সোমবার (২৯ অক্টোবর) পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রশাসনিক ভবনের ৭ নম্বর কক্ষে স্থাপিত ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক মো. আখতারুজ্জামান এ রায় ঘোষণা করেন।
এ মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, তার ব্যক্তিগত সচিব জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার এপিএস মনিরুল ইসলাম।
আরও জানতে পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীর পদ অলঙ্কৃত করে এ ধরনের দুর্নীতি কাম্য নয়
সকাল ১১টা ২৫ মিনিটে বিচারক এজলাসে উপস্থিত হয়ে বিচারকার্য শুরু করেন। এসময় আসামিপক্ষের আইনজীবীরা অনুপস্থিত ছিলেন না।
শুরুতে দুদকের আইনজীবী মোশারফ হোসেন কাজল বলেন, এ আদালতে দীর্ঘদিন ধরে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়েছে। উচ্চ আদালতের পর আপিল বিভাগে আজ বিচারকার্য স্থগিতের আবেদন খারিজ করে দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ এ আদালতে আপনার রায় বিচারের আদেশ হিসেবে বহাল থাকবে। আমি রায় পাঠ করে শোনানোর আবেদন জানাচ্ছি।
এরপর বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান সংক্ষিপ্ত রায় পাঠ করা শুরু করেন। এ সময় তিনি আড়াই বছর ধরে চলমান এ বিচারকার্যের সংক্ষিপ্ত বিবরণী পাঠ করেন। তিনি বলেন, আড়াই বছর ধরে অন্যান্য আসামিদের পক্ষে হলেও খালেদা জিয়ার পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা হয়নি। তাছাড়া এ মামলায় দীর্ঘদিন আসামি অনুপস্থিত থাকার কারণে শুরুতে চার্জ গঠন করা সম্ভব হয়নি। সর্বমোট ১৫টি বিষয় বিবেচনা করে এ রায় ঘোষণা করা হচ্ছে।
বিচারক আরও বলেন, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট একটি পারিবারিক ট্রাস্ট। কেননা এখানকার প্রধান ট্রাস্টি খালেদা জিয়া নিজেই এবং বাকি দু’জন ছিলেন তার দুই ছেলে তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান কোকো। পরবর্তীতে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে ৫০ হাজার টাকা সংযোজনের মাধ্যমে শরিফুল নামে অরাজনৈতিক এক ব্যক্তিকে ট্রাস্টি হিসেবে যোগ করা হয়েছে। তাছাড়া সাক্ষি হিসেবে রাখা হয়েছিল আরেকজন অরাজনৈতিক ব্যক্তিকে। তখন খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেশের দায়িত্ব পালন করছিলেন। আর এ ট্রাস্টের সঙ্গে তার দুই ছেলে ছাড়া যারা কাগজ-কলমে জড়িত ছিল তারা সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক ব্যক্তি।
খালেদা জিয়া সম্পূর্ণরূপে ক্ষমতার অপব্যবহার করে তার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরীকে দিয়ে টাকা আত্মসাৎ করিয়েছেন। এক্ষেত্রে হারিছ চৌধুরীর পক্ষে কাজ করেছেন তার ব্যক্তিগত সচিব জিয়াউল ইসলাম মুন্না। তাছাড়া সোনালী ব্যাংকের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে যে টাকাগুলো জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের অ্যাকাউন্টে যোগ করা হয়েছে তাও অবৈধ ছিল। তাছাড়া এ টাকার কোনো প্রমাণ বা দলিল নেই। ব্যাংক হিসাবে খালেদা জিয়ার ট্রাস্টি হিসেবে একক স্বাক্ষর ছিল। এ সব কাজে ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার এপিএস মনিরুল ইসলামও ওৎপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন।
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের ঠিকানা খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত আবাসস্থলের ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে। কোন ট্রাস্টের ঠিকানা এরকম হতে পারে না। উনি উনার ব্যক্তিগত বাসাতে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সব সুযোগ সুবিধা ভোগ করতেন।
রায় পাঠের সর্বশেষে তিনি বলেন, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া রাজনৈতিক ক্ষমতা অপব্যবহার করে যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তা কোনোভাবেই কাম্য নয়। ভবিষ্যতে যেন কেউ ক্ষমতার অপব্যবহার করে এ ধরনের কাজ করতে না পারে তাই আইনের ধারা অনুসারে আসামিদের শাস্তি দেওয়া হয়েছে। আসামিদের ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় শাস্তি প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য আসামিদের দণ্ডবিধির ১০৯ নম্বর ধারায় শাস্তি প্রদান করা হয়েছে। এক্ষেত্রে সব আসামিকে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং ১০ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে ছয় মাসের জেল ধার্য করা হয়েছে। এছাড়া কাকরাইলে যে জমিটি এ ট্রাস্টের অর্থায়নে ক্রয় করা হয়েছে তা খালেদা জিয়ার নামে রয়েছে। এ ৪২ কাঠা জমিকে অবৈধ হিসেবে ঘোষণা করে আদালত জমিটিকে রাষ্ট্রের পক্ষে বাজেয়াপ্ত করেছে।
এর আগে, গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডাদেশ দেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত–৫। ওই দণ্ডের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেছেন বিএনপি প্রধান।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৯, ২০১৮
ইএস/এমএএম/এজেডএস/এইচএমএস/পিএম/এসএইচ