ঢাকা, রবিবার, ১৩ শ্রাবণ ১৪৩১, ২৮ জুলাই ২০২৪, ২১ মহররম ১৪৪৬

লাইফস্টাইল

বাংলানিউজের সংবাদে

রোজিনার সন্তানদের মুখে হাসি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৪
রোজিনার সন্তানদের মুখে হাসি

ঢাকা: ‘মায়ের মৃত্যুর পর ভেবেছি আর লেখাপড়া হবে না। নানির রোজগারে সংসার চলে না।

বাংলানিউজের মাধ্যমে এ সহায়তা পেয়ে দু’ ভাই আবার স্কুলে যাব। লেখাপড়া করে চিকিৎসক হবো। মায়ের স্বপ্ন পূরণ করবো। ’

অশ্রুসিক্ত নয়নে কথাগুলো বলেছে রানা প্লাজায় নিহত কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার রোজিনা আক্তারের ছেলে রবিন হোসেন রাজিব। রবিন ভেড়ামারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র।

১৮ জানুয়ারি জনপ্রিয় অনলাইন নিউজপোর্টাল বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম এ ‘ভাঙা নায়ের মাঝি সুফিয়া’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদে রোজিনার রেখে যাওয়া কূল হারা চার সন্তানের জীবন কাহিনী তুলে ধরেন রোজিনার মা সুফিয়া খাতুন।

এতে কয়েকজন আমেরিকা প্রবাসী ‘বাংলানিউজ সোশ্যাল সার্ভিস’র (বিএনএসএস) মাধ্যমে রোজিনার সন্তাদের লেখাপড়ার জন্য সহায়তা করেন।

শুক্রবার সকালে বাংলানিউজ কার্যালয়ে সহায়তার অর্থ সুফিয়া খাতুন, রবিন ও রুমনের হাতে তুলে দেন বাংলানিউজের লাইফস্টাইল এডিটর ও বিএনএসএস এর আহ্বায়ক শারমীনা ইসলাম। এসময় বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম এর হেড অব নিউজ মাহমুদ মেনন উপস্থিত ছিলেন।

রবিন বাংলানিউজকে বলেন, মা বলতো বড় হয়ে ডাক্তার (চিকিৎসক) হবি। গরির মানুষের সেবা করবি। খুব ছোট রেখে বাবা চলে গেছে। একমাত্র ভরসা মাও নেই। চারদিকে যখন অন্ধকার দেখছি তখন এ সহায়তা পেয়ে ভালো করে পড়বো।

রবিন বলেন, খুব ছোটবেলায় মা আমাকে রানা প্লাজায় নিয়ে যেত। মা রানা প্লাজার সাত তলায় কাজ করতো। মেশিনের নিচে আমাকে ঘুমিয়ে রেখে কাজ করতো।

আগে অনেক দুষ্টুমি করতাম। মায়ের মৃত্যুর পর আর করি না। নানির কষ্ট দেখলে ভালো লাগে না। ইচ্ছে করে নানির জন্য কিছু করি।

বড় হয়ে বড় মাপের একজন ডাক্তার হওয়ার জন্য সবার কাছে দোয়া চায় রবিন।

রুমন বাংলানিউজকে বলেন, বাবার আদর কোনদিন পাইনি। মাও অভিমান করে চলে গেছে। মা মারা যাওয়ার পর নানি অনেক কষ্টে সংসার দেখাশুনা করেন। ভালো করে লেখাপড়া করে ডাক্তার হয়ে নানির দুঃখ দূর করবো।

তার মায়ের জন্য সকলের কাছে দোয়া চায় রুমন।

রোজিনার মা সুফিয়া খাতুন বাংলানিউজকে বলেন, রোজিনাকে সাত মাসের পেটে রেখে তার বাবা মারা যায়। খেয়ে না খেয়ে বড় করে বিয়ে দিয়েছি।

মৌটুসী আক্তার কেয়া, রিয়া আক্তার মৌ, রবিন হোসেন রাজিব, রুমন হোসেন অসিব নামের চার সন্তান জন্মের পর স্বামী রেখে চলে যায় রোজিনাকে। রোজিনা রানা প্লাজায় চাকরি করে সংসারের হাল ধরেন। বিয়ে দেন বড় মেয়ে কেয়াকে।

রোজিনার মৃত্যুর পর তামাকের কাজ করে সংসার চালায় তার মা। অভাবের তাড়নায় মেঝ নাতনি রিয়ার লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায়। রিয়া বর্তমানে মিরপুর এলাকায় একটি কারখানায় চাকরি করে।

দুই নাতিরও লেখাপড়া প্রায় বন্ধ। এ সহায়তার মাধ্যমে দুই নাতিকে আবার লেখাপড়া করাতে পারবেন বলে আশা করেন। তিনি বাংলানিউজের মাধ্যমে সহায়তা প্রদানকারীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ও তাদের জন্য দোয়া কামনা করেন।

তিনি বলেন, আমার বসত ভিটা ছাড়া কোনো সম্পত্তি নেই। মেঝ নাতনি রিয়াকে বিয়ে দেওয়ার সামর্থ নেই। আমার বয়স হয়েছে। ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও তামাকের কাজ করি।

রিয়াকে বিয়ে দেওয়া, দুই নাতিকে মানুষ করা সব মিলিয়ে আমি চোখে অন্ধকার দেখছি।

এসময় দুই নাতির লেখাপড়ায় সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৪১০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৪

* ভাঙ্গা নায়ের মাঝি সুফিয়া

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।