খাগড়াছড়ি: পাহাড়ের মানুষের ভাগ্য বদলের জন্য সরকারের নেওয়া রাবার বাগান প্রকল্প ভেস্তে যেতে বসেছে। চলছে রাবার বাগান উজাড়ের মহোৎসব।
বোর্ড সংশ্লিষ্টরা জানান, তহবিল সংকটের কারণে তারা কোন পদক্ষেপই নিতে পারছেন না।
১৯৮১/৮২ সাল থেকে তিন দফায় উচুভূমি বন্দোবস্তকরণ রাবার বাগান ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের মাধ্যমে ৩ হাজার ৩০০ পাহাড়ি পরিবারকে পূনর্বাসন করা হয়েছিল। সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাব এবং অনিয়মের কারণে ২০ হাজার একরের বেশি জমিতে করা সেই রাবার বাগান প্রকল্প এখন সরকারের বোঝায় পরিণত হয়েছে। সুবিধাভোগী জুমিয়া পরিবারগুলোই সরকারিভাবে সৃজন করা রাবার গাছ উজাড় করছেন। তারা রাবার গাছ কেটে সেই জমি বিক্রি করে দিচ্ছেন প্রভাবশালীদের কাছে। বেদখল করা হচ্ছে সেসব রাবার বাগানের জমিজমা।
বিশেষত, জেলা সদর ও দীঘিনালায় এই দৃশ্য বেশি দেখা যায়। রাবার গাছ কাটার ছবি তুলতে গেলে তারা পালিয়ে যায়। পরে গাড়িতে করে সেই রাবার গাছ নিয়ে যাওয়া হয় ব্রিকফিল্ড ও তামাক চুল্লিতে।
খাগড়াছড়ির অধিকাংশ রাবার বাগান নিশ্চিহ্ন হয়ে সরকারের মহাপ্রকল্প প্রশ্নের মুখে প্রায়। রাবার বাগান প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের গাছগুলো থেকে রাবার কষ সংগ্রহ একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে। দ্বিতীয় পর্যায় ও ৩০০ পরিবার প্রকল্পে বর্তমানে নামে মাত্র রাবার কষ সংগ্রহ হচ্ছে। তরল কষ প্রক্রিয়াজাত করে শক্ত করার জন্য খাগড়াছড়ি সদরের স্বনির্ভরে অবস্থিত রাবার কারখানাটি বন্ধ রয়েছে প্রায় এক বছরের বেশি সময় ধরে। বাঘাইছড়ির কারখানা চালু আছে নামেমাত্র।
এদিকে সব সুবিধাভোগী জুমিয়া নামে ভূমি বন্দোবস্ত দেওয়ার কাজটিও তিন যুগে করতে পারেনি উন্নয়ন বোর্ড। এক্ষেত্রে বোর্ডের কর্মকর্তারাই বেশি দায়ী বলে অভিযোগ সুবিধাভোগীদের।
প্লান্টার লিডার যতীন বিকাশ চাকমা বলেন, চুক্তি অনুযায়ী সব প্লান্টারকে ৬ একর ২৫ শতক জমি বন্দোবস্ত করে দেওয়ার কথা। সেই প্রতিশ্রুতি রাখেনি উন্নয়ন বোর্ড। তাই অনেক সুবিধাভোগীই রাবার বাগানকে নিজের মনে করতে পারেননি। তাই তারা এই মুহুর্তে রাবার বাগান এর স্থলে অন্য কোন প্রকল্প দিয়ে সুবিধাভোগীদের বাঁচিয়ে রাখার দাবি জানান।
জেলা সদরের ৪ মাইল এলাকার সুবিধাভোগী নির্মল ত্রিপুরা জানান, প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ের রাবার গাছের বয়স বৃদ্ধির কারণে গাছে কষ আহরণ কমে গেছে। এছাড়া সার, উপকরণ ও কষের ন্যায্য হিসাব না পাওয়ায় জুমিয়ারা রাবার চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। সরকারের দেওয়া রাবার বাগানের জমি বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।
প্লান্টার লিডার কর্ণজয় ত্রিপুরা বলেন, ‘প্লান্টার নিজেরাই সব রাবার গাছ কেটে ফেলছেন। সেই রাবার গাছ ব্রিকফিল্ড ও তামাক চুল্লিতে বিক্রি করে দিচ্ছেন। ’ এই প্লান্টার লিডার হতাশা প্রকাশ করে আরও জানান, ‘আর কয়েক বছরের মধ্যে একটি রাবার গাছও অবশিষ্ট থাকবে বলে মনে হয়না। ’
রাবার বাগান ব্যবস্থাপনা ইউনিটের জেনারেল ম্যানেজার পিন্টু চাকমা জানিয়েছেন, পরিস্থিতি এখন বোর্ডের অনুকূলে নেই। বয়স্ক রাবার গাছগুলো বিক্রির জন্য ৩ বার টেন্ডার নোটিশ দেওয়ার পরও সাড়া পাওয়া যায়নি। তাই রাবার বাগান কেটে ফেলা হচ্ছে এমন অভিযোগ স্বীকার করে বলেন, এর জন্য কষ আহরণ কমে যাওয়া ও বোর্ডের তহবিল সংকটই মূল দায়ী।
প্রকল্পভূক্ত পরিবারগুলোকে ধরে রাখার জন্য নতুন করে সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি গ্রহণের ওপর জোর দিয়েছেন রাবার বাগান ব্যবস্থাপনা ইউনিটের জেনারেল ম্যানেজার। এদিকে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ৫/৬ বছর ধরে বেতন ভাতা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৫, ২০২২
এসএম