লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুরে যুবলীগ নেতা আবদুল্লাহ আল-নোমান ও ছাত্রলীগ নেতা রাকিব ইমাম হত্যা মামলার আসামি দেওয়ান ফয়সাল উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন। কারাগার থেকে বেরিয়ে তিনি এলাকায় মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা করেন।
মোটরসাইকেল মহড়া এবং ফুলেল শোভাযাত্রার ভিডিও ফুটেজ ও ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভেসে বেড়াচ্ছে। এনিয়ে উদ্বিগ্ন নিহতদের পরিবারের সদস্যরা। নিজেদের জন্য হুমকি হিসেবে দেখছেন তারা।
জানা গেছে, গত সোমবার (৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় আসামি দেওয়ান ফয়সাল লক্ষ্মীপুর কারাগার থেকে মুক্তি পান। সেখান থেকে বেরিয়ে মাইক্রোবাসে চড়ে অর্ধশতাধিক মোটরসাইকেলের শোভাযাত্রায় রামগঞ্জ শহরে যান তিনি। পরে শহরটির কয়েকটি সড়ক প্রদক্ষিণ করে উপজেলার বালুয়া চৌমুহনী এলাকায় জড়ো হন তারা। সেখানে তাকে মালা পরিয়ে ও ফুল ছিটিয়ে বরণ করে নেয় তার সমর্থকরা। এ সময় তার পক্ষে মিষ্টি বিতরণ করা হয়।
সেখানে উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন দেওয়ান বাচ্চু এবং বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড (বিআরডিবি) রামগঞ্জ উপজেলার চেয়ারম্যান ও উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সুমন ভূঁইয়া গলায় ফুলের মালা পরিয়ে ফয়সালকে বরণ করেন।
এ বিষয়ে দেলোয়ার হোসেন বলেন, হত্যার ঘটনার সঙ্গে আমার ভাই দেওয়ান ফয়সাল জড়িত না। পরিস্থিতির শিকার মাত্র। দীর্ঘদিন কারাগারে থাকার কারণে আত্মীয়-স্বজন নিজ উদ্যোগে মোটরসাইকেল নিয়ে এসেছেন।
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার বশিকপুর ইউনিয়নের পোদ্দার বাজার এলাকায় গত ২৫ এপ্রিল রাতে যুবলীগ নেতা আবদুল্লাহ আল-নোমান ও ছাত্রলীগ নেতা রাকিব ইমামকে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ঘটনার পরদিন রাতে নোমানের বড় ভাই ইউপি চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান বাদী হয়ে ৩৩ জনের বিরুদ্ধে চন্দ্রগঞ্জ থানায় মামলা করেন। এতে চন্দ্রগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও বশিকপুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কাশেম জিহাদিকে প্রধান করে ১৮ জনের নাম উল্লেখ এবং ১৫ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়। জেহাদিকে দল থেকে বহিষ্কার করে জেলা আওয়ামী লীগ।
এ মামলার ৩ নম্বর আসামি হলেন দেওয়ান ফয়সাল। গত ০১ মে ঠাকুরগাঁও থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-১১ এর সদস্যরা। হত্যা মামলায় দেওয়ান ফয়সাল চন্দ্রগঞ্জ জ্যেষ্ঠ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক আনোয়ারুল কবীরের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। সাতমাস পর জামিন পান ফয়সাল।
দেওয়ান ফয়সাল রামগঞ্জ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। হত্যাকাণ্ডের পর তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।
নিহত নোমানের স্বজনেরা জানান, প্রতিদিন তারা আশায় থাকেন, প্রধান আসামি ধরা পড়বেন। কিন্তু আট মাস পেরিয়ে গেলেও কাশেম জিহাদিকে খুঁজে পায়নি পুলিশ। অথচ জিহাদি হোয়াটসঅ্যাপে ভয়েস রেকর্ড ও কল করে অনবরত হুমকি দিচ্ছেন তাদের। চাঁদাও চাইছেন। যারা গ্রেপ্তার হয়েছেন, তারাও জামিন পেয়ে যাচ্ছেন। সব মিলিয়ে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন তারা।
রাকিবের ভাই সাইফুল ইসলাম বলেন, হত্যার নির্দেশদাতা ও পরিকল্পনাকারী কাশেম জিহাদি গ্রেপ্তার হয়নি। আমার ভাইদের হত্যা করে তিনি মুক্ত জীবনে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। হত্যায় জড়িত যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তারাও জামিনে বের হয়ে যাচ্ছেন। তাদের ফুলের মালা পরিয়ে বরণ করা হচ্ছে। আর আমরা এসব অসহায়ের মতো দেখছি।
চরম নিরাপত্তাহীনতায় থাকার কথা জানিয়ে মামলার বাদী বশিকপুর ইউপি চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ঘটনার আট মাসেও হত্যাকাণ্ডের প্রধান আসামি কাশেম জেহাদি গ্রেপ্তারতো হয়নি, উল্টো অন্য আসামিরা একের পর এক জামিনে বেরিয়ে আসছেন। ঘটনার পর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যেভাবে তৎপর ছিল, এখন তা একদমই নেই। অগ্রগতি না থাকায় গত ১০ জুন আমি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিবর্তনের আবেদন করি। পরে নতুন কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়।
তিনি বলেন, মামলার আসামি কদু আলমগীর, মোটা বাবলু, সজীব দেওয়ান, রুবেল দেওয়ান, সজীব পাটওয়ারী, রুবেল পাটওয়ারী, সর্বশেষ দেওয়ান ফয়সাল জামিনে মুক্ত হয়েছেন। বেশিরভাগ আসামি বাইরে এসে আবারও সংঘবদ্ধ হচ্ছে। ফয়সাল মাল বেরিয়ে লোকবল নিয়ে ‘শক্তির মহড়া’ দিয়েছে। এটা অশুভ লক্ষণ। এসব করে তারা ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। এতে আমরা এখন চরম আতঙ্কে আছি। এসব সন্ত্রাসীরা যেকোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটাতে পারে।
২০২১ সালের ২৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত বশিকপুর ইউপি নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে পরাজিত হন আবুল কাশেম জেহাদি। ওই নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জয়ী হন যুবলীগ নেতা আবদুল্লাহ আল-নোমানের বড় ভাই মাহফুজুর রহমান। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জেহাদির সঙ্গে নোমানের বিরোধ সৃষ্টি হয়। এর জেরে খুন হন নোমান ও তার সঙ্গে থাকা ছাত্রলীগ নেতা রাকিব ইমাম।
** নোমান-রাকিব হত্যার দায় স্বীকার করলেন স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৫, ২০২৩
এসআরএস