ঢাকা: তাজরীন ফ্যাশনে মর্মান্তিক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মারা যান ১১২ শ্রমিক। ওই অগ্নিকাণ্ডের পর পেরিয়ে গেছে আট বছর।
বিচারের এই বিলম্বের জন্য আসামিপক্ষ দাবি করছে, রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষী হাজির করতে পারছে না। এটা তাদের ব্যর্থতা। অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষ বলছে, সাক্ষীদের খুঁজে পেতে বেগ পেতে হচ্ছে। মামলাটি কিভাবে দ্রুত শেষ করা যায় সে বিষয়ে তারা কাজ করছেন। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর আশা আগামী বছর মামলাটির বিচার শেষ করা সম্ভব হবে।
২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর আশুলিয়ার তাজরীন ফ্যাশনে ঘটেছিল ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পরদিন আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) খায়রুল ইসলাম একটি মামলা দায়ের করেন। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডির পরিদর্শক একেএম মহসিনুজ্জামান খান ২০১৩ সালের ২২ ডিসেম্বর ১৩ জনকে আসামি করে এই মামলায় অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
অভিযোগপত্রে নাশকতার পাশাপাশি দণ্ডবিধির ৩০৪(ক) ধারায় অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগ আনা হয়। অবশ্য এ ধারায় অভিযোগ প্রমাণিত হলেও সর্বোচ্চ শাস্তি হবে পাঁচ বছর কারাদণ্ড।
অভিযোগপত্র দাখিলের প্রায় দুই বছর পর ২০১৫ সালের ৩ সেপ্টেম্বর অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে এ ঘটনার বিচার শুরু হয়। বর্তমানে ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ দিলারা আলো চন্দনার আদালতে বিচারাধীন।
মামলায় অভিযুক্ত আসামিরা হলেন- তাজরীন ফ্যাশনের মালিক দেলোয়ার হোসেন, চেয়ারম্যান মাহমুদা আক্তার, শামীম, স্টোর ইনচার্জ (সুতা) আল আমিন, সিকিউরিটি ইনচার্জ আনিসুর রহমান, সিকিউরিটি সুপারভাইজার আল আমিন, স্টোর ইনচার্জ হামিদুল ইসলাম লাভলু, অ্যাডমিন অফিসার দুলাল উদ্দিন, প্রকৌশলী এম মাহবুবুল মোর্শেদ, সিকিউরিটি গার্ড রানা ওরফে আনোয়ারুল, ফ্যাক্টরি ম্যানেজার আব্দুর রাজ্জাক, প্রোডাকশন ম্যানেজার মোবারক হোসেন মঞ্জুর ও শহীদুজ্জামান দুলাল।
আসামিদের মধ্যে আল আমিন, রানা, শামীম, শহিদুজ্জামান ও মোবারক হোসেন পলাতক। বাকিরা জামিনে রয়েছেন।
মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন থেকে পাঁচ বছর পেরিয়ে গেছে। এরমধ্যে মাত্র ৮ জন আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। সাক্ষী না আসায় মামলার বিচারকাজ বিলম্বিত হচ্ছে। আসামিপক্ষ এজন্য দায়ী করছে রাষ্ট্রপক্ষকে।
আসামিপক্ষের অন্যতম আইনজীবী হেলেনা পারভীন বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ মামলায় সাক্ষী হাজির করতে পারছে না। তাই মামলাটির বিচার শেষ হচ্ছে না। কিন্তু আসামিদের নিয়মিত হাজিরা দিতে হচ্ছে। মামলার বিচার শেষ হলে আসামিরা দোষী বা নির্দোষ যাই হোক হয়রানি থেকে রেহাই পেতো।
আসামিপক্ষের আরেক আইনজীবী রোকেয়া বেগম বলেন, সাক্ষীদের হাজির করা ছাড়া এভাবে বছরের পর বছর একটা মামলা চলতে পারে না। মামলার অনেক আসামি ঘটনার সঙ্গে জড়িত না। বিচার শেষ হলে তারা খালাস পাবেন বলে আমাদের আশা। তাই রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষীদের হাজির করতে না পারলে আমরা সাক্ষ্যগ্রহণ সমাপ্ত ঘোষণার জন্য আবেদন করব। তখন আদালত সিদ্ধান্ত দেবেন।
তবে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা সাক্ষী হাজিরের ক্ষেত্রে কিছু সীমাবদ্ধতার কথা উল্লেখ করছেন। ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর খন্দকার আব্দুল মান্নান বাংলানিউজকে বলেন, এই মামলায় ১০৪ জন সাক্ষী রয়েছে। এরমধ্যে ৮ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। আগামী ১৩ জানুয়ারি পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য রয়েছে। এ সময়ের মধ্যে আমরা অভিযোগপত্র পর্যালোচনা করবো। পুলিশের কাছে সাক্ষীদের ১৬১ ধারায় দেওয়া জবানবন্দি পর্যালোচনা করে গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীদের আদালতে উপস্থাপন করব। তাই অভিযোগপত্রে থাকা এতো সাক্ষীর সাক্ষ্য না নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীদের সাক্ষ্য দিয়ে এই মামলার বিচারকাজ শেষ করতে পারবো বলে আশা করছি।
সাক্ষী হাজিরে প্রতিবন্ধকতা সম্পর্কে তিনি বলেন, এই মামলার অধিকাংশ সাক্ষী ভাসমান। তারা হয়তো তখন তাজরীনে কাজ করতেন। পরে অনেকে অন্য ফ্যাক্টরিতে কাজ নিয়েছে। অনেকে পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে গেছে। অনেকে আবার ঢাকায় নেই। তাই এসব সাক্ষীকে খুঁজে বের করা পুলিশের জন্যও কঠিন হয়ে পড়েছে। তার ওপর করোনা পরিস্থিতির কারণে চলতি বছর অনেকদিন আদালত বন্ধ ছিল। তাই হলেও গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীদের উপস্থাপনের মাধ্যমে আমরা ২০২১ সালের মধ্যেই মামলার বিচার শেষ করার আশা আমাদের।
বাংলাদেশ সময়: ০০৩০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪, ২০২০
কেআই/এনটি