ঢাকা: তিন দশকের অধিক সময় আগে ঢাকার ভিকারুননিসা নূন স্কুলের সামনে সগিরা মোর্শেদ সালাম হত্যা মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ পিছিয়ে আগামী ১৯ ডিসেম্বর ধার্য করেছেন ট্রাইব্যুনাল।
সোমবার (১২ ডিসেম্বর) ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক রফিকুল ইসলামের আদালতে মামলাটি সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ধার্য ছিল।
সংশ্লিষ্ট আদালতের বেঞ্চ সহকারি শামসুদ্দিন জুম্মন এ তথ্য জানান।
এ মামলার আসামিরা হলেন- সগিরা মোর্শেদের ভাসুর ডা. হাসান আলী চৌধুরী (৭০), জা সায়েদাতুল মাহমুদা ওরফে শাহিন (৬৪), শ্যালক আনাছ মাহমুদ রেজওয়ান (৫৯) ও মারুফ রেজা (৫৯)।
সর্বশেষ গত ৭ জুন এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের অষ্টম সাক্ষী নিহতের ভাই ডা. গওস আদালতে সাক্ষ্য দেন। গত ১২ জুন তাকে জেরা শেষ করেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা।
মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, ১৯৮৯ সালের ২৫ জুলাই সগিরা মোর্শেদ সালাম ভিকারুননিসা নূন স্কুল থেকে মেয়েকে আনতে যাচ্ছিলেন। বিকেল ৫টার দিকে সিদ্ধেশ্বরী রোডে পৌঁছামাত্র মোটরবাইকে আসা ছিনতাইকারীরা তার হাতের সোনার চুড়ি ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। তিনি দৌড় দিলে তাকে গুলি করা হয়। পরে হাসপাতালে নেওয়ার পথেই সগিরা মোর্শেদ সালাম মারা যান।
ওই দিনই রমনা থানায় অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে মামলা করেন সগিরা মোর্শেদ সালামের স্বামী সালাম চৌধুরী।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী রিকশাচালক জড়িত দুজনকে শনাক্ত করলেও অজ্ঞাত কারণে মিন্টু ওরফে মন্টু ওরফে মরণ নামে একজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় গোয়েন্দা পুলিশ।
১৯৯১ সালের ১৭ জানুয়ারি আসামি মন্টুর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতের বিচারক আবু বকর সিদ্দীক। সাক্ষ্য নেওয়া হয় সাতজনের।
সাক্ষ্যে বাদীপক্ষ থেকে বলা হয়, তদন্তকালে আসামি মন্টু এবং তৎকালীন (১৯৮৯) স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মেজর জেনারেল মাহমুদুল হাসানের নিকটাত্মীয় মারুফ রেজা গ্রেফতার হন। কিন্তু মারুফ রেজার নাম বাদ দিয়েই অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।
সাক্ষ্যগ্রহণ চলাকালে মারুফ রেজার নাম আসায় রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে ১৯৯১ সালের ২৩ মে মামলার অধিকতর তদন্তের আদেশ দেন ঢাকার বিচারিক আদালত। ওই আদেশের বিরুদ্ধে মারুফ রেজার রিভিশন আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯১ সালের ২ জুলাই হাইকোর্ট মামলাটির অধিকতর তদন্তের আদেশ ও বিচারকাজ ছয় মাসের জন্য স্থগিত করার পাশাপাশি অধিকতর তদন্তের আদেশ কেন বাতিল করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন।
পরের বছর ২৭ অগাস্ট জারি করা রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ওই মামলার বিচারকাজ স্থগিত থাকবে বলে আদেশ দেন হাইকোর্ট।
এ মামলার সর্বশেষ তদন্ত কর্মকর্তা সম্প্রতি বিষয়টি অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের নজরে আনলে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের উদ্যোগ নেয় রাষ্ট্রপক্ষ। এরপর বিষয়টি বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের বেঞ্চে তোলা হলে ২০১৯ সালে আদালত স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে নেন।
এ ঘটনার ৩০ বছর পর ঘটনার রহস্য উদঘাটন করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) চারজনের বিরুদ্ধে ২০২০ সালের ১৪ জানুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। এক হাজার ৩০৯ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্রে রাষ্ট্রপক্ষে মোট ৫৭ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। এরপর ২০২০ সালের ২ ডিসেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০২২
কেআই/জেএইচ