ঢাকা, বুধবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

উচ্ছেদ অভিযানে বীর মুক্তিযোদ্ধার বাড়িতে লুটপাটের অভিযোগ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৪, ২০২৩
উচ্ছেদ অভিযানে বীর মুক্তিযোদ্ধার বাড়িতে লুটপাটের অভিযোগ

বরিশাল: বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার চাঁদপাশায় ফসলি জমিতে পানি সেচ ও নির্গমনের জন্য নালার জমি উদ্ধার করতে গিয়ে সৃষ্ট ঘটনায় সংবাদ সম্মেলন করেছেন সাবেক উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হালিম।

মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টায় শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত বরিশাল প্রেসক্লাবে এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হালিম বলেন, গত ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে বর্তমান ইউপি সদস্য (মেম্বার) মোসলেম উদ্দিনের পক্ষে কাজ না করায় তিনি আমার ও আমার পরিবারের ওপর ক্ষিপ্ত হন। পূর্ব শত্রুতার জের ধরে মেম্বার মোসলেম, সাইফুল আকন, আব্দুর সত্তার, আমিনুল ইসলামসহ আরও বেশ কয়েকজন আমার বসতবাড়ি ও সম্পত্তি জোরপূর্বক দখলের চেষ্টা চালায়, তখন আমি বাধা দিলে তারা চলে যায়। পরে একটি মামলা দায়ের করলে সেই মামলা উঠিয়ে নেওয়াসহ এক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন মোসলেম। অন্যথায় আমার বসতঘর ভাঙচুর ও আমাকে খুনের হুমকি দেন তিনি।

গত ৩ জানুয়ারি মোসলেম তার লোকজন নিয়ে আমার বসত বাড়ির উঠান, মুরগির ফার্ম ও বিভিন্ন গাছপালা কেটে ফেলাসহ ক্ষতি করেন। ওই সময় জাতীয় জরুরি সেবার  ৯৯৯ এ কল দিয়ে কোনোভাবে সম্পদ রক্ষা করি। পরে মোসলেম আমার জমির ওপর দিয়ে নালা কেটে দেওয়ার হুমকি দেন। এ বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে জানালে মোসলেমসহ বিরোধীরা আরও ক্ষুব্ধ হয়। এরপর তারা যেকোন উপায়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে কোনো কাগজপত্র যাচাই না করেই মেম্বারের কথায় আমার মালিকানার সম্পত্তিতে বেকু দিয়ে সোমবার (২৩ জানুয়ারি) সকাল থেকে নালা কাটা শুরু করে। এ সময় তারা আমার পৈতৃক ও ক্রয়কৃত সম্পত্তিতে থাকা আমার বসতবাড়ি ভাঙচুরই নয়, মিথ্যা অভিযোগ এনে আমার তিন ছেলেকে আটক করে নিয়ে যান। এর মধ্যে দুই ছেলেকে সাজা দিয়ে জেলেও পাঠায়।

তিনি বলেন, উচ্ছেদের বিষয়টি আগে থেকেই বিভিন্ন মাধ্যমে টের পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানা পুলিশকেও কাগজপত্র যাচাই করার কথা বলেছি।  কিন্তু তারা মেম্বারের কথার বাইরে শুরু থেকেই কাজ না করায় জেলা প্রশাসকসহ প্রশাসনের বিভিন্ন কর্তাদের কাছে গিয়ে তাদের অবহিত করেছি। জেলা প্রশাসক আগামী ২৬ জানুয়ারি বরিশালে এসে বিষয়টি দেখবেনও বলেছেন। জেলা প্রশাসক বরিশালে না আসা পর্যন্ত উচ্ছেদ হবে না, তবুও ইউএনও কার প্ররোচনায় আমার বসতবাড়ি ভাঙচুর করলো।

উচ্ছেদের সময় কোনো কথা বলতে গেলে ইউএনও কর্তৃক অশোভন আচরণের শিকার হয়েছেন বলে দাবি করে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হালিম বলেন, সমাজের কাছে আমাকে সন্ত্রাসী উপাধি দিতে বোমা হামলার কথা বলা হলেও ঘটনাস্থলে কোনো বোম ফোটেনি। বরং ইউএনওর উপস্থিতিতে ইউপি মেম্বার মোসলেম ও তার লোকজন আমার বাড়ির মধ্যে ঢুকে তাণ্ডব চালায় ও পটকা ফুটায়। ইউএনওর অভিযানের সময় আমাদের একটি রুমে আটকে রেখে সবার মোবাইল ফোন নিয়ে যাওয়া হয়, যা আমরা এখনও ফেরত পাইনি। সে সঙ্গে আমার বাসা থেকে স্বর্ণালংকার, পাঁচ লাখ টাকাসহ অনেক মূল্যবান জিনিস খোয়া গেছে। আমার ছেলেদের ও স্ত্রীকে মারধর করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে বীর মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী নাছিমা বেগম বলেন, যখন উচ্ছেদ শুরু হয় তখন আমার ছেলেরা সেখানে গেলে বাক-বিতাণ্ডার সৃষ্টি হয়। ওইসময় মেম্বারের লোকজন তাদের মারধর করে এবং একটি রুমের মধ্যে আটকে রাখেন।  ইউএনওর কাছে আমার স্বামী কথা বলতে গেলে তার সঙ্গে অশোভন আচরণ করেন এবং আমাকে পুলিশের সামনে থাপ্পড়ও দিছেন ইউএনও সাহেব।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুসরাত ফাতিমা বলেন, এখানে জমির মালিকানা নয়, জনস্বার্থে কাটা নালা নিয়ে ঘটনা। আর দীর্ঘদিন জনস্বার্থে ব্যবহৃত জমিতে ব্যক্তি মালিকানা প্রতিষ্ঠিত থাকে না। উচ্ছেদের সময় সেখানে কি হয়েছে সে বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, কৃষি দপ্তরের কর্মকর্তা, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিসহ প্রতক্ষ্যদর্শীরা ভালো জানেন। তারা যেসব অভিযোগ তুলেছেন তা ভিত্তিহীন। লুটপাটের ঘটনা ঘটলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ পুলিশ আমাকে জানাতেন।

বীর মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রীকে মারধরের বিষয়ে ইউএনও নুসরাত ফাতিমা বলেন, ওনার সঙ্গে আমার আলাদা কোনো কথাই হয়নি, যা হয়েছে জনসম্মুখে।

এদিকে ইউপি সদস্য মোসলেম উদ্দিনের উত্থাপিত অভিযোগের বিষয়ে জানতে তার মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।  

তবে বীর মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের পক্ষ থেকে তোলা অভিযোগের বিষয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, যেসব অভিযোগ তোলা হয়েছে এসব অভিযোগের কোনো সত্যতা নেই। একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে ঘটনাস্থলে আমি ছিলাম। আমাদের সঙ্গে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার, ডেপুটি কমান্ডারসহ অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তিরা ছিলেন। সেখানে কাউকে মারা হয়নি, লুটপাটও করা হয়নি। বরং আব্দুল হালিম ও তার পরিবার বাইরের লোকজন নিয়ে এসে প্রশাসনের ওপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করেছে। ফলে আমাকেও দৌড়ে পালাতে হয়েছে।  

তিনি বলেন, তারা ককটেল পর্যন্ত ফাটিয়েছে। স্থানীরাও ইট-পাটকেলের আঘাতের শিকার হয়েছেন। ঘটনাস্থলে পুলিশ না থাকলে আর স্থানীয়রা ক্ষুব্ধ হলে পরিস্থিতি অন্যদিকে যেতে পারতো। আর প্রশাসন তো জনস্বার্থে ব্যবহৃত নালাটি উদ্ধার করেছে। এ নালা ব্রিটিশ আমল থেকে ব্যবহৃত হচ্ছে। যার কিছু অংশ আব্দুল হালিমই ভরাট করেছেন। আমি চেয়ারম্যান হিসেবে উচ্ছেদের আগে বিভিন্নভাবে তাদের অনুরোধ করেছি, কোনো লাভ হয়নি।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৬ ঘণ্টা, জানুয়া‌রি ২৪, ২০২৩
এমএস/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।