ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

২০ হাজার টাকার জন্য স'মিল মালিককে হত্যা, ৬ জনের যাবজ্জীবন 

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০২ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৫, ২০২৩
২০ হাজার টাকার জন্য স'মিল মালিককে হত্যা, ৬ জনের যাবজ্জীবন 

সিরাজগঞ্জ: সিরাজগঞ্জে মাত্র ২০ হাজার টাকার জন্য মনতোষ (৩২) নামে এক স'মিল মালিককে হত্যার দায়ে ৬ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।  

বুধবার (২৫ অক্টোবর) বিকেলে সিরাজগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক ফজলে খোদা মো. নাজির এ আদেশ দেন।

 

একই সঙ্গে প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বছর বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং পেনাল কোডের ৩৮৫ ধারায় ১৪ বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ৬ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।  

এ ছাড়াও এক আসামিকে পেনাল কোডের ৩৭৯ ধারায় ৩ বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও ৫,০০০/- টাকা জরিমানা অনাদায়ে ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়।

দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন-বেলকুচি উপজেলার খাস সোনামুখী মধ্যপাড়া গ্রামের আনন্দ কুমারের ছেলে শ্রী সুজন কুমার সরকার, বিশ্বাসবাড়ী গ্রামের আবু তালেবের ছেলে মো. রুবেল, কামারখন্দ উপজেলার বলরামপুর পূর্বপাড়া গ্রামের গিয়াস উদ্দিনের ছেলে মো. শিপন একই গ্রামের শুকুর আলীর ছেলে মো. ইউসুফ আলী, আব্দুল জলিল মণ্ডলের ছেলে লিটন মন্ডণ্ড এবং বেলকুচি উপজেলার সড়াতৈল গ্রামের মোখদম সরকারের ছেলে রায়হান সরদার।

ওই আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাড. আব্দুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

ঘটনার বিবরণে প্রকাশ, আসামি রায়হান ও শিপন ভিকটিম মনোতোষের বাবার স’মিলে কাজ করতেন। মনোতোষের বাবার কাছ থেকে ২০/২২ হাজার টাকা ঋণ নেন রায়হান। মনোতোষের বাবার স’মিল বন্ধ হয়ে গেলে তারা অন্য জায়গায় কাজ করেন। মনোতোষের বাবা পাওনা টাকার জন্য রায়হানকে চাপ দিলে ও বকাঝকা করলে রায়হান ক্ষুব্ধ হয়ে প্রতিশোধ নেওয়ার পরিকল্পনা করেন। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে রায়হান সরদার, রুবেল, শিপন, ইউসুফ আলী ও লিটন মণ্ডলের সঙ্গে পরামর্শ করেন।

পরিকল্পনা মোতাবেক গত ২০১৭ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর রায়হান শিপনের বাড়িতে পিকনিকের আয়োজন করে ভিকটিম মনোতোষকে দাওয়াত করেন। ভিকটিম মনোতোষ আসামি সুজনকে সঙ্গে নিয়ে ওই দিন রাত ৮টার দিকে শিপনের বাড়িতে পিকনিকের দাওয়াত খেতে আসেন। খাওয়ার পর পরিকল্পনা মোতাবেক তারা মনোতোষকে বেঁধে রেখে তার বাবার কাছে পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। আসামিরা মদ, গাঁজাসহ ভিকটিম মনোতোষকে রাত ৯টার পর শিপনের বাড়ি থেকে ৩০০ গজ দূরে বিশ্বাসবাড়ী হুরা সাগর নদীর উত্তরে ইউক্যালিপটাস বাগানে নিয়ে যান। সেখানে তারা মদ ও গাঁজা খায় এবং মনোতোষকে পরিকল্পিতভাবে মদের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে বেশি পরিমাণ মদ খাওয়ায়। মনোতোষ নিস্তেজ হয়ে গেলে সুজন কুমার সরকার, রুবেল, রায়হান সরদার, শিপন, ইউসুফ আলী ও লিটন মণ্ডল ভিকটিমকে শ্বাসরোধে হত্যা করেন। হত্যার পর তারা মনোতোষের আত্মীয়-স্বজনের কাছে পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। পরদিন ভোরে মনোতোষের মরদেহ পার্শ্ববর্তী ধুইঞ্চা ক্ষেতে কচুরিপানা দিয়ে ঢেকে রাখেন এবং মনোতোষের মোবাইল ফোন ও মোটরসাইকেল নিয়ে যান। এ ঘটনায় মনোতোষের চাচাতো ভাই শ্রী অচিন্ত কুমার সরকার বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন।

রাষ্ট্রপক্ষ অভিযোগ প্রমাণের জন্য মোট ১৭ জন সাক্ষীকে পরীক্ষা করেন। সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় জেলা ও দায়রা জজ আসামি মো. রুবেল, মো. রায়হান সরদার, মো. শিপন, মো. ইউসুফ আলী ও মো. লিটন মণ্ডলের উপস্থিতিতে রায় ঘোষণা করেন। আসামি শ্রী সুজন কুমার সরকার পলাতক রয়েছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৫, ২০২৩
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।