ঢাকা, সোমবার, ১৫ পৌষ ১৪৩১, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আইন ও আদালত

মাদরাসা ছাত্রকে হত্যার ঘটনায় ৩ শিক্ষকের রিমান্ড

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫১ ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০২১
মাদরাসা ছাত্রকে হত্যার ঘটনায় ৩ শিক্ষকের রিমান্ড অভিযুক্ত সাত আসামি

নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের একটি মাদ্রাসায় ছাত্রকে নির্মম ভাবে পিটিয়ে হত্যার পর আত্মহত্যা বলে পরিবারের কাছে মরদেহ বুঝিয়ে দেওয়ার ঘটনায় গ্রেফতার মাদরাসার তিন শিক্ষকের এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।  

সোমবার (১৫ মার্চ) দুপুরে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মিল্টন হোসেনের আদালত এ রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।

 

কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক আসাদুজ্জামান রিমান্ডের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, তিন শিক্ষককে এ ঘটনায় এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত পাশাপাশি কবর থেকে মরদেহ তুলে ময়নাতদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

শুক্রবার (১২ মার্চ) নিহতের ছাত্রের বাবা বাদী হয়ে সিদ্ধারগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন। পরে পুলিশ দুপুরে রসুলবাগ মাঝিপাড়ার রওজাতুল উলুম মাদরাসা থেকে তাদের গ্রেফতার করে।  

নিহত ছাত্র হলো- রূপগঞ্জ উপজেরার শান্তিনগর এলাকার জামাল হোসেনের ছেলে সাব্বির হোসেন (১৪)। সে রওজাতুল উলুম মাদরাসার হেফজ বিভাগের ছাত্র।

গ্রেফতাররা হলো- মাদরাসার শিক্ষক শওকত হোসেন সুমন (২৬), জোবায়ের আহম্মেদ (২৬) ও আব্দুল আজিজ (৪২)। ১৮ বছরের নিচে হওয়ায় ৪ সহপাঠীর নাম প্রকাশ করা হয়নি আর তাদের রিমান্ডে দেওয়া হয়নি।

সিদ্ধিরগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) এ এস এম শাহীন বলেন, ‘১০ মার্চ মাদরাসার শিক্ষক জোবায়ের নিহতের পরিবারকে জানায় সাব্বির মাদরাসার ছাদে উঠার সিড়ির পাশে ফাঁকা রডের সঙ্গে গলায় গামছা দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। তার মরদেহ নিয়ে যান। পরে স্বজনরা পুলিশে কোন অভিযোগ না দিয়ে মাদরাসা থেকে মরদেহ নিয়ে রূপগঞ্জে নিজ এলাকায় দাফন করে। কিন্তু দাফনের আগে গোসলের সময় নিহতের শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন দেখতে পায়। এজন্য নিহতের বাবা অজ্ঞাত আসামি করে মামলা দায়ের করেন। পরে ৩ মাদরাসার শিক্ষক ও নিহতের ৪ বন্ধুকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মশিউর রহমান বলেন, ‘অভিযোগে মারধর করে হত্যার পর আত্মহত্যার নাম দিয়েছে। বিষয়টি ময়নাতদন্তের পরই বলা যাবে এটা হত্যা না আত্মহত্যা। কবর থেকে মরদেহ তোলা হবে। তিন শিক্ষককে রিমান্ডে আনা হয়েছে। আর ৪ বন্ধুকে কিশোর আইনে পাঠানো হয়েছে। ’

নিহত সাব্বির হোসেনের বাবা জামাল হোসেন বলেন, ‘১০ মার্চ সকাল সোয়া ৯টায় আমার ছেলে মাদরাসার শিক্ষক জোবাইয়েরর মোবাইল থেকে তার মাকে ফোন দেয়। ওইসময় সে সুস্থ ছিল। তার মাকে বিভিন্ন বিষয়ে বলেছে। সকাল সাড়ে ১১টার দিকে ফোন দিয়ে ওর মাকে শিক্ষক জোবায়ের বলে সাব্বির আত্মহত্যা করছে দ্রুত মাদরাসায় আসেন। ’

তিনি বলেন, ‘খবর পেয়ে আমরা দ্রুত মাদরাসায় যাই। সেখানে যাওয়ার পর আমার সন্তানের মরদেহ দেখতে দেওয়া হয়নি। তার আগে (মাদরাসার শিক্ষক ও পরিচালনা কমিটি) আমাদের একটি আলাদা রুমে নিয়ে বসিয়ে বলে আগে কথা শুনেন পরে মরদেহ পাবেন। তখন তারা বলেন, ‘আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা এবং আওয়ামী লীগের সভাপতি। তোমরা যদি নিজের ছেলের মরদেহ নিয়ে যেতে চাও এবং নিজেরা ফাঁসতে না চাও তোমরা একে গোপনে নিয়ে যাও আর গোপনে আলাদা ভাবে মাটি দিয়ে দাও। এমন কোন কিছু করবে না যাতে এ মাদরাসার ক্ষতি বা বদনাম হয়। ’ এ কথা বলায় আমি ও আমার স্ত্রী ভয় পেয়ে যাই। এরপর তাদের কথায় রাজি হই যে, কোন অভিযোগ করবো না। তখন মরদেহ দেয়। ’

তিনি আরও বলেন, ‘মরদেহ এনে বাড়িতে গোসল করানোর সময় সবাই দেখতে পাই সাব্বিরের মাথায়, চোখের ওপরে কপালে, ঠোঁটে ও দাড়ির নিচে, গলায় আঘাতের চিহ্ন। আর পায়ে মারধরের চিহ্ন। শরীরটা থেতলানো। তখন এলাকাবাসী বলতে থাকে এটা আত্মহত্যা না, হত্যা করেছে। ’

তিনি বলেন, ‘আমার ছেলেকে পিটিয়ে কষ্ট দিয়ে মারা হয়েছে। তারা আমার ছেলেকে হত্যা করে আত্মহত্যা বলে দিয়েছে। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই। ’

রওজাতুল উলুম মাদরাসার পরিচালনা কমিটির সভাপতি হলেন সিটি করপোরেশনের ১০ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মহিউদ্দিন। তার মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে সাংবাদিক পরিচয় শুনেই মহিলা কন্ঠের একজন ফোনটি কেটে দেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫০ ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০২১
এমআরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।