দিনাজপুর: দিনাজপুরের খানসামা উপজেলায় অপহরণের দুই দিন পর আরিফুজ্জামান (৮) নামে এক শিশুর বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় অভিযুক্ত আসামি শরিফুল ইসলামকে (২৪) গ্রেফতার করা হয়েছে।
সোমবার (০৫ ডিসেম্বর) দুপুরে দিনাজপুর পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান পুলিশ সুপার শাহ্ ইফতেখার আহমেদ। বলাৎকারের পর ওই শিশুকে হত্যা করে তার মা-বাবার কাছে মুক্তিপণ চাওয়া হয়েছিল বলে জানানো হয়।
এর আগে রোববার (০৪ ডিসেম্বর) দিনগত রাত দেড়টার দিকে উপজেলার পাকেরহাটে পুলিশের সাবেক গাড়িচালক আব্দুস সালামের বাড়ির আঙ্গিনায় আরিফুজ্জামানের মরদেহ পাওয়া যায়। বস্তায় করে হাত-পা বাধা ও মাটির নিচে পুঁতে রাখা অবস্থায় ওই মরদেহটি উদ্ধার করে পুলিশ।
তার আগে শুক্রবার (০২ ডিসেম্বর) বিকেলে এ অপহরণের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে পুলিশ। পরে শরিফুল অপহরণের কথা স্বীকার করলে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে নিহত শিশুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
নিহত আরিফুজ্জামান উপজেলার কায়েমপুর এলাকার আতিউর রহমানের ছেলে।
এছাড়া গ্রেফতার শরিফুল একই এলাকার আব্দুল মালেকের ছেলে। তিনি খানসামা বিএম কলেজের কম্পিউটার ট্রেড নিয়ে লেখাপড়া করতেন বলে জানা গেছে।
প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার শাহ্ ইফতেখার আহমেদ বলেন, শুক্রবার বিকেলে বাড়ির পাশে খেলাধুলা করার সময় নিখোঁজ হয় আরিফুজ্জামান। পরে তার বাবা খানসামা উপজেলার কায়েমপুর গ্রামের আতিউর রহমান বাদী হয়ে থানায় অভিযোগ করেন। এর ভিত্তিতে থানা পুলিশ তদন্ত শুরু করে। একই সঙ্গে ডিবি পুলিশও ছায়া তদন্ত কার্যক্রম শুরু করে এবং বেশ কয়েকজনকে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করা হয়।
পরে জিজ্ঞাসাবাদ চলাকালে আটক শরিফুল ইসলাম নিজের দোষ স্বীকার করেন। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে নিহত শিশুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ সুপার আরও বলেন, পাকেরহাটে পুলিশের সাবেক গাড়িচালক আব্দুস সালামের একটি ঘর ভাড়া নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসছিলেন শরিফুল। তবে তার পরিবার সেই ভাড়া বাসার বিষয়ে কিছু জানতো না। শুক্রবার বিকেলে তিনি ওই শিশুকে অপহরণ করে সেই ভাড়া বাসায় নিয়ে যান। পরে সেখানে তাকে বলাৎকার করা হয় এবং বিষয়টি ওই শিশু তার পরিবারকে জানিয়ে দেবে ভেবে তাকে হত্যা করা হয়।
পরে পাশের স্থানীয় একটি শাবল (খনন যন্ত্র) ক্রয় করে সেই ভাড়া বাসার আঙ্গিনায় গর্ত করে শরিফুল। সেখানে ওই শিশুর হাত-পা বেঁধে একটি বস্তায় ঢুকিয়ে মরদেহ পুঁতে রাখা হয়। এরপর গ্রামের বাড়িতে পালিয়ে গিয়ে নিহত শিশুর বাবাকে ফোন দিয়ে ১ লাখ টাকা মুক্তিপন দাবি করে শরিফুল। নিহত শিশুর বাবা তাকে মুক্তিপন বাবদ ৫ হাজার ৪০০ টাকাও দিয়েছিলেন।
শাহ্ ইফতেখার আহমেদ জানান, পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শরিফুল নিজের দোষ স্বীকার করেছে। এ ব্যাপারে নিহত শিশুর বাবা শরিফুল ইসলাম বাদী হয়ে রোববার অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। সেই মামলায় শরিফুলকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৫, ২০২২
এফআর