দিনাজপুর: দিনাজপুরে জিনের বেগম পরিচয়ে এক প্রবাসীর পরিবারের কাছ থেকে ৩ কোটিরও বেশি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন একটি প্রতারক চক্র। সেই প্রতারক চক্রের জিনের বেগমসহ চারজনকে গ্রেফতার করেছে কোতোয়ালি থানা পুলিশ।
রোববার (৫ মার্চ) দুপুরে দিনাজপুরের পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এতথ্য জানান পুলিশ সুপার শাহ ইফতেখার আহম্মেদ।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন- শহরের পাটুয়াপাড়া জাগরনী ক্লাব এলাকার বাসিন্দা মো. বাবুর স্ত্রী মিসেস লাইজু (৪০), আলতাফ হোসেন (৫২), তার মেয়ে আখি সুবর্ণা (৩০) ও ছেলে অনুরাগ আল ইমরান (২৭)। গ্রেফতারকৃত মিসেস লাইজু নিজেকে জিনের বেগম বলে পরিচয় দিয়ে প্রতারণা কার্যক্রম চালাতেন।
অভিযানকালে তাদের কাছ থেকে একটি মোটরসাইকেল, চারটি মোবাইল ফোন, দুইটি মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ভিসা ডেভিট কার্ড এবং আখি সুবর্ণা নামীয় একটি মার্কেন্টাইল ব্যাংকের স্বাক্ষরবিহীন ১০ পাতার চেক বই জব্দ করা হয়েছে।
গ্রেফতারকৃত আলতাফ হোসেন ও মিসেস লাইজু সম্পর্কে দুলাভাই ও শ্যালিকা। আর আতলাফ হোসেনের মেয়ে আখি সুবর্ণা দিনাজপুর শহরের মার্কেন্টাইল ব্যাংকে কর্মরত ছিলেন।
প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার বলেন, মিসেস লাইজু নিজেকে জিনের বেগম পরিচয় দিয়ে তার প্রতারণার জাল বিস্তার করেন। তার কথা ও কাজের বিঘ্ন ঘটালে জিন সেই ব্যক্তি ও তার পরিবারের বড় ধরনের ক্ষতি করবে বলে হুমকি দিতেন। তিনি সাধারণত ধর্মভীরু প্রবাসীদের মূল টার্গেট করে প্রতারণার মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিয়ে থাকেন। এরই ধারাবাহিকতায় বাদী সারোয়ার হোসেন ও তার মা রোকেয়া রহমানকে জিনের বেগম পরিচয় দিয়ে বেহেশতে জিনের মসজিদ বানিয়ে দেবেন ও জিনের সন্তানদের খাওয়া-দাওয়া করাবেন মর্মে বিকাশ, নগদ ও ব্যাংক একাউন্টে নম্বর দিয়ে টাকা পাঠাতে বলেন। একই সঙ্গে টাকা না দিলে বাদীর মা রোকেয়া রহমানকে বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন। তিনি জানান যদি টানা না দেওয়া হয় তাহলে জিনের তার ছেলে ও ছেলের সন্তানদের একে একে মেরে ফেলবে। এভাবে ওই পরিবারের কাছ থেকে ৩ কোটিও বেশি টাকা প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছেন। অবশেষে বিষয়টি বুঝতে পেরে গত ৪ মার্চ দিনাজপুর কোতোয়ালি থানায় শহরের বালুবাড়ী এলাকার বাসিন্দা ও আমেরিকান প্রবাসী সারোয়ার হোসেন একটি প্রতারণার অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগটি দায়েরের পর তদন্তে নামে পুলিশ। তদন্তকালে পুলিশ চারজনকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃত চারজন গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা।
পুলিশ সুপার আরও বলেন, প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেওয়া টাকায় গ্রেফতারকৃত আঁখি সুবর্ণা ইটালী প্রবাসী স্বামী রাসেলকে পাঠান। আর রাসেল সেই টাকা দিয়ে ইটালীতে সুপারশপ খোলেন। গ্রেফতারের পর থেকে এখন পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে আরও দুটি অভিযোগ আমাদের কাছে এসেছে। এছাড়াও কথিত জিনের বেগম মিসেস লাইজুর বিরুদ্ধে যুগ্ম ও জেলা দায়রা জজ আদালতে একটি প্রতারণার মামলা চলমান রয়েছে। তাদের পরিবারটি এলাকায় প্রতারক পরিবার হিসেবে পরিচিত। রোববার বিকেলে গ্রেফতারকৃত চারজনকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
প্রেস ব্রিফিংয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মমিনুল করিম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) মো. মাসুম বিল্লাহ, কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তানভিরুল ইসলাম, পরিদর্শক (তদন্ত) গোলাম মওলা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৭ ঘণ্টা, মার্চ ০৫, ২০২৩
আরএ