রতিস্থাপন করা হয়। এরপর সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃপক্ষ এ মামলা দায়ের করে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০২৩
কেআই/এসআইএ