ঢাকা, মঙ্গলবার, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ফসলের মাঠে অবৈধ ইটভাটা !

মো. নিজাম উদ্দিন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৮, ২০২৩
ফসলের মাঠে অবৈধ ইটভাটা !

লক্ষ্মীপুর: ফসলি জমির মাঠে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে ইটভাটা। তা থেকে নির্গত হচ্ছে কালো ধোঁয়া ও তাপ।

ভাটার চারপাশে থাকা ফসলি জমিতে সদ্য বেড়ে ওঠা সয়াবিন, গম, বাদাম গাছসহ বিভিন্ন রবি শষ্যের জন্য হুমকি হয়ে পড়েছে।

এ চিত্র দেখা যায়, লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চর রমিজ ইউনিয়নে। এ ইউনিয়নে রয়েছে ২৮টি ইটভাটা। যেগুলো গড়ে উঠছে অবৈধভাবে। নেই কোনো কাগজপত্র। বেশিরভাগ ভাটার আগুনের ধোঁয়া নির্গত হচ্ছে টিনের তৈরি চিমনি দিয়ে। আর পোড়ানো হচ্ছে জ্বালানি কাঠ।  

স্থানীয় কৃষক ও বাসিন্দারা জানান, একটি ইটভাটা থেকে অন্যটির দূরত্ব খুব কাছাকাছি। সবগুলো ভাটা স্থাপন করা হয়েছে ফসলি জমির মাঠে। ভাটার পাশেই বসতবাড়ি, হাটবাজার ও গাছপালার বাগান। ফসলি জমিতে ফসল ফলানো হলেও ভাটার জন্য ফসল উৎপাদনে শঙ্কিত কৃষকরা।

তারা আরও জানান, এ সব ইটভাটার কালো ধোঁয়া ও অতিরিক্ত তাপ একদিকে ফসলি জমির ক্ষতি করছে, অন্যদিকে গাছপালাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আর দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী। ভাটার মধ্যেই বসানো হয়েছে করাত কল। ইট তৈরির মাটি আনা হচ্ছে ফসলি জমি থেকে।  

প্রশাসন কয়েকটি ভাটায় একাধিকবার অভিযান চালিয়েও বন্ধ করতে পারেনি ভাটাগুলো। বেশ কয়েকবার এ সব ভাটার চিমনি ভেঙে ভাটার চুলো ও কাঁচা ইট বিনষ্টসহ পুরো ভাটা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। অভিযানের কয়েকদিন পর মালিকরা আবার ভাটার কার্যক্রম শুরু করেছে।  

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, গত ২৮ নভেম্বর চর রমিজ ইউনিয়নের চর আফজল গ্রামের চৌধুরী বাজার এলাকায় পাশাপাশি থাকা মেসার্স আমরী ব্রিক্স, মেসার্স আল্লার দান ব্রিক্স ও মেসার্স তিশা ব্রিক্স এ অভিযান চালিয়েছে উপজেলা প্রশাসন এবং পরিবেশ অধিদফতর। এ তিনটি ইটভাটা এস্কেভেটর (ভেকু) মেশিন দিয়ে ভাটার কাঁচা ইটসহ পুরোপুরি বিনষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। তারপরও থেমে নেই ভাটার কার্যক্রম। মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে আবার কার্যক্রম শুরু হয়ে  চলছে পুরোদমে।  

এর আগেও একই মাসের ১৬ নভেম্বর তিশা ব্রিক্স ও আমরী ব্রিক্সের উপজেলা প্রশাসন ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে এক লাখ করে দুই লাখ টাকা জরিমানা করে। ভেঙে দেওয়া হয় চিমনীগুলো। চুলোতে পানি নিক্ষেপ করে আগুন নিভিয়ে দেওয়া হয়। কয়েকদিনের ব্যবধানে আবার শুরু তাদের কার্যক্রম।

গত বছরও প্রশাসন অভিযান চালিয়েছে ভাটাগুলোতে। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি চালানো অভিযানে আমরী ব্রিক্সে এক লাখ, ২৮ ফেব্রুয়ারি তিশা ব্রিক্সে ৫০ হাজার টাকা এবং ৩০ মার্চ আল্লার দান ব্রিক্সসহ চারটি ভাটায় ৪ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। চলতি বছর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে আরও বেশ কয়েকটি ইটভাটায় জরিমানা করা হয়।

গত ২০ নভেম্বর উপজেলার চর সেকান্তর এলাকার মেঘনা ব্রিক্সের ব্যবস্থাপক মো. মেহেরাজকে এক মাসের কারাদণ্ড এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানা হয়। অর্থদণ্ড এবং কারাদণ্ড দিয়েও এখানকার ইটভাটার মালিকদের কোনোভাবে থামানো যাচ্ছে না।  

বার বার অভিযান চালিয়ে ভাটা বন্ধ করে দেওয়ার পরেও পুনরায় ভাটা চালুর বিষয়ে কথা হয় মেসার্স আমরী বিক্সের মালিক আমির হোসেন মাসুদের সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, দুই কোটি টাকা খরচ করে ভাটা দিয়েছি। শ্রমিক বাবদ মাঝিদের হাতে টাকা দিয়ে দিয়েছি। ভাটা বন্ধ রাখলে পুরোপুরি লোকসানে পড়বো। শ্রমিকদের কাছ থেকে টাকা ফেরত পাব না। তাই প্রশাসন ভাটা বন্ধ করে দিলেও পুনরায় চালু করি। এতে কিছুটা লোকসানে পড়তে হয়।  

এ বিষয়ে রামগতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম শান্তুনু চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, অবৈধ ইটভাটাতে অভিযান চানালো হয়েছে। জেল-জরিমানাসহ ভাটা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এরপরেও যদি ভাটার কার্যক্রম চলে, তাহলে আবারও অভিযান চালানো হবে। আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৮, ২০২৩
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।