ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আইন ও আদালত

সাক্ষী হাজিরে সময় চাওয়া যাবে না

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৩৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০১৭
সাক্ষী হাজিরে সময় চাওয়া যাবে না আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল

ঢাকা: একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগের মামলায় সাক্ষী হাজিরে সময় চাওয়া যাবে না বলে নির্দেশনা দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার ছয় আসামির বিরুদ্ধে মামলায় সাক্ষী হাজিরে প্রসিকিউশনের সময়ের আবেদন জানানোর পর রোববার (১৫ অক্টোবর) চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এ নির্দেশনা দেন।
 
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর মোখলেসুর রহমান বাদল ও সাবিনা ইয়াসমিন খান মুন্নি।


 
পরে মোখলেসুর রহমান বলেন, ‘নেত্রকোনার মজিদসহ ছয়জনের মামলায় ৬ষ্ঠ সাক্ষীকে হাজিরে সময় চেয়েছিলাম। কারণ, অনেকদিন পর কার্যক্রম শুরু করেছেন ট্রাইব্যুনাল। এজন্য সাক্ষীরা প্রস্তুত ছিলেন না। সার্বিক প্রস্তুতির জন্য সময় চেয়েছিলাম। আদালত এ মামলায় পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের দিন আগামী ০১ নভেম্বর ধার্য করেছেন’।
 
তিনি বলেন, ‘এ সময় ট্রাইব্যুনাল বলেছেন, এখন থেকে সব মামলায় সাক্ষী হাজিরের বিষয়ে কোনো সময়ের আবেদন যেন না জানাই, সেটি সবাইকে (প্রসিকিউটর) জানিয়ে দিতে’।
 
মানবতাবিরোধী অপরাধের এ মামলায় নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার ছয় আসামি হলেন- শেখ মো. আব্দুল মজিদ ওরফে মজিদ মওলানা (৬৬), মো. আব্দুল খালেক তালুকদার (৬৭), মো. কবির খান (৭০), আব্দুর রহমান (৭০), আব্দুস সালাম বেগ (৬৮) ও নুরউদ্দিন ওরফে রদ্দিন (৭০)।
 
মোট সাতজন আসামির অন্যজন আহাম্মদ আলী (৭৮) গ্রেফতারের পর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় অবস্থায় মারা যাওয়ায় তাকে অভিযোগ থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।

ছয় আসামির মধ্যে গত বছরের ১২ আগস্ট গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছেন আব্দুর রহমান। বাকি পাঁচজন পলাতক রয়েছেন।

আসামিদের বিরুদ্ধে গত ১৯ এপ্রিল অভিযোগ (চার্জ) গঠন করে বিচার শুরু করেন ট্রাইব্যুনাল। তাদের বিরুদ্ধে হত্যা-গণহত্যা, অপহরণ, নির্যাতন, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের সাতটি অভিযোগ আনা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে আটজন নিরীহ মানুষকে অপহরণের পর হত্যা, তিনটি বাড়ির মালামাল লুট, আটটি ঘরে অগ্নিসংযোগ ও একজনকে ধর্ষণের অভিযোগ।

গত বছরের ২২ মে তাদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেন প্রসিকিউশন।

তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশের সময় তদন্ত সংস্থার প্রধান সমন্বয়কারী আব্দুল হান্নান খান জানান, চার ভলিউমে মোট ৩০৯ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদনে ৪০ জনের জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়েছে, যারা ট্রাইব্যুনালে সাক্ষী দেবেন আসামিদের বিরুদ্ধে।

আসামিদের রাজনৈতিক পরিচয় সম্পর্কে সানাউল হক জানান, মজিদ মওলানা মুক্তিযুদ্ধের সময় নেজামে ইসলামির নেতা হিসেবে রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেন। বর্তমানে তিনি জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।   খালেক তালুকদার একাত্তরে মুসলিম লীগের কর্মী হিসেবে রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেন। পরবর্তীতে বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতের সঙ্গে জড়িত থাকলেও বর্তমানে তিনি পূর্বধলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য।

এছাড়া কবির খান মুসলিম লীগের কর্মী হিসেবে রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেন, বর্তমানে উপজেলা বিএনপির সদস্য। আব্দুর রহমান, আব্দুস সালাম বেগ ও নুর উদ্দিনও মুক্তিযুদ্ধের সময় মুসলিম লীগের কর্মী হিসেবে রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেন, বতর্মানে তারা বিএনপির সমর্থক।

গত বছরের ১২ আগস্ট গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর পূর্বধলার জারিয়া ইউনিয়নের গণকপাড়া গ্রামের মৃত মৌলভী হোসেন আহম্মদ ওরফে হোসেন মৌলভীর ছেলে আব্দুর রহমান ও ঘাগড়া ইউনিয়নের সুনাইকান্দা গ্রামের মৃত আইয়ুব আলীর ছেলে আহাম্মদ আলীকে যার যার বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে স্থানীয় পুলিশ। ১৩ আগস্ট তাদেরকে হাজির করা হলে কারাগারে পাঠিয়ে দেন ট্রাইব্যুনাল।

পরে কারাগারে থাকা অবস্থায় অসুস্থ হয়ে মারা যান আহাম্মদ আলী। ট্রাইব্যুনালের অনুমতি নিয়ে গত বছরের ২০ সেপ্টেম্বর সেফহোমে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে গ্রেফতারকৃত আব্দুর রহমানকে।

আসামিদের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালের ২১ আগস্ট দুপুর একটায় রাজাকার বাহিনী নিয়ে বাড়হা গ্রামের আব্দুল খালেককে গুলি করে হত্যার পর কংস নদীর পানিতে মরদেহ ভাসিয়ে দেওয়ার অভিযোগে মামলা হয় ২০১৩ সালে। শহীদ আব্দুল খালেকের ছোট ভাই মুক্তিযোদ্ধা আ. কাদির মামলাটি করেন।

বাংলাদেশ সময়: ১২৩০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০১৭
ইএস/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।