ঢাকা, বুধবার, ১০ পৌষ ১৪৩১, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আইন ও আদালত

৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ পেয়েছে সেই শানু মিয়ার পরিবার

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২৮ ঘণ্টা, মে ২১, ২০১৭
৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ পেয়েছে সেই শানু মিয়ার পরিবার

ঢাকা: রাজধানীর পল্টনে কালভার্ট রোডে ওয়াসার খোলা ম্যানহোলে পড়ে নিহত শানু মিয়ার পরিবারকে ২৫ লাখ করে মোট ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ পরিশোধ করেছে ঢাকা ওয়াসা ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি)।

ঢাকা ওয়াসা সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ নির্ধারিত ক্ষতিপূরণ পরিশোধের বিষয়টি লিখিতভাবে নিশ্চিত করার পর রোববার (২১ মে) এ বিষয়ে জারি করা রুলের নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহ’র হাইকোর্ট বেঞ্চ। এর আগে গত ১৪ মে ডিএসসিসিও লিখিতভাবে জানিয়েছিল, তারা পরিবারটিকে ০৭ মে ক্ষতিপূরণ পরিশোধ করে দিয়েছে।

আর ঢাকা ওয়াসা ক্ষতিপূরণ পরিশোধ করেছে ১৭ মে।

গত ১৯ মার্চ ম্যানহোলে মারা যাওয়ার ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার দায়ে প্রকৌশলীসহ ওয়াসা-ডিএসসিসি’র ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের ও পল্টন থানার দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আদেশ দেন হাইকোর্ট।

এরপর এ আদেশের বিরুদ্ধে ওই ব্যক্তিরা আপিল করলে গত ৩০ মার্চ নিহতের পরিবারকে ২৫ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে দুই সংস্থাকে আদেশ দেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে আপিল বেঞ্চ।

গত ১৪ মে  ডিএসসিসি’র আইন কর্মকর্তা ব্যারিস্টার মোহাম্মদ ইসমাইল হোসেন ও রোববার ওয়াসার আইনজীবী রিমি নাহরিন লিখিতভাবে হাইকোর্টকে জানান, আপিল বিভাগের নির্দেশনা অনুসারে ক্ষতিপূরণের অর্ধেক করে (২৫ লাখ টাকা)  শানু মিয়ার এক ছেলে, এক মেয়ে ও স্ত্রীকে আনুপাতিক হারে আলাদা আলাদা ব্যাংকের চেকের মাধ্যমে টাকা পরিশোধ করেছে সংস্থা দু’টি। এতে ছেলে মো. উজ্জ্বল হোসাইন পেয়েছেন ১৪ লাখ ৫৮ হাজার ৩৩৩ টাকা করে ২৯ লাখ ১৬ হাজার ৬৬৬ টাকা, মেয়ে শারমিন আক্তার মিলি পেয়েছেন সাত লাখ ২৯ হাজার ১৬৭ টাকা করে ১৪ লাখ ৫৮ হাজার ৩৩৪ টাকা এবং স্ত্রী জ্যোৎস্না বেগম পেয়েছেন তিন লাখ ১২ হাজার ৫০০ টাকা করে ৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা।

১৯ মার্চ ওয়াসার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আতিকুর রহমান ছাড়াও উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী সাঈদ শাহরিয়ার হোসেন ও উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. জসিম, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কার্য সহকারী মো. রুস্তম আলী, উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. মেজবাহ উদ্দিন রাসেল ও সহকারী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মের্সাস রুবি এন্টারপ্রাইজের মোহাম্মদ হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা করতে বলেছিলেন হাইকোর্ট।

ওই ঘটনায় ইতিপূর্বে দায়ের করা প্রাথমিক তথ্য বিবরণীতে ভুল তথ্য সংযোজন করায় পল্টন থানার এসআই মুহিবুর রহমান সুজন ও ইন্সপেক্টর রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণেও ডিএমপি কমিশনারকে নির্দেশ দিয়েছিলেন।

এছাড়া নিহতের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ প্রদানের বিষয়ে কি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা আদালতকে অবহিত করতে বলা হয়েছিল।

ওই দিন সকালে হাইকোর্টের তলবে হাজির হন ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও)। শুনানি শেষে পল্টন এলাকার ওয়াসা ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও প্রকৌশলীর তালিকা চান হাইকোর্ট। পরে দুই সংস্থা তালিকা দিলে মামলা দায়েরের নির্দেশ দেন।

ওয়াসার এমডি ও সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতিও দেন আদালত।

ঢাকা ওয়াসার এমডি প্রকৌশলী তাসকিম এ খানের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ ও মাহবুব শফিক। ডিএসসিসি’র সিইও খান মো. বেলালের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী এ বি এম আলতাফ হোসেন।

গত ০৭ মার্চের স্বতপ্রণোদিত আদেশে ১৯ মার্চ দু’জনকে হাজির হয়ে এ ঘটনার বিষয়ে তাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে বলেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি রুলও জারি করেন।

রুলে ম্যানহোলে পড়ে ওই ব্যক্তির মৃত্যুর ঘটনায় বিবাদীদের দায়িত্বে অবহেলায় কেন তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না এবং মৃত ব্যক্তির পরিবারকে কেন ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হবে না- তা জানতে চেয়েছিলেন হাইকোর্ট।

স্থানীয় সরকার সচিব, ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার, ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, ড্রেনেজ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা ও পল্টন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছিল।

আদেশের আগে আদালত বলেন, ‘পল্টনে খোলা ম্যানহোলে পড়ে এক ব্যক্তির মৃত্যু’ শিরোনামে প্রতিবেদন আমাদের নজরে এসেছে। যাতে বলা হয়েছে, পল্টনের কালভার্ট রোডে ঢাকা ওয়াসার খোলা ম্যানহোলে পড়ে এক ব্যক্তি মারা গেছেন। তার নাম-পরিচয় জানা যায়নি। বয়স আনুমানিক ৪৫ বছর। ০৬ মার্চ সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে এ ঘটনা ঘটে’।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কয়েকদিন ধরে কালভার্ট রোডের পল্টন টাওয়ারের সামনে ম্যানহোলের প্রায় ৪০ বর্গফুট আয়তনের ঢাকনাটি খোলা ছিল। কিন্তু এখানে কোনো সতর্কবার্তা বা চারপাশে সংকেত ছিল না। সড়ক ধরে হেঁটে যাওয়ার সময় খোলা ম্যানহোলে পড়ে যান তিনি। এ সময় আশপাশের লোকজন তাকে উদ্ধারের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। রাত ৭টা ২০ মিনিটে তাকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করেন ফায়ার সার্ভিসের সদর দফতরের কর্মীরা। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।

খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও ঢাকা ওয়াসার পরিচালক হাসিবুর রহমান।

বাংলাদেশ সময়: ২১২৫ ঘণ্টা, মে ২১, ২০১৭
ইএস/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।