খুলনা: খুলনা জেলায় ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে ঘুষ ও সুপারিশ ছাড়া ৮৮ জনের চাকরি হয়েছে। কোনো প্রকার আর্থিক লেনদেন ছাড়াই চাকরি পেয়ে খুশি হয়েছেন নিয়োগপ্রাপ্তরা।
চাকরি নয় সেবা এ শিরোনামকে সামনে রেখে দেশ সেবায় অগ্রগামী তরুণদের সংগ্রহ ও সুযোগ প্রদান করার জন্য বাংলাদেশ পুলিশ যে মিশনে নেমেছে তারই অংশ হিসেবে খুলনা জেলায় সম্পন্ন হলো ২০২২ ডিসেম্বরের ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল নিয়োগ।
যেকোনো চাপ, তদবির আর দুর্নীতিবাজ প্রতারক চক্রের বলয় ছিন্ন করে বিগত দুইবারের মতো এবারও একটি স্বচ্ছ দুর্নীতি মুক্ত ও নিরপেক্ষ নিয়োগের জন্য জেলা পুলিশ তৎপর ছিল। খুলনা জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুব হাসান (বিপিএম) আগে থেকেই এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত ছিলেন বলে জানান। এ কারণে তিনি তার দক্ষ টিমের সাহায্যে মাঠে যেমন আগে থেকেই খুলনা জেলার অধিবাসীদের সতর্ক এবং উদ্বুদ্ধ করেছিলেন একই সঙ্গে সাইবার স্পেসে ও মাঠেও গোয়েন্দা তৎপরতা চালু রেখেছিলেন। যাতে এ নিয়োগকে কেন্দ্র করে কোনো প্রতারক চক্র বা স্বার্থান্বেষী মহল কাউকে ক্ষতিগ্রস্ত বা ভিকটিমে পরিণত করতে না পারে।
আর এভাবেই সম্পূর্ণ স্বচ্ছ ও আধুনিক একটি পদ্ধতিতে খুলনায় তিনটি কঠোর ধাপ পেরিয়ে প্রায় চার হাজার প্রার্থীর ঘাম, শ্রম ও মেধার পরীক্ষা অতিক্রম করে নিয়োগের সুপারিশ প্রাপ্ত হলেন ৮৮ জন নারী ও পুরুষ প্রার্থী। গত ৫ ৬ ৭ ফেব্রুয়ারি মাঠের বিভিন্ন পরীক্ষা যেমন দেড় হাজার মিটার দৌড়, পুশ আপ রোপিং, হাই ও লং জাম্প ইত্যাদি শ্রমসাধ্য মাঠ পরীক্ষা খুলনা জেলা পুলিশের দক্ষ টিম পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুব হাসানের নেতৃত্বে স্বচ্ছতার সঙ্গে শেষ করেন। এরপর এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে প্রার্থীদের লিখিত পরীক্ষা গ্রহণ করা হয় গত ১৫ ফেব্রুয়ারি।
পুলিশ হেডকোয়ার্টারের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রায় ১০০০ প্রার্থীর লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। লিখিত পরীক্ষার খাতা কোডিং করে পুলিশ হেডকোয়ার্টারে পাঠানো হয় এবং পুলিশ হেডকোয়ার্টার খাতা দেখে খুলনা জেলায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের খাতা পাঠায়। উত্তীর্ণ প্রার্থীদের মধ্যে থেকে ২৮৪ জনের ভাইভা পরীক্ষা পুলিশ লাইনস শিরোমণিতে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হয় যা পুলিশ হেডকোয়ার্টারের নির্ধারিত বোর্ডে গ্রহণ করা হয়। ভাইবা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন ৮৮ জন যাদের মেডিকেল ও ভেরিফিকেশনের পর চূড়ান্তভাবে নিয়োগ প্রদান করা হবে। প্রতিবেদন প্রস্তুতকালে কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কেউ দিনমজুর, কেউবা চা দোকানদারের ছেলে বা বাস কন্ডাক্টারের ছেলে কেউ মৃত বাবার সন্তান যার মা ক্ষেত-খামারে কাজ করে সন্তান বড় করেছেন। আর কেউ বা ভ্যানচালক বাবার মেয়ে তারা সবাই অশ্রুসিক্ত নয়নে সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করছেন। আর ভাগ্যের এ অবিশ্বাস্য মোড়ের জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছেন জেলা পুলিশ খুলনা তথা সমগ্র বাংলাদেশ পুলিশকে।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুব হাসান বলেন, চাকরি পাওয়ার জন্য প্রার্থীরা অনেক সময় সুপারিশ এবং ঘুষ দেওয়ার চিন্তা করেন। এজন্য বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগও করতে থাকেন। তখন চাকরিপ্রার্থীদের দুর্বলতার সুযোগ নেয় দালালরা। তারা চাকরি দেওয়ার নাম করে প্রার্থীদের সঙ্গে অবৈধ অর্থ লেনদেন করেন। পরবর্তীতে নিজ যোগ্যতায় চাকরি পেলেও ভাবেন হয়তো অবৈধ অর্থ লেনদেনের কারণেই চাকরি পেয়েছেন। তবে এসব বিষয় মাথায় রেখে তৃতীয়বারের মতো নিয়োগ দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করা হয়। যে কারণে ঘুষ ও সুপারিশ ছাড়া ৮৮ জনের পুলিশে চাকরি হয়েছে।
এ স্বচ্ছ ও দুর্নীতি মুক্ত কনস্টেবল নিয়োগ পরীক্ষা গ্রহণে সমর্থ হওয়ায় খুলনাবাসীকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি জনগণের পাশে থাকার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৮০৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২৩
এমআরএম/জেএইচ