ঢাকা: রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে প্রেমিকের বাসায় লামিয়া আলম (২১) নামে এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ সদস্য প্রেমিক বিয়ের দাবি না মানায় তিনি ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন বলে দাবি তার পরিবারের।
বুধবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টার দিকে যাত্রাবাড়ীর মাতুয়াইলে হাজী আব্দুল লতিফ ভুঁইয়া কলেজের পাশে একটি বাড়ির ৫ম তলায় এই ঘটনা ঘটে।
অচেতন অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে দায়িত্বরত চিকিৎসক দুপুরের দিকে তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এর পরই সোহাগ নামে অভিযুক্ত ওই পুলিশ সদস্য হাসপাতাল থেকে সটকে পড়েন।
জানা গেছে, গাজীপুরের কাপাশিয়া থানার তরগাঁও গ্রামের বাসিন্দা আলম হোসেনের দুই মেয়ের মধ্যে বড় লামিয়া আলম। ধানমন্ডির ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন তিনি।
মৃতের মা মঞ্জু বেগম জানান, তারা গ্রামে থাকেন। লামিয়া ধানমন্ডিতে থাকেন। পুলিশ সদস্য সোহাগের বাড়ি মানিকগঞ্জ জেলায়। তার স্ত্রী ও একটি সন্তান রয়েছে। চার বছর আগে লামিয়া গাজীপুরে লেখাপড়া করার সময় সেখানে সোহাগের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক হয়। সম্প্রতি বিয়ে দাবি করে আসছিল লামিয়া। গত ৯ ফেব্রুয়ারি লামিয়া মাতুয়াইলে পুলিশ সদস্য সোহাগের বাসায় গিয়ে ঘুমের ওষুধ সেবন করে। তখন সোহাগই তাকে হাসপাতাল থেকে স্টোম্যাক ওয়াশ করিয়ে মুন্সিগঞ্জে লামিয়ার নানা বাড়িতে রেখে আসেন।
মঞ্জু বেগম আরও জানান, এই খবর শুনে তিনি ছোট মেয়েকে নিয়ে গাজীপুর থেকে মুন্সিগঞ্জে মেয়ের কাছে যান। সেখান থেকে লামিয়ার দাবির প্রেক্ষিতে রোববার (১২ ফেব্রুয়ারি) মুন্সিগঞ্জ থেকে মাতুয়াইলে সোহাগের বাসায় আসেন তারা। আজ (১৫ ফেব্রুয়ারি) সেখান থেকে গাজীপুর চলে যাওয়ার কথা ছিল তাদের। তবে সকালে সোহাগ কর্মস্থলে চলে যাবার পর ফোনে তার সঙ্গে লামিয়ার রাগারাগি হয়। এক পর্যায়ে লামিয়া রুমের দরজা বন্ধ করে দেন। তখন অনেক ডাকাডাকি করলেও তিনি দরজা খোলেননি। অনেকক্ষণ ধাক্কাতে থাকলে একসময় দরজা খুলে যায়। তখন তারা দেখতে পান ফ্যানের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে ফাঁস লাগিয়ে ঝুলছেন লামিয়া। সঙ্গে সঙ্গে ঝুলন্ত লামিয়াকে নিচে নামানো হয়। এরপর সোহাগকে খবর দিলে তিনি এসে তাকে ঢামেকে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
চিকিৎসকের বরাত দিয়ে ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. বাচ্চু মিয়া লামিয়ার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, ঘটনাটি সংশ্লিষ্ট থানায় জানানো হয়েছে।
এদিকে, লামিয়াকে মৃত ঘোষণার পরই পুলিশ সদস্য সোহাগ হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যান। তবে তার বর্তমান কর্মস্থল সম্পর্কে কিছু জানাতে পারেননি মৃতের মা ও ছোট বোন।
পুলিশের পোশাক পরা এক পুলিশ সদস্য লামিয়াকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন- এ বিষয়টি একাধিক সূত্র জানিয়েছেন।
যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মফিজুল আলম জানান, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী আত্মহত্যা করেছেন- এরকম একটি সংবাদ পাওয়া গেছে। বিস্তারিত ঘটনা জানতে পুলিশ কাজ করছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২৩
এজেডএস/এনএস