ঢাকা: ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক)হাসপাতালের জরুরি বিভাগের তালা মারা লাশঘরের ভিতরে ট্রলিতে পড়ে আছে বাবা মকবুল হোসেনের মরদেহ। সেই ঘরের কলাপসিবলগেটের সামনে মা হালিমা খাতুনের কোলে বসে বাবার মরদেহটা দেখার চেষ্টা করছে ৭ বছরের মেয়ে মিথিলা।
মকবুলের মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে বুধবার (৭ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় স্ত্রী হালিমা খাতুন, একমাত্র সন্তান মিথিলা ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা ঢামেক হাসপাতালে জরুরি বিভাগের লাশঘরের সামনে বুকফাটা আর্তনাদ করছিলেন। তাদের কান্না শুনে সেখানে জড়ো হন হাসপাতালের শতাধিক লোক। এ সময় লাশঘর গেটের সামনে মায়ের হাত ধরে, আবার কখনো মায়ের কোলে বসে বাবার মরদেহ দেখার চেষ্টা করছিল শিশু মিথিলা। সবাই যখন উচ্চস্বরে চিৎকার করে কান্নাকাটি করছে, তখন গুলিতে নিহত বাবা মকবুলের মরদেহের দিকে তাকিয়ে তার দু’চোখ বেয়ে পানি ঝরতে দেখা যায়।
মকবুলের স্ত্রী হালিমা খাতুন বারবার চিৎকার করে লাশঘরের সামনে বসে পড়ে মিথিলাকে জড়িয়ে কাঁদতে থাকেন। আর বারবার বলছিলেন, ‘মাগো আর কান্দিস না, তোর বাবা আর নাই’।
স্ত্রী হালিমা খাতুন জানান, সকাল ৯টার দিকে কারখানার জন্য মালামাল কিনতে বাসা থেকে বের হন মকবুল। ঘণ্টাখানেক পরে মোবাইলে কথা হয়েছিল। সে সময় মকবুল জানিয়েছিলেন মিরপুর ১১ নম্বরে আছেন। তখন তা জিজ্ঞেস করেছিলেন মিথিলা কি নাস্তা খেয়েছে? এর উত্তরের তিনি বলেছিলেন হ্যাঁ। এটাই ছিল তাদের শেষ কথা। তবে বাসা থেকে বের হওয়ার আগে স্ত্রীর বড় বোনে কাছ থেকে এক হাজার টাকা নিয়ে বের হয়েছিলেন মকবুল।
তিনি আরও জানান, মকবুল কোনো রাজনীতির সঙ্গে আগেও জড়িত ছিল না, বর্তমানেও না।
হালিমা উল্টো লাশঘরের সামনের লোকজনকে জিজ্ঞাসা করেন, আমার স্বামীর ঘটনা কোন জায়গায় হয়েছে? কোথায় হয়েছে? উত্তরে অনেকে বলেন, আপনার স্বামীকে রক্তাক্ত অবস্থায় নয়াপল্টনে বিএনপি অফিসের সামনে পাওয়া গেছে।
স্ত্রী ও শিশু সন্তানের পাশাপাশি মকবুলের মরদেহ শনাক্ত করেন তার মা জোহারা বেগম, শাশুড়ি লাল মতি বেগমসহ ভাই ও বোনরা। সবারই একই দাবি মকবুল কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলও না। আগেও ছিল না, বর্তমানেও নেই। শিশু মিথিলা স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় পড়ে বলে জানান তারা।
বাংলাদেশ সময়: ২১২২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৭, ২০২২
এজেডএস/এমএমজেড