ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

প্রভাবশালীর বাড়ির পাশে জমি কিনে বিপাকে প্রবাসী

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০২২
প্রভাবশালীর বাড়ির পাশে জমি কিনে বিপাকে প্রবাসী ছবি: বাংলানিউজ

লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুরের সদরে এক মালয়েশিয়া প্রবাসী ছয় শতাংশ জমি কিনে বিপাকে পড়েছেন। জামাল হোসেন নামে ওই প্রবাসীর কেনা জমির পাশে এক প্রভাবশালী পরিবারের বাড়ি হওয়ায় তাকে সেই জমিতে বাড়ি নির্মাণে বিভিন্নভাবে বাঁধা দেওয়া হচ্ছে।

জমিতে নিষেধাজ্ঞা জারির জন্য আদালতে একাধিক মামলা করে কাজ বন্ধ করিয়ে রেখেছেন মাহবুবুর রহমান নামে ওই প্রভাবশালী ব্যক্তি।

স্থানীয়দের অভিযোগ, মালয়েশিয়া প্রবাসী জামাল ও তার পরিবারের সদস্যরা অসহায় হওয়ার তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করারও সাহস পাচ্ছেন না। আর ভয়ে এলাকাবাসীও প্রকাশ্যে প্রভাবশালী পরিবারটির বিরুদ্ধে কথা বলতে পারছেন না।

এনিয়ে প্রভাবশালী পরিবারটির এক সদস্যদের সঙ্গে কথা বললে তিনি নিজেকে স্থানীয়ভাবে গণ্যমান্য ব্যক্তি হিসেবে দাবি করেন এবং এলাকার লোকজন তাদের সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলার সাহস পাচ্ছেন না জানিয়েছেন।

জানা গেছে, জেলার সদর উপজেলার দত্তপাড়া ইউনিয়নের বড়ালিয়া গ্রামের বাসিন্দা মৃত শামছুল হকের ছেলে জামাল হোসেন ২০১৮ সালের দিকে ৫৮ নম্বর বড়ালিয়া মৌজার হাল রিভিশন জরিপি ৬৫৪ নম্বর খতিয়ানভূক্ত ৩৯৪০ দাগে ছয় শতাংশ জমি ক্রয় করেন। জমির পূর্বের মালিক ছিলেন একই এলাকার চুন্নি লাল চক্রবর্তী। জমিটি রেজিস্ট্রি করে দেওয়ার আগেই তার মৃত্যু হলে ওই জমির রেজিস্ট্রি দেন তার ছেলে স্বপন চক্রবর্তী ও সমর চক্রবর্তী।

পরে কেনা সম্পত্তি ভোগ দখলে গিয়ে বসতবাড়ি করার উদ্দেশ্যে নিচু জমিটি বালি দিয়ে ভরাট করেন প্রবাসী জামাল। ওই জমির পার্শ্ববর্তী বাড়িটি স্থানীয় প্রভাবশালী মাহবুবুর রহমান ও তার পরিবারের অন্য সদস্যদের। জামালের কেনা জমিটি তারা কিনতে চেয়েছিলেন। তবে জামাল বসত বাড়ির জন্য জমিটি কিনে নেওয়ায় মাহবুবুর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যরা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন।

স্থানীয়রা বাংলানিউজকে জানায়, জামাল হোসেন ও তার পরিবারের অন্য সদস্যরা এক সময় মাহবুবুর রহমানদের বাড়িতে কাজ করতেন। জামাল প্রবাসে গিয়ে স্বাবলম্বী হয়ে মাহবুবুর রহমানদের বাড়ির পাশের জমি কেনায় সহজভাবে মেনে নিতে পারেননি তারা। এছাড়া তাদের বাড়ির পাশে জামালের বাড়ি নির্মাণ করাটাকে বেমানান মনে করছেন মাহবুবুর রহমান ও তার পরিবারের লোকজন। এজন্য বার বার মিথ্যা মামলা ও অভিযোগ এনে জামালকে হয়রানি করা হচ্ছে।

তাদের অভিযোগ, মাহবুবুর রহমান নামমাত্র মূল্য দিয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বী পরিবারের কাছ থেকে জমিটি কেনার পাঁয়তারা করে ব্যর্থ হয়েছেন। এখন জামালের কাছ থেকে জমিটি হাতিয় নিতে নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে। জামাল প্রবাসে থাকায় তার স্ত্রী শাহীন আক্তারকে বিবাদী করে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পৃথক দুটি মিস মামলা করেন মাহবুব ও তাদের পরিবারের সদস্য মুজাহিদুল ইসলাম। মামলা দুটি খারিজ করে দেওয়া হলেও জেলা ও দায়রা জজ আদালতে খারিজ আদেশ বাতিলের নিমিত্তে রিভিশনের আবেদন করেন মাহবুবুর রহমান।

ভুক্তভোগী জামাল হোসেনের অভিযোগ, বার বার মামলা দিয়ে তাকে হয়রানি করা হচ্ছে। এছাড়া জমিতে বাড়ি নির্মাণ করতে গেলে সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে বাঁধা দেন মাহবুব ও তার লোকজন। এতে ভয়ে এবং নিরুপায় হয়ে ওই জমিতে বাড়ি নির্মাণ কাজ বন্ধ রেখেছেন তিনি।

তিনি জানান, জমিটি কেনার পর বিভিন্নভাবে ওই জমি তার থেকে কিনে নিতে চেয়েছেন মাহবুবুর রহমান। এতে রাজি না হওয়ায় হুমকি এবং চরম হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে তাকে।  

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কথা হয় মাহবুবুর রহমানের ভাই হাবিবুর রহমানের সঙ্গে। তার কথাবার্তায় তিনি নিজেকে সাংবাদিকদের কাছে প্রভাবশালী হিসেবে উপস্থাপন করে বলেন, জামাল এবং স্থানীয়রা যেসব অভিযোগগুলো করেছেন সেগুলো মিথ্যা। এলাকার কোনো লোকজন সামনে এসে আমাদের বিরুদ্ধে এসব কথা বলতে পরবেন না। এলাকায় আমাদের একটা অবস্থান আছে।

জামালের সাথে জমি বিরোধের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি নিজেও স্বীকার করেন- ক্রয়সূত্রে জমিটির মালিক জামাল। তবে তাদের বাড়ির পাশে হওয়ায় জামালকে জমিটি কিনতে নিষেধ করেছেন তারা। কিন্তু জামাল নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জমিটি কিনে নেন। তারা ওই জমির উপর দিয়ে চলাচলের পথ বানাতে চেয়েছিলেন। তাই আদালতে হক সুপারের মামলা করেছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১২০৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০২২
এসআইএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।