হাসনাত সাহেব চিন্তায় পড়ে গেলেন। এই কথায় তিনি কী উত্তর দেবেন! একটু ভেবে তিনি বললেন, খুব ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছো, একটু পরে তো তুমি মারাই যাবে- আসো তোমার সঙ্গে একটা সেলফি তুলে রাখি, পরে ফেসবুকে দেওয়া যাবে।
এতোক্ষণে ভদ্রলোক তুষ্টির নাম জেনে গেছেন, সে ক্লাস এইটে পড়ে। তিনি বললেন, চলো কফি খাই, তারপর তোমার যা ইচ্ছে হয় করো।
তুষ্টি কী মনে করে তার সঙ্গে গেলো। কফি খেতে খেতে জানা গেলো বাবার সঙ্গে শপিং এ এসে একটি নতুন মোবাইল সেট পছন্দ করে তুষ্টি। বাবা সেই ফোনটি কিনে দিতে চাননি। তখনই সে রাগ করে চলে আসে, আর মনে মনে সিদ্ধান্ত নেয় আত্মহত্যা করার।
আজকাল আমাদের সমাজে টিনএজারদের মধ্যে এ ধরনের প্রবণতা প্রায়ই লক্ষ্য করছি। এর কারণ কী আর সমাধানই বা কী হতে পারে? এ বিষয়ে কথা বলি খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজের মনোরোগ বিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডাক্তার মোঃ ফারুক হোসেনের সঙ্গে।
ফারুক হোসেন বলেন, টিনএজারদের মধ্যে নানা ধরনের শারীরিক-মানসিক-হরমোনাল পরিবর্তন হয়। এসময় পরিবর্তনগুলোর সঙ্গে খাপ খাইয়ে সঠিক আচরণ করা অনেকের জন্যই বেশ কঠিন হয়ে পড়ে।
তাদের মধ্যে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিষন্নতা দেখা দিতে পারে, তৈরি হতে পারে অস্থিরতা। অনেক সময় তাদের আবেগ, হতাশা অতিরিক্ত মাত্রায় বেড়ে গিয়ে আত্মহত্যার মতো পথও বেছে নেওয়ার চিন্তা করে।
এ ধরনের অবস্থা থেকে তুষ্টির মতো টিনএজারদের বের করে সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে আনতে সবার মধ্যেই সচেতনতা বাড়ানোর প্রতি জোর দেন ফারুক হোসেন।
তিনি বলেন, সমাজের অনেক বিষয় দেখে বা জেনে টিনএজাররা প্রভাবিত হয়, যেমন একটি ঘটনা তাদের মধ্যে ভালো কাজ করার প্রভাব তৈরি করে ঠিক তেমনি কোনো নেতিবাচক ঘটনা থেকেও একই ধরনের পথ বেছে নেওয়াকেই তারা মুক্তির পথ ভেবে নেয় অনেক সময়।
যেহেতু এই বয়সে তাদের ব্যক্তিত্বের পূর্ণ বিকাশ হয়ে ওঠে না, কিন্তু তারা ভাবতে চায়, বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে অনেক সময় ভুল পথে অগ্রসর হয়ে যায়।
কোনো কিশোরের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা লক্ষ্য করলে পরিবারের প্রথম দায়িত্ব হচ্ছে তার সঙ্গে কথা বলা, তাকে সুযোগ দেওয়া মনের কথা প্রকাশ করার। সে কারও সঙ্গে আবেগের প্রকাশ করতে পারলে বেশিরভাগ সময়ই স্বাভাবিক মানসিক অবস্থায় ফিরে আসে আর ভয়াবহ পরিণতি থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারে।
এক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বন্ধু-শিক্ষক সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে সাহায্যের জন্য। সচেতনতা তৈরি করতে হবে প্রতিটি স্তরে। বড় ভূমিকা রয়েছে মিডিয়ার, মিডিয়াতে এমন কোনো খবর প্রচার করা যাবে না, যা দেখে প্রভাবিত হয়ে কোমলমতি কিশোররা বিপথে যেতে পারে।
নজর দিতে হবে মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়ানোর দিকে। তাদের মনের কথাগুলো যেন পরিবারের কাছে প্রকাশ করতে পারে, এটা নিশ্চিত করতে হবে।
বিভিন্ন চাহিদা পূরণ না হওয়ায় অনেক সময় টিনএজাররা আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে, নিজের পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা জানা থাকলে এই প্রবণতা কমে আসবে। তারা অনেক বেশি আবেগি হয়, আর আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, ফলে দুর্ঘটনা বেশি হয় এই বয়ঃসন্ধিতেই।
সে কেমন ব্যক্তিত্বের মানুষ হবে সেই লক্ষণও তার মধ্যে এই বয়সেই শুরু হয়।
সে রোল মডেল খোঁজার চেষ্টা করে। বাবা, মা, ভাইবোন, আত্মীয়, শিক্ষক বা কোনো সেলিব্রেটির মতো হতে চায় সে। যখন দেখে কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তির সঙ্গে তার অনেক বেশি পার্থক্য তখন হতাশা তৈরি হতে পারে, এমন হতে পারে, শারীরিক-মানসিক-যৌন নির্যাতন থেকেও।
যেকোনো টিনএজারের মধ্যে আত্মহত্যা প্রবণতা দেখা দিতে পারে। এ অবস্থায় পরিবারকে অত্যন্ত ধৈর্য নিয়ে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে। এজন্য অবশ্যই কোনো মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।