ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

বাইক চলাচলের খসড়া নীতিমালার বিরুদ্ধে বাইকারদের মানববন্ধন

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩৮ ঘণ্টা, মার্চ ১, ২০২৩
বাইক চলাচলের খসড়া নীতিমালার বিরুদ্ধে বাইকারদের মানববন্ধন

ঢাকা: মোটরসাইকেল চলাচল নীতিমালা–২০২৩ অবাস্তব ও জনবিরোধী দাবি করে এই নীতিমালার বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেছেন রাজধানীর মোটরবাইক চালকরা। ৩০ কি.মি. কম গতিতে বাইক চলাচল, মহাসড়কে দুইজনের বেশি বাইক চালানো যাবে  না- এমন বিধানের তীব্র সমালোচনা করেছেন তারা।

বুধবার (১ মার্চ) বিকেলে রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউয়ে এক মানববন্ধন থেকে তারা এ দাবি জানান।

দাবি আদায়ে ৫ মার্চ বিআরটিএ চেয়ারম্যান বরাবর স্মারকলিপি দেওয়ার কথা জানিয়ে তারা বলেছেন, প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বরাবরও স্মারকলিপি দেওয়া  হবে। তিনি সবকিছু পর্যালোচনা করে যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত নেবেন বলে আমরা আশা করি। যা সমগ্র তরুণ সমাজ তথা তরুণ উদ্যোক্তাদের দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে উদ্‌বুদ্ধ করবে।

আয়োজকদের পক্ষ থেকে শেখ মামুন নামে এক বাইকার বলেন, সরকারের সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ মোটরসাইকেল চলাচল নীতিমালার খসড়া তৈরি করেছে বলে গণমাধ্যমে আমরা দেখেছি। এতে বলা হয়েছে, শহরে মোটরসাইকেল ৩০ কিলোমিটারের বেশি গতিতে চালানো যাবে না। মহাসড়কে ১২৬ সিসির নিচে ক্ষমতার মোটরসাইকেল চলাচল করতে পারবে না। মহাসড়কে আরোহী পরিবহন করা যাবে না। ঈদ-পূজার আগে-পরে ১০ দিন মহাসড়কে মোটরসাইকেল চলাচল করতে পারবে না। এই নীতিমালা গ্রহণযোগ্য না। আমরা মনে করি, মোটরসাইকেল চলাচলে নিয়ন্ত্রণের নামে তারা দেশের অর্থনীতি, অগ্রগতির গতি রোধ করতে চাইছে। এই নীতিমালা অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে।

মোটরসাইকেল চালকদের জন্য নীতিমালাটি ‘সাংঘর্ষিক ও অবাস্তব’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, সড়কে সাইকেল বা রিকশার গতি ঘণ্টায় ২০-২৫ কিলোমিটার। মোটরসাইকেলের মতো একটি বাহনের সর্বোচ্চ গতি ৩০ কিলোমিটার কখনই গ্রহণযোগ্য নয়। ঢাকার চালকরা মোটরসাইকেল ব্যবহার করেন সময় বাঁচানোর জন্য। এখানে গতিসীমা ৩০ কিলোমিটার হলে লাইসেন্স করে ও বছর বছর কর দিয়ে মোটরসাইকেল চালানোর কোনো যুক্তি নেই।

বাইকাররা বলছেন, উন্নত বিশ্বের কোথাও মহাসড়কে ৬০ কিলোমিটার গতিতে মোটরসাইকেল চালনোর কোনো নজির নেই। মহাসড়কে কম গতিতে যানবাহন চালালে সেদেশের কর্মকর্তারা সেটিকে ট্রাফিকের জন্য একটি বিপদ মনে করেন। কারণ তা অন্য যানবাহনের জন্য বিভ্রান্তিকর হতে পারে। তাছাড়া মহাসড়কে অতিরিক্ত কম গতি মোটরসাইকেল চালকদের অন্য যানবাহনের মাধ্যমে দুর্ঘটনার প্রবণতা আরও বাড়িয়ে দেবে।

তারা বলছেন, মোটরসাইকেল ব্যবহারকারীদের একটি বড় অংশই তরুণ উদ্যোক্তা, যারা সাধারণত ১২৫ সিসি অথবা তার কম সিসির ক্ষমতা সম্পন্ন মোটরসাইকেল ব্যবহার করে। সেক্ষেত্রে মহাসড়কে যদি ১২৫ সিসি ক্ষমতার মোটরসাইকেল চলতে দেওয়া না হয় তাহলে তা তরুণ উদ্যোক্তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করবে, যা আমাদের অর্থনীতির অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করবে।

এসময় বাইকাররা বলেন, বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে ঈদ ও অন্যান্য উৎসবে অর্থনীতির চাকা অনেক গতিশীল থাকে সেক্ষেত্রে যদি এই সময় মোটরসাইকেল চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়, তবে তা সামগ্রিক অর্থনীতি তথা ব্যবসা-বাণিজ্য ও যোগাযোগ সম্প্রসারণে বাধা সৃষ্টি করবে। এসব বিষয় পর্যালোচনা করতে সরকার তথা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

প্রসঙ্গত, সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় গঠিত ৯ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি মোটরসাইকেল চলাচলের খসড়া নীতিমালা তৈরি করেছে। কমিটিতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ), বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), পুলিশ এবং সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের প্রতিনিধিরা রয়েছেন।

খসড়া নীতিমালায় তিনটি উদ্দেশ্যের কথা উল্লেখ করা হয়েছে— মোটরসাইকেল চলাচল নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সড়ক দুর্ঘটনা কমানো, অপেক্ষাকৃত কম ঝুঁকিপূর্ণ মোটরসাইকেল ব্যবহারে উৎসাহ তৈরি, মোটরসাইকেল চালকদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো।

খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে, জরুরি প্রয়োজনে স্বল্প দূরত্বে যাতায়াতের জন্য মোটরসাইকেল ব্যবহার করা হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে দূরের পথে মহাসড়কসহ সর্বত্র মোটরসাইকেলের চলাচল দেখা যায়। বিশেষ করে উৎসবের সময় মোটরসাইকেলের ব্যবহার বহুগুণ বেড়ে যায়। এ ক্ষেত্রে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় বিপুল প্রাণহানি ঘটছে। এ জন্য মোটরসাইকেলের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি।

নীতিমালায় ঈদের সময় মহাসড়কে ১০ দিন মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ রাখার কথা বলা হয়েছে। এছাড়া আরও কিছু বিষয় যুক্ত করেছে কমিটি।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৮ ঘণ্টা, মার্চ ১, ২০২৩
এনবি/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।