বরিশাল: সম্প্রতি বরিশালে বিপুল পরিমাণে বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য জব্দ করছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট। জব্দকৃত মাদকের মধ্যে গাঁজার পরিমাণ বিগত সময়ের থেকে অনেক বেশি বলে জানিয়েছে বাহিনীগুলো।
সম্প্রতি চালানো অভিযানগুলোতে বিপুল পরিমাণ মাদক জব্দ হওয়াকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের সফলতা হিসেবে দেখলেও মাদক বিরোধী কার্যক্রমে জড়িতরা বলছেন, বরিশাল অঞ্চলে মাদকের সরবরাহ ও চাহিদা বৃদ্ধির কথা। তাই আরও জোরদার অভিযান অব্যাহত রাখার পাশাপাশি সমাজের সবাইকে মাদক বিরোধী কার্যক্রমে জোরালো ভূমিকা রাখার আহ্বান তাদের।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, পুলিশ, র্যাব ও নৌ-পুলিশের সাম্প্রতিক অভিযানের তথ্য অনুযায়ী, গত ৯০ দিনে বরিশাল বিভাগে চালানো অভিযানের অর্ধশতই ছিল বেশ আলোচিত। আগে যেসব অভিযানে ১০০ পিসের কম ইয়াবা, কেজির নিচে গাঁজা জব্দ করা হয়েছে, সেখানে এই তিন মাসে কেজির পর কেজি গাঁজা, কয়েক হাজার পিস ইয়াবা, প্রায় হাজার পিস বিয়ার ও ফেন্সিডিল জব্দ করা হয়েছে।
১৩ ও ১৪ ফেব্রুয়ারিতে ৪৫ কেজি গাঁজা ও ৮৫০ পিস বিদেশি বিয়ারের ক্যানসহ ৫ জনকে আটক করা হয়েছে। এর আগের দুই দিন বরগুনা ও ঝালকাঠিতে ৪ কেজি গাঁজাসহ ২ জনকে আটক করা হয়েছে। এর মধ্যে একজন বরখাস্ত পুলিশ সদস্যও ছিলেন।
এর আগে গত ৫ ফেব্রুয়ারি বরিশালে ৩৫ কেজি গাঁজাসহ দুজন এবং ৩ ফেব্রুয়ারি ৫ কেজি গাঁজাসহ একজন ও ৩ জানুয়ারি ১৫ কেজি গাঁজাসহ ৫ মাদক কারবারিকে আটক করা হয়।
এছাড়া ৩ ডিসেম্বর ১০ কেজি গাঁজাসহ এক নারী, ১২ নভেম্বর ২০ কেজি গাঁজাসহ এক যুবক, ১০ ও ১১ নভেম্বর ১৮ কেজি গাঁজাসহ ৬ জনকে আটক করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
গত বছরের ১৮ নভেম্বর সাড়ে ৩ হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেটসহ দুজনকে আটক করা হয়। এরপর চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি ৫ হাজার পিস ইয়াবাসহ এক দম্পতি ও ৫ জানুয়ারি ১০ হাজার পিস ইয়াবাসহ এক যুবককে আটক করেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
এসব অভিযানে মাদক জব্দের পরিমাণকে সফলতা হিসেবে দেখছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের গোয়েন্দা বিভাগের সহকারী পরিচালক এনায়েত হোসেন বলেন, সম্প্রতি আমরা যেসব অভিযান চালাচ্ছি সবগুলোকে সফল হিসেবে দেখছি। মাদকগুলো আগে থেকে জব্দ করতে পারায় সমাজে এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে না।
তিনি বলেন, আমাদের বেশির ভাগ অভিযানই সোর্সের সঠিক তথ্যের কারণে সফল হচ্ছে। সেক্ষেত্রে আমরা সোর্স ডেভেলপমেন্টে জোর দিয়েছি।
১০ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ানের অধিনায়ক (অতিরিক্ত ডিআইজি) মোয়াজ্জেম হোসেন ভূঞা বলেন, সোর্স ডেভেলপমেন্টের পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারিও বাড়ানো হয়েছে। এর ফলে মাদক বিরোধী অভিযানগুলো সফল হচ্ছে, আবার অভিযানে জব্দ হওয়া মাদকের পরিমাণ আগের চেয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই সাথে অভিযানগুলোর ফলে আমরা দেখছি, সম্প্রতি বরিশালে প্রচুর গাঁজা আসছে এবং মাদক আনতে প্রাইভেটকার ব্যবহারসহ নতুন নতুন পন্থা ব্যবহার করছে কারবারিরা। মাদক নির্মূলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি সমাজের প্রতিটি নাগরিককে আরো সচেতন হতে হবে।
বিগত দিনের থেকে সম্প্রতি মাদক উদ্ধারের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে মাদক বিরোধী কার্যক্রমের অন্যতম সংগঠক গোলাম মর্তুজা জুয়েল বাংলানিউজকে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিটা হতে পারে ডিমান্ড রিঅ্যাকশন। আগে চাহিদা হ্রাস করতে ব্যর্থ হওয়ায় এখন চাহিদা বেড়েছে। অর্থাৎ বিগত সময়ে অভিযান পরিচালনা করলেও মাদকের চাহিদা হ্রাস করতে পারেনি। সেটা হলে এখন এত বড় বড় আকারের চালান ধরা পড়তো না। তবে এখন যেভাবে অভিযান চলছে, এটা ভবিষ্যতে বজায় রাখার পাশাপাশি বৃদ্ধি করলে স্থানীয়ভাবে মাদকের চাহিদা কমে যাবে।
বরিশালের নিউ লাইফ মাদক নিরাময় কেন্দ্রের এই ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, যারা এখন মাদকে আসক্ত রয়েছে তাদের সুন্দর জীবন ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য চিকিৎসার আওতায় আনতে হবে। আর অভিযানের বিকল্প তো নেই। তবে যেহেতু মাদকগুলো দেশের অভ্যন্তরে তৈরি হয় না, তাই সীমান্তে দায়িত্বরতদের আরও সক্রিয় হতে হবে। দেশের ভেতরে মাদক ঢুকতে না পারলে এত অভিযানেরও প্রয়োজন হবে না, প্রয়োজন হবে না চিকিৎসারও।
তামাক বিরোধী সংগঠন অডিশাস-এর সভাপতি সাইদুর রহমান পান্থ বলেন, বিগত দিনের হিসেব কষলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে হয়তো ৩০ শতাংশ মাদক ধরা পড়তো। সেই হিসেবে যদি ৭০ শতাংশ মাদক থেকে যায় বাইরে, তাহলে বর্তমান অবস্থা তো ভয়ানক। তাই কারা এগুলো নিয়ে আসছে এবং কাদের কাছে যাচ্ছে, এক কথায় নেপথ্যে কারা রয়েছে তাদের আইনের আওতায় আনা উচিত। আর আমাদের হিসেব অনুযায়ী তামাক সেবন রোধ করতে হবে। কারণ সিগারেট যে ধরে না, তাদের বেশির ভাগই মাদকাসক্ত হয় না। তাই তামাক বন্ধ করতে পারলে মাদকের ভয়াবহতাও কমবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০২৩
এমএস/এমজেএফ