ঢাকা: সশরীরে হাজির হয়ে আদালত অবমাননার অভিযোগের ব্যাখ্যা দিতে বিএনপিপন্থি সাত আইনজীবীকে তলব করেছেন আপিল বিভাগ। তাদের বিরুদ্ধে বুধবার (১৫ নভেম্বর) এ আদেশ দেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ।
আগামী ১৫ জানুয়ারি এ বিষয়ে শুনানির জন্য দিন রাখা হয়েছে। ওইদিন সাত আইনজীবীকে হাজির হতে হবে।
সাত আইনজীবী হলেন- জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী, ফোরামের মহাসচিব ও বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট ফাহিমা নাসরিন মুন্নি, জাতীয়তবাদী আইনজীবী ফোরাম সুপ্রিম কোর্ট শাখার সভাপতি অ্যাডভোকেট আব্দুল জব্বার ভূঁইয়া ও সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সহ-সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান খান এবং জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সুপ্রিম কোর্ট শাখার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট গাজী কামরুল ইসলাম সজল।
আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী নাহিদ সুলতানা যুথী।
শোক দিবসের অনুষ্ঠানে ‘আমরা বাংলাদেশের বিচারপতিরা আমরা হলাম শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদ’- আপিল বিভাগের এক বিচারপতির এমন বক্তব্যকে কেন্দ্র করে মিছিল-স্লোগান-সভা অব্যাহত রাখায় বিএনপিপন্থি কয়েকজন আইনজীবীর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার আবেদন করা হয়।
পরে ২৯ আগস্ট আপিল বিভাগে আদালত অবমাননার আবেদন করেন আইনজীবী মোহাম্মদ নাজমুল হুদা।
বিবাদী করা হয়েছে আইনজীবী কায়সার কামালসহ সাতজনকে।
ওইদিন ব্রিফিংয়ে আইনজীবী নাহিদ সুলতানা যুথি বলেছিলেন, আমরা তো কোর্ট অফিসার। কোর্টের ভাবমূর্তি রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব। কিছুদিন ধরে দেখা যাচ্ছে কতিপয় আইনজীবীরা বিচারপতিদের নাম ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের শব্দ বলছেন। যা আদালত অবমাননার শামিল।
আবেদনটি ৩০ আগস্ট কার্যতালিকায় উঠলে ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত শুনানির জন্য দিন ঠিক করেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ।
একইসঙ্গে সুপ্রিম কোর্টে সমাবেশ ও মিছিল না করার বিষয়ে উচ্চ আদালতের আগের দেওয়া রায় অনুসরণ করতে আইনজীবীদের নির্দেশ দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ।
১৯ অক্টোবর আবেদনটি শুনানির জন্য ১৫ নভেম্বর দিন ঠিক করেন। সে অনুযায়ী আজ কার্যতালিকায় মামলাটি শুনানির জন্য ওঠে।
গত ১৭ আগস্ট সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির দক্ষিণ হলে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বিএনপির আইন সম্পাদক ও ফোরামের মহাসচিব ব্যারিস্টার কায়সার কামাল।
লিখিত বক্তব্যে ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, ‘গত ১৫ আগস্ট বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আয়োজিত এক শোক সভায় প্রধান বিচারপতি ও আপিল বিভাগ এবং হাইকোর্ট বিভাগের কয়েকজন বিচারপতির বক্তব্য বিভিন্ন টিভি চ্যানেল এবং ১৬ আগস্ট জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। এ বিষয়ে আজ আমাদের সংবাদ সম্মেলন।
তিনি বলেন, আলোচনা সভায় বিচারপতি এম এনায়েতুর রহিম ‘শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদ হিসেবে বিচারপতিদের চিহ্নিত করেছেন। তিনি স্পষ্টতই দেশের চলমান রাজনৈতিক বিষয়ে শাসক দলের নেতাদের মতো রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়ে বলেছেন, ইদানিং সুষ্ঠু নির্বাচন, বিদেশি প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত এসব নিয়ে তোলপাড় হয়ে যাচ্ছে, শুধু ভোট দেওয়াই একমাত্র গণতন্ত্র নয়। ’
বিচারপতি আবু জাফর সিদ্দিকী নির্বাচনের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের যে মৌলিক অধিকার জনগণের রয়েছে তার বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে বলেছেন সারা পৃথিবীতে নির্বাচন হয় কেউ তাকিয়েও দেখে না, নির্বাচন ঘিরে সব নজর বাংলাদেশের দিকে কেন।
কায়সার কামাল বলেন, বিচারকদের এহেন বক্তব্য কতটুকু বিচারক সুলভ বা রাজনৈতিক মতাদর্শের পরিচায়ক তা সহজেই অনুমেয়। তারা বিচারপতির মহত্ত্ব ধারণ করতে পারেন কি না তা জনমনে অনেক সংশয় ও প্রশ্ন তৈরি হচ্ছে।
এরপর বিভিন্ন সময়ে এনিয়ে বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা মিছিল-সভা-স্লোগান দিয়ে আসছেন। এমন প্রেক্ষাপটে তাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার আবেদন করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৫, ২০২৩
ইএস/আরআইএস