জামালপুর: মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে ১১নং সেক্টরের সদর দপ্তর খ্যাত জামালপুরের বকশীগঞ্জের সীমান্তবর্তী ধানুয়া কামালপুরে নির্মিত স্মৃতিসৌধে লিপিবদ্ধ সব ইতিহাস মুছে যাচ্ছে। স্মৃতিসৌধ দেখতে আসা দর্শনার্থী ও তরুণ প্রজন্ম জানতে পারছে না কিছুই।
স্থানীয়দের দাবি, স্মৃতিসৌধটি দ্রুত সংস্কার করে সেখানে আবারও মুক্তিযুক্ত ও মুক্তিযোদ্ধাদের বীরগাথা লেখা হোক।
ইতিহাস বলছে, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে ১১নং সেক্টরের ভুমিকা ছিল অপরিসীম। সে বছরের ৪ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধের মুখে হানাদার বাহিনীর শক্তিশালী ঘাঁটি কামালপুর দুর্গের পতন হয়।
তাই স্থানটিকে সংরক্ষণের জন্য প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিসৌধ। সৌধে সংরক্ষণ করা হয় মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের ইতিহাস। যাতে দর্শনার্থীরা এসে সে ইতিহাস জানতে পারে। আর সংরক্ষণের অভাবে সৌধের সেই ইতিহাসই মুছে যাচ্ছে।
কামালপুর উচ্চবিদ্যালয় শিক্ষার্থী সোলায়মান, ইব্রাহিম, ফেরদৌসসহ অনেকেই বলেন, আমরা এখানে আগেও এসেছি, ইতিহাস পড়েছি। কিন্তু মুছে যাওয়ায় এখন আর পড়তে পারছি না। এখানে ইতিহাস লেখা থাকলে নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীরা খুব সহজেই জানতে পারত।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হামিদ (হামদি) বলেন, বারবার উপজেলা নির্বাহ অফিসার, জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরের বিষয়টি নিয়ে চেষ্টা করি। তারা শুধু আশ্বাসই দিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু কাজটা করছেন না।
ধানুয়া কামালপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হাসান জোবায়ের হিটলার বলেন, লেখা মুছে যাওয়ায় তরুণ প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানতে পারছে না। ইতিহাস সম্মিলত এই স্মৃতিসৌধের দ্রুত সংস্কার করা উচিত।
ধানুয়া কামালপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মশিউর রহমান বলেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হয়েছে। ইতিহাস সংগ্রহের চেষ্টা করা হচ্ছে। খুব কম সময়ে এটি সংগ্রহ করে আবারও লেখা হবে।
প্রসঙ্গত, মহান মুক্তিযুদ্ধে কামালপুর রণাঙ্গনে হানাদার বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের ৮ দফা সম্মুখসমর হয়। ৩১ জুলাইয়ের আগে ধানুয়া কামালপুর রণাঙ্গনে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দেয় জেড ফোর্স।
জেড ফোর্সের অধিনায়ক মেজর জিয়াউর রহমান পাকিস্তান বাহিনীর মোকাবিলা করেন। ৩১ জুলাই হানাদারদের গুলিতে ক্যাপ্টেন সালাউদ্দিন মমতাজ বীর উত্তম শহিদ হন। তার পর মুক্তিযোদ্ধারা সেক্টর কমান্ডার মেজর আবু তাহেরের (পরে কর্নেল) পরিকল্পনা অনুযায়ী ২৪ নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা হানাদার বাহিনীর ধানুয়া কামালপুর ঘাঁটি অবরোধ করেন।
অবরোধের প্রথমদিনেই কামালপুর মির্ধা পাড়া মোড়ে যুদ্ধে মর্টারশেলের আঘাতে সেক্টর কমান্ডার মেজর আবু তাহের একটি পা হারান। পরে ভারপ্রাপ্ত সেক্টর কমান্ডারের দায়িত্ব নেন উইংকমান্ডার হামিদুল্লাহ খান বীরপ্রতীক।
১০ দিন প্রচণ্ড যুদ্ধের পর ৪ ডিসেম্বর সকাল ৮ টায় সেক্টর কমান্ডারের নিদের্শক্রমে সাহসী মুক্তিযোদ্ধা বশির আহমেদ (বীরপ্রতীক) নিজের জীবন বাজি রেখে পাক বাহিনীর ক্যাম্পে সারেন্ডারপত্র নিয়ে যায়।
এরপর সন্ধ্যা ৭টায় ৩১ ব্যালুচ রেজিমেন্টের গ্যারিসন কমান্ডার আহসান মালিকসহ ১৬২ জন হানাদার বাহিনীর সদস্য মিত্রবাহিনীর কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করে। শত্রুমুক্ত হয় ধানুয়া কামালপুর।
স্থানটি স্মরণে রাখতে ১৯৯৬ সালে সেখানে নির্মাণ করা হয় মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিসৌধ। কিন্তু এরপর আর কোন সংস্কার না করার কারণে মুছে যাচ্ছে সেই সব গৌরবগাঁথা ইতিহাস।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০২২
এসএএইচ