ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আইন ও আদালত

প্রাণভিক্ষা চাইলেন ‘মুফতি’ হান্নান, চাইছেন বিপুলও

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২১ ঘণ্টা, মার্চ ২৭, ২০১৭
প্রাণভিক্ষা চাইলেন ‘মুফতি’ হান্নান, চাইছেন বিপুলও রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইলেন মুফতি হান্নানও

গাজীপুর: রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করেছেন সাবেক ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত  প্রধান আসামি জঙ্গিনেতা ‘মুফতি’ আবদুল হান্নান।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অপর জঙ্গি শরীফ শাহেদুল আলম বিপুলের প্রাণভিক্ষার আবেদনও তৈরি হচ্ছে বলে জানিয়েছে গাজীপুরের কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষ।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত তিনজনের মধ্যে ‘মুফতি’ হান্নান ও বিপুলকে এ কারাগারের কনডেম সেলে রাখা হয়েছে।

তাদের মধ্যে ‘মুফতি’ হান্নানের প্রাণভিক্ষার আবেদন সোমবার (২৭ মার্চ) সন্ধ্যায় হাতে এসেছে বলে জানিয়েছেন কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মিজানুর রহমান। বিপুলের আবেদন তৈরি হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

জেল সুপার জানান, সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে ‘মুফতি’ আব্দুল হান্নান লিখিতভাবে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চেয়েছেন। তবে শরীফ শাহেদুল আলম বিপুল এখন পর্যন্ত প্রাণভিক্ষা চাননি। তবে তিনিও সন্ধ্যার মধ্যে লিখিতভাবে প্রাণভিক্ষা চাইবেন।

সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয়েছে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অপর জঙ্গি দেলোয়ার হোসেন রিপনকে। সোমবারই তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করার পর সেটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি বরাবরে পাঠানো হয়েছে বলে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার ছগির মিয়া।

গত ২২ মার্চ  রিভিউ খারিজ করে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের চূড়ান্ত রায় পড়ে শোনানো হয় ‘মুফতি’ হান্নান ও বিপুলকে।

কারা কর্তৃপক্ষ জানতে চাইলে তারা রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইবেন বলে জানান। একইদিন সন্ধ্যায় তাদের দু’জনের মৃত্যু পরোয়ানা কারাগারে এসে পৌছালে সেটিও পড়ে শোনানো হয়।

অন্যদিকে একইদিন রিভিউ খারিজের রায় পড়ে শোনানো হয় রিপনকেও। ওইদিন রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইবেন কি-না জানতে চাওয়া হলে আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানান তিনি। পরদিন ২৩ মার্চ আইনজীবীর মাধ্যমেই প্রাণভিক্ষার আবেদন জানাবেন বলে জানান রিপন। তিনিও শুনেছেন নিজের মৃত্যু পরোয়ানা।

এজন্য তিনজনেরই হাতে কাগজ-কলম তুলে দেন কারা কর্তৃপক্ষ।

সিলেটের জেল সুপার ছগির মিয়া বলেন, রাষ্ট্রপতি প্রাণভিক্ষার আবেদন প্রত্যাখ্যান করলে ৩ জঙ্গির ফাঁসি কার্যকরে আর কোনো বাধা থাকবে না। সরকারের সিদ্ধান্তে যেকোনো সময় তাদের ফাঁসি কার্যকর করতে পারবে কারা কর্তৃপক্ষ।

২০০৪ সালের ২১ মে সিলেটের হযরত শাহজালালের (র.) মাজারে তৎকালীন ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলা হয়। হামলায় আনোয়ার চৌধুরী, সিলেটের জেলা প্রশাসকসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত এবং নিহত হন দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ তিনজন।

মামলার বিচার শেষে ২০০৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর বিচারিক আদালত ৫ আসামির মধ্যে ‘মুফতি’ হান্নান, বিপুল ও রিপনকে মৃত্যুদণ্ড এবং মহিবুল্লাহ ও আবু জান্দালকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন।

২০০৯ সালে আসামিরা জেল আপিল করেন।

গত বছরের ০৬ জানুয়ারি এ মামলায় হাইকোর্টে শুনানি শুরু হয়ে ০৩ ফেব্রুয়ারি শেষ হয়। বিচারিক আদালতের দণ্ড বহাল রেখে ১১ ফেব্রুয়ারি রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। গত বছরের ২৮ এপ্রিল হাইকোর্টের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয়।

১৪ জুন রায় হাতে পাওয়ার পর ১৪ জুলাই আপিল করেন দুই আসামি ‘মুফতি’ হান্নান ও বিপুল। অপর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি রিপন আপিল না করলেও আপিল বিভাগ তার জন্য রাষ্ট্রীয় খরচে আইনজীবী নিয়োগ করেন।

শুনানি শেষে গত বছরের ০৭ ডিসেম্বর আসামিদের আপিল খারিজ করে চূড়ান্ত রায় দেন সর্বোচ্চ আদালত।

গত ১৭ জানুয়ারি এ রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশের পর আসামিরা পুনর্বিবেচনা চেয়ে রিভিউ আবেদন জানান।

গত ১৯ মার্চ দেওয়া রিভিউ খারিজের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি ২১ মার্চ প্রকাশিত হয়। পরদিন মৃত্যু পরোয়ানায় স্বাক্ষর করে কারাগারে পাঠান বিচারিক আদালত সিলেট দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল।

বাংলাদেশ সময়: ১৮১৫ ঘণ্টা, মার্চ ২৭, ২০১৭
আরএস/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।