ঢাকা, শুক্রবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

‘মা, আমি মিছিলে যাচ্ছি’— চিঠি লিখে আর ফেরেনি আনাস

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ২, ২০২৪
‘মা, আমি মিছিলে যাচ্ছি’— চিঠি লিখে আর ফেরেনি আনাস

ঢাকা: ‘আমি যদি বেঁচে না ফিরি, তবে গর্বিত হইয়ো। জীবনে প্রতিটি ভুলের জন্য ক্ষমা চাই।

’ মা-বাবাকে লেখা চিঠিতে এমন আবেগঘন বার্তা দিয়েই ছাত্র আন্দোলনে নেমেছিল কিশোর আনাস।

গত ৫ আগস্ট গেন্ডারিয়ার বাসা থেকে গোপনে বেরিয়ে চানখারপুলে আন্দোলনে অংশ নেয় দশম শ্রেণির এ শিক্ষার্থী। সেখানে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায় সে। সেদিনই সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতন ঘটে। তিনি পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেন।  

চিঠিতে আনাস লেখে, ‘মা, আমি মিছিলে যাচ্ছি। আমি নিজেকে আর আটকিয়ে রাখতে পারলাম না। স্যরি আব্বুজান। তোমার কথা অমান্য করে বের হলাম। স্বার্থপরের মতো ঘরে বসে থাকতে পারলাম না। আমাদের ভাইয়েরা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য কাফনের কাপড় মাথায় বেঁধে রাজপথে নেমে সংগ্রাম করে যাচ্ছে। অকাতরে নিজেদের বিসর্জন দিচ্ছে। ‘  

‘প্রতিবন্ধী কিশোর, ৭ বছরের বাচ্চা, ল্যাংড়া মানুষ যদি সংগ্রামে নামতে পারে, তাহলে আমি কেন বসে থাকব ঘরে। একদিন তো মরতে হবেই। তাই মৃত্যুর ভয় করে স্বার্থপরের মতো ঘরে বসে না থেকে সংগ্রামে নেমে গুলি খেয়ে বীরের মতো মৃত্যু অধিক শ্রেষ্ঠ। যে অন্যের জন্য জীবনকে বিলিয়ে দেয়, সে-ই প্রকৃত মানুষ।  আমি যদি বেঁচে না ফিরি, তবে কষ্ট না পেয়ে গর্বিত হইয়ো। জীবনের প্রতিটি ভুলের জন্য ক্ষমা চাই। ‘ চিঠির নিচে কিশোর আনাস নিজের নাম লিখে যায়।

গত ৫ আগস্ট রাজধানীর চানখারপুলে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের গুলিতে দশম শ্রেণির ছাত্র আনাস হত্যার ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ২৫ জনের নামে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ করা হয়েছে। বুধবার চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বরাবর এ অভিযোগ দাখিল করেন নিহতের বাবা পলাশ।

অভিযোগ নিয়ে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, ৫ আগস্ট গেন্ডারিয়ার বাসা থেকে গোপনে বেরিয়ে চানখারপুলে আন্দোলনে যোগ দেয় দশম শ্রেণির ছাত্র আনাস। সেখানে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায় সে। আমরা কিছু ভিডিও পেয়েছি, কীভাবে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন সেখানে অলি-গলিতে ঢুকে গুলি করেছিল।  

তিনি বলেন, আনাস বাসা থেকে গোপনে বের হওয়ার সময় তার স্কুলের খাতায় বাবা-মায়ের উদ্দেশে একটি চিঠি লিখে আসে। তার হত্যার ঘটনায় বাবা পলাশ প্রধানমন্ত্রীসহ ২৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল করেছেন।

৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সারা দেশে গণহত্যা চালানোর অভিযোগে ভারতে অবস্থান করা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে এ নিয়ে মোট ৩১টি পৃথক অভিযোগ দায়ের করা হলো। এর মধ্যে ১৩টি চিফ প্রসিকিউটর বরাবর জমা দেওয়া হয়েছে। বাকিগুলো তদন্ত সংস্থায় দাখিল করা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৫২০ ঘণ্টা, অক্টোবর ০২, ২০২৪
ইএস/আরএইচ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।