বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চে মঙ্গলবার (২৩ অক্টোবর) রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। দুদকের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান।
পরে খুরশীদ আলম খান জানান, দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষ শুনানি শেষ করেছে। আসামিপক্ষে সময় চেয়েছেন আইনজীবীরা। কিন্তু আদালত সময় দেননি। এরপর তারা আদালত কক্ষ থেকে চলে যান। পরে আদালত আদেশের জন্য বুধবার (২৪ অক্টোবর) দিন রেখেছেন।
সাংবাদিকদের তিনি বলেন, যুক্তিতর্কে দুদকের পক্ষ থেকে আমরা সর্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবন চেয়েছি। বিচারিক আদালতের দেওয়া সাজা ৫ বছর ঠিক হয়নি উল্লেখ করে আমরা এ মামলায় সর্বোচ্চ সাজা চেয়েছি।
‘এ মামলায় ২৮ দিনের মতো শুনানি হয়েছে। এর মধ্যে ২৬ কার্য দিবসে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা অতিরিক্ত সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য একটা দরখাস্ত নিয়ে এসেছিলেন। গতকাল (সোমবার) তাদের ওই দরখাস্ত শুনে দুই পক্ষের যুক্তিতর্কের পরে আদেশ দেবেন বলে আদালত নথিভুক্ত করে রাখেন। আজকে (মঙ্গলবার) সকালে তাদের আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী ও জয়নুল আবেদীন আদালতে এসে বললেন- তাদের সেই দরখাস্তের বিষয়ে আদেশ দেওয়ার জন্য। কেননা তারা আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগের যাবেন। তখন আদালত বললেন, সেটা আপনাদের ব্যাপার। এ সময় তারা যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য সময় চাইলেন। আদালত সময় আবেদনের বিষয়ে নামঞ্জুর করেন। তখন তারা আদালত থেকে বের হয়ে চলে যান। ’
আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, পৌনে একটা পর্যন্ত তারা কোর্টে আসলেন না। এ সময় আমরা দুর্নীতি দমন কমিশন ও রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করলাম।
এদিকে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, এ মামলায় নিম্ন আদালত যে সাজা দিয়েছে তা সঠিকভাবেই দিয়েছে। ওই সাজা যাতে বহাল তাকে আমি সেই মর্মে আদালতের কাছে প্রার্থনা করেছি।
‘যেহেতু এই রায়ের বিরুদ্ধে সাজা বৃদ্ধি চেয়ে আবেদন করেছেন দুদক। আমরা রাষ্ট্রপক্ষ থেকে সাজা বাড়ানোর জন্য আবেদন করিনি। সেজন্য সাজা বাড়ানোর ব্যাপারে কোনো বক্তব্য রাখার সুযোগ আমার ছিল না। ’
এ মামলায় ছয় আসামির মধ্যে খালেদা জিয়াসহ তিনজন কারাবন্দি। বাকি তিন আসামি পলাতক। খালেদা জিয়া ছাড়া মামলার বাকি দুই আসামি হলেন- মাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল ও ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ।
পলাতক তিনজন হলেন- বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান, সাবেক মুখ্য সচিব ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি বকশীবাজারে কারা অধিদফতরের প্যারেড গ্রাউন্ডে স্থাপিত ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান মামলাটিতে খালেদা জিয়ার পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন।
একই সঙ্গে খালেদার ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান, মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমানকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেন আদালত।
রায় ঘোষণার ১১ দিন পর ১৯ ফেব্রুয়ারি বিকেলে রায়ের সার্টিফায়েড কপি বা অনুলিপি হাতে পান খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। এরপর হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় ২০ ফেব্রুয়ারি তারা এ আবেদন করেন।
গত ২২ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ এবং অর্থদণ্ড স্থগিত করে নথি তলব করেন। এরপর ৭ মার্চ অপর আসামি মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামালের আপিলও শুনানির জন্য গ্রহণ করেন হাইকোর্ট।
পরে ২৮ মার্চ খালেদার সাজা বাড়ানোর জন্য দুদকের করা আবেদনে রুল দিয়েছেন হাইকোর্ট। ১০ মে আরেক আসামি শরফুদ্দিনের আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেছেন আদালত। এখন তিন আসামির আপিল ও দুদকের আবেদনের রুল আদালতে শুনানি হচ্ছে।
মামলায় খালেদা জিয়াকে ১২ মার্চ হাইকোর্ট চার মাসের জামিন দেন। পরবর্তীতে কয়েক দফা তার জামিনের মেয়াদ বাড়ানো হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৩, ২০১৮/আপডেট: ১৬৫৬ ঘণ্টা
ইএস/এমএ