ঢাকা, বুধবার, ২১ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

আদিলুরের রায়ে সন্তুষ্ট নয় কোনো পক্ষ

বাংলানিউজ টিম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২৩
আদিলুরের রায়ে সন্তুষ্ট নয় কোনো পক্ষ রায় ঘোষণার পর কারাগারে নেওয়া হয় অধিকার সম্পাদক আদিলুর রহমান খানকে | ছবি: ডিএইচ বাদল

ঢাকা: এক দশক আগে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে সংঘর্ষে মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টির অভিযোগে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে দায়ের হওয়া মামলায় মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের সম্পাদক আদিলুর রহমান খানসহ দুজনকে দুই বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড ও অনাদায়ে আরও এক মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক এ এম জুলফিকার হায়াত এ রায় দেন। দণ্ডপ্রাপ্ত অপর আসামি হলেন অধিকারের পরিচালক এ এস এম নাসির উদ্দিন এলান।

আরও পড়ুন: অধিকার সম্পাদক আদিলুরের ২ বছরের কারাদণ্ড

তবে আদালতের এই রায়ে সন্তুষ্ট নন কোনো পক্ষই। রায় ঘোষণার পর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর নজরুল ইসলাম শামীম বলেন, এটি একটি ঐতিহাসিক রায়। বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনাল গঠিত হওয়ার পর এটি প্রথম মামলা। নানা প্রতিবন্ধকতায় আমরা মামলাটি দ্রুত শেষ করতে পারিনি। এই মামলায় ২৮ জন সাক্ষীর মধ্যে ২২ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য আমরা বিজ্ঞ আদালতে উপস্থাপন করেছি। আসামিপক্ষ জেরা করেছে। সব মিলিয়ে আমরা রাষ্ট্রপক্ষ অভিযোগ প্রমাণ করেছি।

তিনি আরও বলেন, বিজ্ঞ আদালত আসামিদের দুই বছরের কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা দিয়েছেন। আমরা রাষ্ট্রপক্ষ আশা করেছিলাম, আরও অধিকতর সাজা হবে, সাজার মেয়াদ আরও বৃদ্ধি হবে। আমরা পরবর্তীতে রায়ের পর্যালোচনা দেখে উচ্চ আদালতে যাব কি না, সেই সিদ্ধান্ত নেব।

আদালতের পর্যবেক্ষণ সম্পর্কে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, আসামিপক্ষ কখনো পলাতক হননি। তারা মামলার প্রতিটি বিচারকার্যে সহযোগিতা করেছেন। এজন্য আদালত আসামিকে সাজা কমিয়ে দিয়েছেন। এতে আমরা যথেষ্ট সন্তুষ্ট নই।

আসামিপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ রুহুল আমিন ভুঁইয়া বলেন, মামলা দায়ের করার সময় কোনো নথিপত্র দাখিল করতে পারেনি। পুনঃতদন্তের পর ২০২৩ সালের ৬ জুন তার (আদিলুর রহমান খান) ল্যাপটপ থেকে সংগৃহীত বলে কিছু নথিপত্র দাখিল করা হয়। অথচ যেই ল্যাপটপটি জব্দ করা হয়েছে, তা খোলা অবস্থায় ছিল। নিয়ম অনুযায়ী, জব্দকৃত আলামত সিলগালা করা অবস্থায় আতালতে দাখিল করার কথা। সেসব প্রমাণাদির ওপর ভিত্তি করে রায় দেওয়া হয়েছে। আমরা রায়ের কপি পাব, পর্যালোচনা করব, তারপর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আপিল করব।

রায় ঘোষণার সময় জামিনে থাকা দুই আসামি আদালতে হাজির হন। পরে সাজা পরোয়ানা দিয়ে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।

গত ২৪ আগস্ট রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়। ওইদিনই আদালত রায়ের জন্য ৭ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেন। তবে ওইদিন রায় প্রস্তুত না হওয়ায় রায়ের জন্য ১৪ সেপ্টেম্বর নতুন দিন ধার্য করা হয়।

মামলার বিবরণীতে জানা যায়, ২০১৩ সালে হেফাজতের শাপলা চত্বরে সমাবেশে ৬১ জনের মৃত্যু হয়েছে মর্মে প্রতিবেদন প্রকাশ করে মানবাধিকার সংগঠন অধিকার।  একই বছর ১০ আগস্ট গুলশান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন ডিবির উপ-পরিদর্শক আশরাফুল ইসলাম।

ওই বছরের ১০ জুলাই নিহতের তালিকা চেয়ে অধিকারকে চিঠি দেয় তথ্য মন্ত্রণালয়। কিন্তু সংগঠনটি তালিকা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। পরে ১০ আগস্ট গ্রেপ্তার হন অধিকার সম্পাদক আদিলুর রহমান খান। ওই বছরের ৯ অক্টোবর হাইকোর্ট থেকে জামিন পান তিনি।

তদন্ত শেষে ২০১৩ সালের ৪ সেপ্টেম্বর ৩২ জনকে সাক্ষী করে আদিলুর ও এলানের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়। ওই বছর ১১ সেপ্টেম্বর অভিযোগপত্র আমলে পলাতক আসামি এলানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। ২০১৪ সালের ৮ জানুয়ারি মামলাটিতে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচারকাজ শুরু হয়। অভিযোগ গঠন সংক্রান্ত আদেশের পর উচ্চ আদালতে মামলা বাতিল চাইলে উচ্চ আদালতের আদেশে বিচারকাজ স্থগিত হয়ে যায়।

হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের পর ২০২১ সালের ৫ সেপ্টেম্বর সেই মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। সাক্ষ্য শুরুর দুই বছরের ব্যবধানে বিচার শেষে মামলাটিতে রায়ের জন্য দিন ধার্য হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৪২৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২৩
এসসি/কেআই/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।