নীলফামারী: নীলফামারীর সৈয়দপুরে সোনার বার উদ্ধারের পর আত্মসাতের চেষ্টায় জড়িত থাকার অভিযোগে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সিপাহিকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
সোমবার (২০ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে পাঁচদিনের রিমান্ড চেয়ে পুলিশ তাকে আদালতে পাঠালে আদালত রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগে রোববার বিকেলে সৈয়দপুর থানা চত্বর থেকে তাকে গ্রেফতার করে সৈয়দপুর থানা পুলিশ। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সৈয়দপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাইফুল ইসলাম।
ওই সিপাহির নাম মেহেদী হাসান (৩২)। তিনি দিনাজপুর সদরের শিবপুর মোল্লাপাড়ার হবিবর রহমানের ছেলে। মেহেদী নীলফামারী মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে চাকরি করেন।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত ১১ ফেব্রুয়ারি সকালে নীলফামারীর জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সদস্যরা গোপন সূত্রে মাদকের বড় একটি চালান আসার খবর পেয়ে সৈয়দপুর-রংপুর মহাসড়কের কামারপুকুর এলাকায় গিয়ে অবস্থান নেয়। এসময় তারা সৈয়দপুর-রংপুর মহাসড়ক হয়ে আসা দূরপাল্লার বাসগুলোতে অভিযান চালান। অভিযানে ঢাকা থেকে পঞ্চগড়গামী নাবিল পরিবহনের একটি কোচে তল্লাশি চালিয়ে কোচের একই টিকিটে দুইটি আসনের (নম্বর: ই-৩ ও ৪) দুই যাত্রীর মধ্যে আব্দুর রহিম নামে একজনের দেহ তল্লাশি করে ১৫টি স্বর্ণের বার উদ্ধার করা হয়। সেই সঙ্গে তাদের আটক করে থানায় নেওয়া হয়। পরে বেলা সোয়া ১টার দিকে একজন প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে উদ্ধার হওয়া ১৫টি স্বর্ণের বার স্থানীয় সৈয়দপুর গোল্ড হল মার্ক সেন্টারে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়।
এরপর বিকেলে আটক হওয়া অপর যাত্রী মোহাম্মদ উল্লাহর কাছ থেকে আরও পাঁচটি সোনার বার উদ্ধার হয়েছে বলে জানায় মাদকদ্রব্য অভিযান পরিচালনাকারী দল। পরে দ্বিতীয় দফায় উদ্ধার হওয়া পাঁচটি সোনার বার বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে সৈয়দপুর গোল্ড হল মার্ক সেন্টারে এনে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। আর উদ্ধারকৃত প্রতিটি স্বর্ণের বারের ওজন ১০ ভরি এবং ২০টি স্বর্ণের বারের মোট ওজন ২০০ ভরি। দুই দফায় উদ্ধারকৃত সোনার বারগুলো পরীক্ষায় ২৪ ক্যারেটের এবং যার মূল্য এক কোটি ৯০ লাখ টাকা উল্লেখ করে আটক দুজনকে আসামি করে গত ১২ ফেব্রুয়ারি রাত ১২টা ১০ মিনিটে সৈয়দপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়।
নীলফামারী মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিদর্শক মো. শফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ধারায় মামলাটি দায়ের করেন। একই কোচ থেকে দুই যাত্রী একই সময়ে আটক হলেও দুই দফায় সোনার বার উদ্ধার এবং সংখ্যায় কমবেশি দেখানোর ঘটনায় ধূম্রজালের সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে সংবাদকর্মীসহ স্থানীয়দের মনেও সন্দেহ দেখা দেয়।
সৈয়দপুর থানা পুলিশ বলছে, মামলা দায়ের করার পর সৈয়দপুর পুলিশ ঘটনাটির তদন্ত শুরু করে। মামলা তদন্তে গিয়ে পুলিশ ওই দিনের সোনার বার উদ্ধারের প্রকৃত ঘটনা উদ্ঘাটন করতে সক্ষম হয়। তদন্তে বেরিয়ে আসে মাদকবিরোধী অভিযানকারী দলের একজন সদস্য হিসেবে সেখানে দায়িত্বরত ছিলেন নীলফামারী মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সিপাহি মেহেদী হাসান। আর অভিযানকালে দূরপাল্লার নাবিল পরিবহনের একটি কোচ থেকে আটক আব্দুর রহিমের দেহ তল্লাশি করে ১৫টি সোনার বার উদ্ধার করা হয়। কিন্তু ওই সময় আটক অপর যাত্রী মোহাম্মদ উল্লাহর দেহ তল্লাশি করে কোনো সোনার বার উদ্ধার হয়নি। এ অবস্থায় অভিযানকারী দল আটক আব্দুর রহিম ও মোহাম্মদ উল্লাহকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সরকারি গাড়িতে বসিয়ে রেখে পাহারা দেওয়ার জন্য সিপাহি তথা গাড়ির চালক মেহেদী হাসানের হেফাজতে দেন। এসময় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অন্যান্য সদস্যরা সৈয়দপুর-রংপুর মহাসড়কে দাঁড়ানো বাসে তল্লাশি চালাতে থাকেন। আর এ সুযোগে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের গাড়িচালক মেহেদী হাসান আটক মোহাম্মদ উল্লাহর দেহ তল্লাশি করে ১০টি সোনার বার উদ্ধার করে নিজের কাছে রেখে দেন। এসময় সিপাই মেহেদী হাসান আটক দুজনকে বলেন, ১০টি সোনার বারের কথা কাউকেই বলা যাবে না এবং মাল বেশি দেখানো হলে মামলা কঠিন হবে। এসময় তিনি আরও বলেন, স্বর্ণ যত কম, শাস্তি তত কম হবে।
এ বিষয়ে সৈয়দপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, উদ্ধার অভিযানের সদস্য হিসেবে সোনার বার আত্মসাতের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে রোববার বিকেলে সৈয়দপুর থানা চত্বর থেকে নীলফামারী মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সিপাহি মেহেদী হাসানকে গ্রেফতার করা হয়। সোমবার তার পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। তার নেওয়া ১০টি স্বর্ণের বার উদ্ধারে পুলিশি তৎপরতা চলছে।
বাংলাদেশ সময়: ২০১৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২৩
এসআই