ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

পীর সাহেবরা অনুসারী-মুরিদ দিয়ে কী করে দেখুন: হাইকোর্ট

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৩৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১২, ২০২১
পীর সাহেবরা অনুসারী-মুরিদ দিয়ে কী করে দেখুন: হাইকোর্ট

ঢাকা: ঢাকার শান্তিবাগের এক বাসিন্দার বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন জেলায় নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, ডাকাতি ও মানবপাচারসহ নানা অভিযোগে করা ৪৯টি মামলা করা হয়েছে। এই মামলার বাদীর নামের তালিকা ও সিআইডির প্রতিবেদন দেখে হাইকোর্ট বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।

আদালত বলেছেন, বাংলাদেশে পীর সাহেবেরকাণ্ড দেখুন। জায়গা জমি দখলের জন্য পীর সাহেবরা অনুসারী-মুরিদ দিয়ে কী করে দেখুন! সম্পত্তির জন্য তথাকথিত মুরিদ দিয়ে মামলা করিয়েছেন। পীর সাহেবের কেরামতি দেখুন। জায়গা জমির জন্য মুরিদ দিয়ে মামলা করবে-এটা কি কোনো কথা হলো! মুরিদের ঠিকানা দিয়ে মামলা করেছে। একজন মানুষের বিরুদ্ধে একটি মিথ্যা মামলা দিলেই তো তার জীবন শেষ হয়ে যায়। সেখানে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে এতোগুলো মামলা? এটাতো মারাত্মক ব্যাপার।  

বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ রোববার (১২ সেপ্টেম্বর এ মন্তব্য করেন।  

আদালতে কাঞ্চনের পক্ষে অ্যাডভোকেট এমাদুল হক বসির ও রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার উপস্থিত ছিলেন। কাঞ্চনের বিরুদ্ধে করা একটি মামলার বাদী আফজাল হোসেনের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট অজি উল্লাহ। আদালত শুনানি এক সপ্তাহের জন্য মুলতবি করেছেন।  

আইনজীবী এমাদুল হক বসির বলেন, ঢাকার শান্তিবাগ এলাকার বাসিন্দা একরামুল আহসান কাঞ্চনের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন জেলায় নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, চুরি-ডাকাতি, মানবপাচারসহ বিভিন্ন অভিযোগে ৪৯টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় তিনি ১ হাজার ৪৬৫ দিন জেলে খেটেছেন। কিন্তু একটি মামলারও বাদীকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। এ বিবেচনায় তিনি অনেক মামলাতে খালাস পেয়েছেন। এর প্রতিকার চেয়ে তিনি হাইকোর্টে রিট করেন।

হাইকোর্ট গত ১৪ জুন এক আদেশে একরামুল আহসান কাঞ্চনের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন এলাকায় দাখিল করা ৪৯টি মামলার বাদীকে খুঁজে বের করতে সিআইডিকে নির্দেশ দেন। এছাড়া ওই ৪৯টি মামলার বৃত্তান্ত নিয়ে ৬০ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়।

এরপর সিআইডি প্রতিবেদন দাখিল করে। সিআইডির প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘একরামুল আহসান কাঞ্চনের বিরুদ্ধে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলায় সর্বমোট ৪৯টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলাগুলো সম্পর্কে প্রকাশ্য ও গোপনে অনুসন্ধান করে জানা যায়, অধিকাংশ মামলার বাদী, সাক্ষী, ভুক্তভোগীরা কোনো না কোনোভাবে রাজারবাগ দরবার শরিফ এবং ওই দরবার শরিফের পীরের সঙ্গে সম্পৃক্ত। ’ 

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের একটি তদন্ত প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে সিআইডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘রাজারবাগের দরবার শরীফের পীর দিল্লুর রহমান এবং তার অনুসারীরা তাদের দরবার শরীফের স্বার্থ হাসিলের জন্য নিরীহ জনসাধারণের বিরুদ্ধে হয়রানীমূলক মামলা দায়ের করে আসছে বলে তাদের তদন্ত প্রতিবেদনে প্রকাশ করেছে। ’

অ্যাডভোকেট অজিউল্লাহ হাইকোর্টকে জানান, ২০ মামলার মধ্যে মানবপাচার, মারামারি, এসিড নিক্ষেপের ৫ মামলার বাদি হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করে গত ৫ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগ যে আদেশ দিয়েছেন তার কপি পাওয়া যায়নি। অপরপক্ষের আইনজীবীও আপিল বিভাগের আদেশের অনুলিপি সংগ্রহ করতে পারেননি বলে জানান। এ অবস্থায় হাইকোর্ট শুনানি এক সপ্তাহের জন্য মুলতবি রেখে আইনজীবীদের সিআইডির অনুসন্ধান প্রতিবেদনটি আপিল বিভাগের নজরে আনতে বলেন।

বাংলাদেশ সময়: ২০৩৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১২, ২০২১
ইএস/জেআইএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।