ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আইন ও আদালত

‘প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে ১১ অভিযোগ’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৪৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৪, ২০১৭
‘প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে ১১ অভিযোগ’ সুপ্রিম কোর্ট

ঢাকা: ছুটিতে থাকা প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার প্রাক্কালে দেওয়া লিখিত বিবৃতি প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্ট বলেছেন, ‘বিবৃতিটি বিভ্রান্তিমূলক’।

 

 

সুপ্রিম কোর্টের বক্তব্যে বলা হয়েছে, ‘রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার বিরুদ্ধে ১১টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ সম্বলিত দালিলিক তথ্যাদি আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতির কাছে হস্তান্তর করেছেন। এর মধ্যে বিদেশে অর্থপাচার, আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতি, নৈতিক স্খলনসহ আরও সুনির্দিষ্ট গুরুতর অভিযোগ রয়েছে’।

শনিবার (১৪ অক্টোবর) দুপুরে এ বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্ট। রেজিস্ট্রার জেনারেল সৈয়দ আমিনুল ইসলাম স্বাক্ষরিত বক্তব্যটি সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে।

শুক্রবার (১৩ অক্টোবর) রাত ১১টা ৫৫ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের এসকিউ-৪৪৭ ফ্লাইটে অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হন বিচারপতি সিনহা। রাত ০৯টা ৫৫ মিনিটে বাসা থেকে বের হওয়ার আগে তিনি সাংবাদিকদের কাছে লিখিত বিবৃতিটি দিয়ে যান।
 
দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির সুপ্রিম কোর্টের প্রশাসনে পরিবর্তন আনা প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রীর বক্তব্যে দ্বিমত প্রকাশ করে ওই বিবৃতিতে তিনি বলেছিলেন, ‘এ ধরনের রেওয়াজ নেই’।  

সুপ্রিম কোর্টের বক্তব্যে বলা হয়েছে, ‘ছুটি ভোগরত প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা গত ১৩ অক্টোবর বিদেশ যাওয়ার প্রাক্কালে একটি লিখিত বিবৃতি উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে হস্তান্তর করেন, যা সুপ্রিম কোর্টের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। বিবৃতিটি বিভ্রান্তিমূলক’।

বিচারপতি সিনহা তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘প্রধান বিচারপতির কার্যভার পালনরত প্রবীণতম বিচারপতির উদ্ধৃতি দিয়ে আইনমন্ত্রী প্রকাশ করেছেন যে, দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি অচিরেই সুপ্রিম কোর্টের প্রশাসনে পরিবর্তন আনবেন। প্রধান বিচারপতির প্রশাসনে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি কিংবা সরকারের হস্তক্ষেপ করার কোনো রেওয়াজ নেই। তিনি তার রুটিনমাফিক দৈনন্দিন কাজ করবেন। এটিই হয়ে আসছে’।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্টের বক্তব্য নিম্নরুপ‍ বলে সর্বোচ্চ আদালত বলেন, ‘গত ৩০ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা ছাড়া আপিল বিভাগের অন্য ৫ জন বিচারপতিকে বঙ্গভবনে আমন্ত্রণ জানান। বিচারপতি মো. ইমান আলী দেশের বাইরে থাকায় ওই আমন্ত্রণে উপস্থিত থাকতে পারেননি। অন্য চারজন বিচারপতি মো. আব্দুল ওয়াহ্‌হাব মিঞা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী এবং বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। দীর্ঘ আলোচনার এক পর্যায়ে রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার বিরুদ্ধে ১১টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ সম্বলিত দালিলিক তথ্যাদি হস্তান্তর করেন। এর মধ্যে বিদেশে অর্থপাচার, আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতি, নৈতিক স্খলনসহ আরও সুনির্দিষ্ট গুরুতর অভিযোগ রয়েছে’।

‘ইতোমধ্যে বিচারপতি মো. ইমান আলী ঢাকায় প্রত্যাবর্তনের পর ০১ অক্টোবর আপিল বিভাগের ৫ জন বিচারপতি বৈঠকে মিলিত হয়ে ওই ১১টি অভিযোগ বিষদভাবে পর্যালোচনার পর এ সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, ওই সকল গুরুতর অভিযোগ প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাকে অবহিত করা হবে। তিনি যদি অভিযোগের ব্যাপারে কোনো সন্তোষজনক জবাব বা সদুত্তর দিতে ব্যর্থ হন, তা হলে তার সঙ্গে বিচারালয়ে বসে বিচারকার্য পরিচালনা করা সম্ভব হবে না’।

সুপ্রিম কোর্ট জানান, ‘এ সিদ্ধান্তের পর ওইদিনই বেলা ১১টা ৩০ মিনিটে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার অনুমতি নিয়ে আপিল বিভাগের ওই পাঁচজন বিচারপতি প্রধান বিচারপতির বাসভবনে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে অভিযোগগুলো নিয়ে বিশদভাবে আলোচনা করেন। দীর্ঘ আলোচনার পরেও তার কাছ থেকে কোনো ধরনের গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা বা সদুত্তর না পেয়ে ৫ জন বিচারপতি তাকে সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন যে, এমতাবস্থায় অভিযোগগুলোর সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত তার সঙ্গে একই বেঞ্চে বসে তাদের পক্ষে বিচারকার্য পরিচালনা করা সম্ভব হবে না’।

‘এ পর্যায়ে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা সুষ্পষ্টভাবে বলেন যে, সেক্ষেত্রে তিনি পদত্যাগ করবেন। তবে এ বিষয়ে পরের দিন অর্থাৎ ০২ অক্টোবর তিনি তার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবেন। অতপর ০২ অক্টোবর তিনি বিচারপতিদেরকে কোনো কিছু অবহিত না করেই রাষ্ট্রপতির কাছে একমাসের ছুটির দরখাস্ত দিলে রাষ্ট্রপতি তা অনুমোদন করেন’।

‘এর প্রেক্ষিতে রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ৯৭ অনুচ্ছেদ অনুসারে প্রধান বিচারপতির অনুপস্থিতিতে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠতম বিচারপতি মো. আব্দুল ওয়াহ্‌হাব মিঞাকে প্রধান বিচারপতির অনুরুপ কার্যভার পালনের দায়িত্ব দেন’।

সুপ্রিম কোর্ট বলেন, প্রধান বিচারপতির পদটি একটি প্রতিষ্ঠান। সে পদ ও বিচার বিভাগের মর্যাদা সমুন্নত রাখার স্বার্থে ইতোপূর্বে সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের বক্তব্য বা বিবৃতি প্রদান করা হয়নি। কিন্তু উদ্ভূত পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে নির্দেশক্রমে এ বিবৃতি দেওয়া হলো’।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৪, ২০১৭
ইএস/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।