ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আইন ও আদালত

‘রুম্পার জন্যই স্টামফোর্ড ছাড়েন সৈকত’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৫৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৮, ২০১৯
‘রুম্পার জন্যই স্টামফোর্ড ছাড়েন সৈকত’

ঢাকা: রূবাইয়াত শারমিন রূম্পার জন্যই স্টামফোর্ড ইউনির্ভাসিটি ছেড়ে অন্য প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হন আব্দুর রহমান সৈকত। তিনি আর ওই প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করছেন না। 

রিমান্ড শুনানির সময় সৈকতের পক্ষে তার আইনজীবী আব্দুল হামিদ ভূঁইয়া আদালতে একথা বলেন। এ সময় কাঠগড়ায় থাকা সৈকতকে স্বাভাবিক দেখায়।

তার মধ্যে কোনো বিষণ্নতা বা চিন্তার ছাপ ছিল না।

স্টামফোর্ড ইউনির্ভাসিটির ইংরেজি বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী ছিলেন রূম্পা। গত ৪ ডিসেম্বর সিদ্ধেশ্বরীর একটি বাড়ির নিচে রক্তাক্ত অবস্থায় তার মরদেহ পাওয়া যায়। এই ঘটনায় ডিবির কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের পর রোববার (০৮ ডিসেম্বর) সৈকতকে এই মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়।

দুপুরে সৈকতকে আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা রমনা জোনাল টিমের গোয়েন্দা পুলিশ পরিদর্শক মো. আকতারুজ্জামান ইলিয়াস। রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, রুম্পা স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির ইংরেজি সাহিত্যের অনার্সের প্রথম বর্ষের ছাত্রী ছিলেন। আসামি সৈকত একই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ’র ছাত্র ছিলেন। সেই সুবাদে রুম্পার সঙ্গে সৈকতের পরিচয়সহ ভালোবাসার সম্পর্ক ছিল মর্মে প্রত্যক্ষভাবে প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। এরইমধ্যে ভালোবাসার সম্পর্কের অবনতি হয়।

আবেদনে আরো বলা হয়, ঘটনার দিন ৪ ডিসেম্বর (বুধবার) বিকেল ৪টার দিকে সৈকতের সঙ্গে রূম্পার স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির সিদ্ধেশ্বরী ক্যাম্পাসের বাইরে দেখা হয়। তখন প্রেম ভালোবাসা নিয়ে কথা উঠলে আসামি সৈকত কোনো যৌক্তিক কারণ ছাড়াই সম্পর্ক ছিন্ন করার জন্য রুম্পাকে অনুরোধ করলে মনোমালিন্যসহ বিরোধ চরম আকার ধারণ করে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে উক্ত মনোমালিন্যের পর ওইদিনই রাত পৌনে ১১টার দিকে ভিকটিমকে উক্ত আসামিসহ তার সহযোগী অজ্ঞাতনামা আসামিরা মিলে হত্যা করতে ৬৪/৪ সিদ্ধেশ্বরী সার্কুলার রোডের বাড়ির ছাদ থেকে ফেলে দেয় মর্মে প্রাথমিকভাবে সন্দেহ করা হচ্ছে। মামলাটি বর্তমানে তদন্তের পর্যায়ে রয়েছে। তাই মামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায়বিচারের স্বার্থে হত্যার মূল রহস্য উদঘাটনপূর্বক উক্ত হত্যাকাণ্ডে কারা কারা জড়িত হত্যাকারীদের প্রকৃত নাম ঠিকানা সংগ্রহপূর্বক তাদেরকে গ্রেফতার, কীভাবে ও কী কারণে উক্ত হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে তা নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ড প্রয়োজন।

রিমান্ড শুনানির জন্য বিকেল তিনটার পরপর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মামুনুর রশিদের আদালতে হাজির করা হয় সৈকতকে। আদালতের এজলাসে তাকে নির্বিকার ও স্বাভাবিক দেখাচ্ছিল। শুনানির আগে আইনজীবীদের প্রশ্নের জবাব দেওয়ার সময় তার মধ্যে কোনো বিষণ্নতা ছিল না।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর এক প্রশ্নের জবাবে সৈকত বলেন, চার-পাঁচ মাস ধরে রুম্পার সঙ্গে তার একটা সম্পর্ক ছিল। সবশেষ ৪ তারিখ রুম্পার সঙ্গে তার কথা হয়। এরপর আমি বাসায় চলে যাই। এই ঘটনায় আমি জড়িত নই এবং ঘটনা সম্পর্কে আমি কিছু জানি না।

আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে রমনা থানার সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা পুলিশের উপ-পরিদর্শক মাহবুবুর রহমান রিমান্ড আবেদনটি পড়ে শোনান।

এরপর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হেমায়েত উদ্দিন খান হিরন বলেন, ভিকটিম ও আসামি দুজনই স্টামফোর্ডের মেধাবী শিক্ষার্থী। একই প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনার সুবাদে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ঘটনার দিন গত ৪ ডিসেম্বর বিকেলে স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির বাইরে আসামির সঙ্গে এই প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে দুজনের কথা কাটাকাটি হয়। বাকবিতণ্ডার জের ধরে তাদের মধ্যে মনোমালিন্য হয়। এর সূত্র ধরেই তাকে হত্যা করে আসামি সিদ্ধেশ্বরীর ৬৪/৪ বাড়ির নিচে ফেলে দেয়।

তিনি বলেন, তদন্ত কর্মকর্তার আবেদন অনুযায়ী তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে এই ঘটনায় তার সম্পৃক্ততা, ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যদের তথ্য সংগ্রহ ও হত্যাকাণ্ডের কারণ সম্পর্কে জানা যাবে। যেহেতু বিষয়টি তদন্তাধীন, তাই তাকে রিমান্ডে নিয়ে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদ করার মাধ্যমে ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদঘাটন সম্ভব হবে।

এরপর আসামিপক্ষের আইনজীবী মো. আব্দুল হামিদ ভূঁইয়া রিমান্ড বাতিল করে জামিনের আবেদন করেন। শুনানিতে তিনি বলেন, এক সপ্তাহ আগেই আসামির বাবা মারা গেছে। তারও সপ্তাহ খানেক আগে তার চাচা মারা যান। ঘটনার পর ডিবি পুলিশ ফোন করে ডাকলে সৈকত সেখানে উপস্থিত হয়। সে সাদা মন নিয়ে ডিবি অফিসে যায়। অথচ এই ঘটনায় তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে। সদ্য বাবা হারানোর এক সপ্তাহের মধ্যে একটা ছেলের পক্ষে এ ধরনের হত্যাকাণ্ড ঘটানোর মতো মানসিক অবস্থা থাকাটা অস্বাভাবিক। তাছাড়া এই মেয়ের যন্ত্রণায়ই সম্প্রতি সে স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে পড়াশোনার জন্য অন্যত্র ভর্তি হয়েছে। তাছাড়া এটি হত্যা নাকি আত্মহত্যা তা এখনও নিশ্চিত নয়।  এ অবস্থায় তার রিমান্ড বাতিল করে জামিনের প্রার্থনা করছি।  

জবাবে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হিরন বলেন, যেহেতু আসামি পক্ষের আইনজীবী নিজেই স্বীকার করছেন মেয়ের (রুম্পা) জন্যই আসামি স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়েছে। সুতরাং তার সঙ্গে মেয়ের সম্পর্কের বিষয়টি তারা স্বীকার করছেন। তাই তাকে মোবাইল ফোনের কল রেকর্ড পরীক্ষাসহ প্রাপ্ত আলামত যাচাই-বাছাই করতে তাকে রিমান্ডে নেওয়া জরুরি।

শুনানি শেষে আদালত সৈকতের চারদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

গত বুধবার (৪ ডিসেম্বর) রাত পৌনে ১১টার দিকে সিদ্ধেশ্বরী সার্কুলার রোডের আয়েশা শপিং কমপ্লেক্সের পেছনের দুই ভবনের মধ্য থেকে এক তরুণীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তাৎক্ষণিকভাবে মরদেহ দেখে আশপাশের লোকজন চিনতে না পারায় মৃতের আঙুলের ছাপ (ফিঙ্গারপ্রিন্ট) সংগ্রহ করা হয়।

রুম্পার বাবা হবিগঞ্জের একটি পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক। বাবা হবিগঞ্জে থাকলেও মা ও পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে ঢাকার শান্তিবাগে থাকতেন তিনি।

পারিবারিক সূত্র জানায়, রুম্পা দু’টি টিউশনি করে বুধবার সন্ধ্যায় বাসায় ফেরেন। পরে কাজ আছে বলে বাসা থেকে বের হন। বাসা থেকে নিচে নেমে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ও পরা স্যান্ডেল বাসায় পাঠিয়ে দিয়ে এক জোড়া পুরনো স্যান্ডেল পায়ে বেরিয়ে যান তিনি।

কিন্তু রাতে আর বাসায় ফেরেননি রুবাইয়াত শারমিন রুম্পা। পরিবারের লোকজনসহ স্বজনেরা বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ করেও তার সন্ধান পাননি। পরে খবর পেয়ে রুম্পার মাসহ স্বজনেরা রমনা থানায় গিয়ে মরদেহের ছবি দেখে তাকে শনাক্ত করেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৮, ২০১৯
কেআই/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।