ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আইন ও আদালত

ইবির হলে ছাত্রী নির্যাতন

অন্তরাসহ ৫ ছাত্রীকে সাময়িক বহিষ্কার ও প্রভোস্টকে প্রত্যাহারের নির্দেশ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৪৩ ঘণ্টা, মার্চ ১, ২০২৩
অন্তরাসহ ৫ ছাত্রীকে সাময়িক বহিষ্কার ও প্রভোস্টকে প্রত্যাহারের নির্দেশ

ঢাকা: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনায় তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী জড়িত ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি অন্তরাসহ পাঁচ ছাত্রীকে সাময়িক বহিষ্কারের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে ওই হলের প্রভোস্ট ড. শামসুল আলমকে অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে বলা হয়েছে।

বুধবার (০১ মার্চ) বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতির রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

এদিন বুধবার (০১ মার্চ) শুনানি শেষে দুটি তদন্ত প্রতিবেদন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে সিলগালা করে পাঠানোর আদেশ দিয়ে ওই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে জড়িত শিক্ষার্থী, অবহেলা করা হল প্রশাসনসহ অন্যদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও বিধি অনুসারে ব্যবস্থা নিতে কর্তৃপক্ষের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসা পর্যন্ত ছাত্রলীগ নেত্রী অন্তরাসহ ৫ ছাত্রীকে সব ধরণের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ ও ক্যাম্পাসের বাইরে রাখতে বলা হয়েছে।

বহিষ্কার হওয়া পাঁচ ছাত্রী হলেন- পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা, চারুকলা বিভাগ ২০২০-২০২১ সেশনের শিক্ষার্থী হালিমা আক্তার উর্মি, আইন বিভাগের ২০২০-২০২১ সেশনের ইসরাত জাহান মীম, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২০-২১ সেশনের তাবাসসুম ইসলাম ও মোয়াবিয়া জাহান।

এছাড়া ঘটনার সময় নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থী ফুলপরী খাতুনের ভিডিও করা চারুকলা বিভাগ ২০২০-২০২১ সেশনের শিক্ষার্থী হালিমা আক্তার উর্মির মোবাইল ফোন সংগ্রহ এবং ধারণ করা ভিডিও উদ্ধার করে আদালতে দাখিল করতে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

পাশাপাশি নির্ভয়ে স্বাভাবিক শিক্ষা জীবন চালিয়ে নিতে তিন দিনের মধ্যে আবাসিক হলে ফুলপরীর জন্য সিট বরাদ্দ দিতে বলা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় ও হল কর্তৃপক্ষকে।  

সেই সঙ্গে কুষ্টিয়ার এসপি ও পাবনার এসপিসহ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ফুলপরীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। ঘটনার সাক্ষীদেরও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।

এ আদেশের বিষয়ে ৮ মে’র মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আদেশের সময় আদালত রিটকারী আইনজীবীর উদ্দেশ্যে বলেন, আমরা বিষয়টি মনিটরিংয়ে রাখব। আপনিও এ বিষয়ে খেয়াল রাখবেন। কোনো সমস্যার উদ্ভব হলে আদালতকে জানাবেন। তখন আমরা প্রয়োজনীয় আদেশ দেব।

এসময় আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন রিটকারী আইনজীবী গাজী মো. মহসীন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক।

প্রসঙ্গত, গত ১১ ফেব্রুয়ারি দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে রাত সাড়ে ১১টা থেকে রাত প্রায় ৩টা পর্যন্ত শারীরিক নির্যাতন করা হয় নবীন ছাত্রী ফুলপরী খাতুনকে। ভুক্তভোগী ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।

অভিযোগ ওঠে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগীর অভিযোগ, তারা ওই শিক্ষার্থীকে মারধর করে তার বিবস্ত্র ভিডিও ধারণ করে রাখেন।

এ ঘটনায় ১৩ ফেব্রুয়ারি সকালে ভয়ে হল ছেড়ে বাসায় চলে যান ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী। র‌্যাগিংয়ের নামে শারীরিক ও মানসিকভাবে হেনস্তার বিচার ও নিরাপত্তা চেয়ে মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) হল প্রভোস্ট, প্রক্টর ও ছাত্র-উপদেষ্টা দপ্তর বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন তিনি।  

বিষয়টি নিয়ে হল প্রশাসন ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং শাখা ছাত্রলীগ পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করে।  

এর মধ্যে বিষয়টি নিয়ে হাইকোর্টে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী গাজী মো. মহসীন। হাইকোর্ট প্রশাসন ক্যাডার, বিচার বিভাগ ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের সমন্বয়ে একটি কমিটি করে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেন। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের গঠিত কমিটির প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। এ সময় দুই অভিযুক্তকে ক্যাম্পাসের বাইরে রাখতে বলা হয়।

সেই অনুসারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কমিটি এবং উচ্চ আদালতের নির্দেশে গঠিত কমিটির প্রতিবেদন হাইকোর্টে পাঠানো হয়।

প্রতিবেদন পাঠানোর পর ২৭ ফেব্রুয়ারি ওই পাঁচ শিক্ষার্থীর আবাসিকতা বাতিল করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটির প্রতিবেদন মতে, পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী সানজিদা চৌধুরী অন্তরার নির্দেশে পরিসংখ্যান বিভাগের ২০২১-২০২২ সেশনের শিক্ষার্থী ফুলপরীকে র‌্যাগিং ও শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়। এই অমানবিক, পাশবিক, শারীরিক, ন্যাক্কারজনক, জঘন্য ঘটনার সঙ্গে সরাসরি চারুকলা বিভাগ ২০২০-২০২১ সেশনের শিক্ষার্থী হালিমা আক্তার উর্মি, আইন বিভাগের ২০২০-২০২১ সেশনের ইসরাত জাহান মীম, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২০-২১ সেশনের তাবাসসুম ইসলাম এবং মোয়াবিয়া জড়িত ছিলেন।

এছাড়া আল আমিন নামে একজনের সঙ্গে অন্তরার মোবাইলে কথা হয়। সেই ফোন কলে আল আমিন হুমকি দিয়েছেন বলে প্রতিবেদনে বলা হয়।

এদিকে, উচ্চ আদালতের নির্দেশে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, অন্তরা নির্দেশ দেয় প্রত্যেকে যেন ফুলপরীকে একটা একটা চড় মারে। আর লিমা ফুলপরীর মোবাইল কেড়ে নেয় এবং সবাই অন্তরার পা ধরতে ফুলপরীকে বাধ্য করে।

এছাড়া প্রভোস্ট হলে থাকা অবস্থাতেই অন্তরা, তাবাসসুম, মীম, উর্মি, মোয়াবিয়াসহ অন্যরা ফুলপরীকে হাত ধরে টানাটানি করে হেনস্থা করে। এক পর্যায়ে প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. শামসুল আলম বরাবরে মুচলেকা দিতে বাধ্য করে।

প্রতিবেদনে এ ঘটনায় প্রভোস্ট ড. শামসুল আলম, সহকারী রেজিস্ট্রার আব্দুর রাজ্জাক, কর্মকর্তা হালিমা খাতুন, একজন আয়া, ডাইনিং ম্যানেজার সোহেল রানা, হাউজ টিউটর মৌমিতা আক্তার, ইসরাত জাহানদের দায়িত্বে চরম অবহেলা এবং ফুলপরী ইস্যুতে ব্যাপক গাফিলতি ছিল বলে উল্লেখ করা হয়। এছাড়া প্রক্টর শাহাদাত হোসেন আজাদের উদাসীনতার কথাও উল্লেখ করা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১১৪২ ঘণ্টা, মার্চ ০১, ২০২৩
ইএস/এমএইচএস/এনএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।