ঢাকা: প্রখ্যাত পরমাণু বিজ্ঞানী প্রয়াত ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া ক্ষমতার খুব কাছাকাছি থেকেও সাদামাটা জীবনযাপন করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।
শনিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) প্রখ্যাত পরমাণু বিজ্ঞানী প্রয়াত ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার ৮১তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা ও তার কর্মজীবন অবলম্বনে রচিত ‘বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার কর্মময় জীবন নামক গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া ব্যক্তি জীবনে কতটা নির্লোভ ও নিরহংকারী ছিলেন তা নতুন করে বলার কিছু নেই। ক্ষমতার খুব কাছাকাছি থেকেও তিনি ছিলেন সাদামাটা এক মানুষ। তার জীবন ও কর্মকে নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছে দিতে হবে।
তিনি বলেন, ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়াকে নিয়ে লেখা গ্রন্থটির লেখক আসাদুজ্জামানকে আমি অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানাই, কারণ তিনি এমন একজন মানুষ সম্পর্কে একটি তথ্যবহুল গ্রন্থ রচনা করেছেন। এ বইটির মাধ্যমে আমরা অনেক অজানা তথ্য জানতে পেরেছি। ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার জীবনের পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু ও দেশের অনেক ইতিহাস এ গ্রন্থে উঠে এসেছে।
তিনি আরও বলেন, ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া রংপুরের পীরগঞ্জের একটি মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি তার কাজ দিয়ে পীরগঞ্জের মানুষকে গর্বিত করেছেন। এমনকি বহির্বিশ্বের কাছেও তিনি বাংলাদেশকে গর্বিত করেছেন তার বিজ্ঞান চর্চার মধ্য দিয়ে। তিনি নিভৃত এক পল্লী থেকে উঠে এসেছেন নিজের যোগ্যতায়। সব চড়াই-উতরায় পেরিয়ে তিনি নিজের অবস্থান তৈরি করেছেন। পরবর্তী জীবনেও তিনি তার সেই অবস্থান ধরে রেখেছেন।
বিজ্ঞানের প্রতি ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া ঝোঁক ছিল উল্লেখ করে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, তিনি পদার্থ বিজ্ঞানের মতো একটি কঠিন বিষয় বেছে নিয়েছেন। তিনি সেই চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করে দেশ ও দেশের সীমানা ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে একজন খ্যাতিনামা পরমাণু বিজ্ঞানী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তিনি বিষয় ভিত্তিক অনেক গ্রন্থ লিখে গেছেন। যা এখন বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ্যপুস্তক হিসেবে পড়ানো হয়।
তিনি বলেন, ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া একদিকে যেমন নিজের মেধার চর্চা করে নিজেকে পরমাণু বিজ্ঞানী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন, তেমনি রাজনীতির প্রতিও তার একটি সুগভীর আগ্রহ ছিল। ১৯৬১ সালে তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত হন। সেখান থেকে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা হলে তিনি বঙ্গবন্ধুর স্নেহে রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে উঠেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। এর মধ্য দিয়ে তিনি বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সঙ্গে খুব ঘনিষ্ট ও নীবিড় সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। যে কারণে জাতির পিতার সব ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে তাকেও যেতে হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া ওই পরিবারটিকে আগলে রাখেন। ৭৫ পরবর্তী সময়ে কীভাবে তার পরিবারকে নিয় ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে গেছেন সবই এ বইটিতে আছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচকের বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, আজকে এমন একজন মানুষকে নিয়ে আমরা আলোচনা করছি, যিনি একাধারে একজন মেধাবী, প্রখ্যাত পরমাণু বিজ্ঞানী, দায়িত্ববান স্বামী, নিষ্ঠাবান, বঙ্গবন্ধুর পরিবারের জামাতা ছিলেন। বিজ্ঞানের পাশাপাশি তিনি সমাজ ও রাজনীতি নিয়ে আলোচনায় ছিলেন।
‘বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার কর্মময় জীবন’ নামক গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ড. শহীদ হোসাইন, বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যান ডা. অশোক কুমার পাল, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আ. ন. ম আল ফিরোজ প্রমুখ।
‘বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার কর্মময় জীবন' গ্রন্থটি লিখেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইডি গবেষক আসাদুজ্জামান। বইটি প্রকাশ করেছে আগামী প্রকাশনী।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২৩
এসসি/আরআইএস