ঢাকা: নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র সঙ্গে জড়িয়েছেন ছেলে। ছেলেসহ সংগঠনটিতে জড়িত অন্যদের নানাভাবে সহযোগিতা, এমনকি ব্যয়ভার বহন করেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।
নতুন এ জঙ্গি সংগঠনটিতে জামায়াতে ইসলামীর আঞ্চলিক পর্যায়ের নেতাদের সমর্থন-সহযোগিতার তথ্য মিলেছে বলেও জানিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সিটিটিসি।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ছেলে ডাক্তার রাফাত নতুন জঙ্গি সংগঠনে জড়িয়েছে এটা জেনেও তাকে সমর্থন দিয়ে গেছেন জামায়াতের আমির। পরে রাফাত সিলেট অঞ্চলের প্রধান সমন্বয়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। নতুন জঙ্গি সংগঠনটিতে জড়ানো অনেকেই শিবিরের সাথি ও কর্মী ছিলেন। তাদের হিজরতের খরচও দিয়েছেন জামায়াত আমির।
এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার (১৩ ডিসেম্বর) ভোরে রাজধানীর ভাটারা এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। পরে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানার সন্ত্রাস বিরোধী আইনে দায়ের হওয়া একটি মামলায় জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমানকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে হাজির করা হয়।
তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের প্রেক্ষিতে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদেশ দেন আদালত।
গত ৯ নভেম্বর জামায়াত আমিরের ছেলে ডা. রাফাত সাদিক সাইফুল্লাহকে গ্রেফতার করা হয়। তারও আগে আরও নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’য় জড়িয়ে ট্রেনিং ক্যাম্পে যাওয়ার জন্য সিলেট থেকে হিজরত করা তিন জঙ্গি সদস্যকে যাত্রাবাড়ি এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ডা. রাফাতকে সিলেট থেকে গ্রেফতার করা হয়।
ডাক্তার রাফাতের নেতৃত্বেই সর্বপ্রথম সিলেট থেকে ১১জন বান্দরবানে হিজরত করেন। সেখানে কুকিচিনে নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাতে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসেন। ডা. রাফাতের মতো বড় সহযোগী ও সংগঠক তাহহিয়াত। তাহিয়াতের নেতৃত্বে অনেকে হিজরত করে। সে কুকিচিনে প্রশিক্ষণ অবস্থায় ছিল।
ডা. রাফাতকে জিজ্ঞাসাবাদে সিটিটিসি জানতে পারে, রাফাতের বাবা জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমানের সঙ্গে কথা বলে, সম্মতিক্রমেই ২০২১ সালের জুন মাসে বান্দরবান থেকে ফিরে আসে ডাক্তার রাফাত। সে সময় তাকে চট্টগ্রাম থেকে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় ফিরিয়ে আনা হয়।
ডাক্তার শফিকুর রহমানের সিলেটের বাসায় বিভিন্ন সময় জঙ্গি সংগঠনের কার্যক্রম পরিচালনা করতো ডা. রাফাত। ১১ জনসহ ছেলে যে হিজরত করেছেন এর সবই জানতেন জামায়াত আমির। ক্ষেত্র বিশেষে তিনি সহযোগিতাও করেছেন। হিজরতের যাবতীয় ব্যয়ভারও তিনি বহন করেছিলেন।
পুলিশ বাহিনীর গ্রেফতার এড়াতে ছেলেকে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় সহযোগিতা করেছেন জামায়াত আমির। আরও কয়েকজনকে তিনি সহযোগিতা করেছেন বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
ছেলেসহ ১১ জনকে ডা. শফিকুর রহমান খরচ দিয়ে কুকিচিনের কাছে প্রশিক্ষণে পাঠিয়েছিলেন, এসব সম্পৃক্ততায় তাকে গ্রেফতার করে সিটিটিসি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নতুন জঙ্গি সংগঠনে জড়িত হয়ে সিলেট অঞ্চল থেকে হিজরত করা অধিকাংশেরই আগে শিবিরের সংশ্লিষ্টতা ছিল। নতুন জঙ্গি সংগঠন জড়িত শীর্ষ পর্যায়ের যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তারা জামায়াতে ইসলামী থেকে সহযোগিতা পেয়েছে বলে তথ্য মিলেছে।
এ থেকে ধারণা করা হচ্ছে জামায়াত ও শিবিরের সঙ্গে নতুন জঙ্গি সংগঠনের বোঝাপড়া থাকতে পারে। অথবা সম্পূর্ণরূপে সহযোগিতা করে থাকতে পারে।
সিটিটিসি প্রধান মো. আসাদুজ্জামান বলেন, গ্রেফতার ডা. রাফাত আগে ছাত্র শিবির করতেন। যাদের আমরা গ্রেফতার করেছি তারা সবাই ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র ট্রেনিং ক্যাম্পে যাওয়ার জন্য হিজরত করেছিলেন। আবার তারা প্রত্যেকেই শিবিরের সাথী ছিলেন।
রাফাতের সহযোগী আরিফও শিবিরের সাথী ছিলেন। যিনি নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’য় যোগ দেওয়ার আগে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সিলেট অঞ্চলের প্রধান সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করেছেন।
তার মাধ্যমে সিলেটের অনেক ছেলে আনসাল আল ইসলামে যুক্ত হয়। এরপর নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র দাওয়াত পেয়ে দলসহ যুক্ত হন।
সিসিটিসি প্রধান বলেন, নতুন জঙ্গি সংগঠনটির সঙ্গে জামায়াতের সরাসরি সংশ্লিষ্টতা ও সমর্থন ছিল কি-না তা জানতে এবং জামায়াত আমিরের সরাসরি সম্পৃক্ততার কারণেই তাকে আমরা গ্রেফতার করেছি।
জামায়াত আমির ছাড়া নতুন জঙ্গি সংগঠনের জামায়াতের অন্য কোনো নেতার সংশ্লিষ্টতা পেয়েছেন কি-না জানতে চাইলে সিটিটিসি প্রধান বলেন, জামায়াত আমিরের ছেলের নেতৃত্বেই একটি বড় অংশ হিজরত করেছে। যে সংগঠনের আমিরের ছেলে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে হিজরত করে সেই সংগঠনের অন্য আঞ্চলিক পর্যায়ের নেতাদের সমর্থন-সহযোগিতা ছিল বলে তথ্য পাওয়া গেছে। তাকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে এ বিষয়ে আরো বিস্তারিত জানা যাবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৩, ২০২২
পিএম/জেএইচ