ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

অবহেলায় ২ নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ, হাসপাতাল পরিচালক আটক

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২৫২ ঘণ্টা, মার্চ ৯, ২০২৩
অবহেলায় ২ নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ, হাসপাতাল পরিচালক আটক

চাঁদপুর: চাঁদপুর শহরের আব্দুল করিম পাটওয়ারী সড়কের চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের চিকিৎসা অবহেলার কারণে দুই নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় হাসপাতালের পরিচালক মোরশেদ আলমকে নবজাতকদের স্বজনরা মারধর করে পুলিশে সোপর্দ করে।

বুধবার (৮ মার্চ) রাত ৮টা থেকে সাড়ে ৮টার মধ্যে দুই নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এতে খবর পেয়ে রাত সাড়ে ১০টার দিকে চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।

রাত ৮টার দিকে সিজারের পর হাসপাতালের হাসপাতালের চতুর্থ তলায় চাঁদপুর শহরের পুরান বাজার বাকালিপট্টির ভ্যানচালক শাহজাহান মিয়ার দু’দিন বয়সী নবজাতক চিকিৎসা সেবা না পেয়ে মৃত্যুবরণ করে। আর রাত সাড়ে ৮টার দিকে সিনিয়র নার্স আকলিমা ও ওটি ইনচার্জ মোরশেদ আলমের নরমাল ডেলিভারির সময় স্থানীয় বকাউল বাড়ি রোডের সন্তু বেপারীর নবজাতকের মৃত্যু হয়।

ভ্যানচালক শাহজাহান বাংলানিউজকে বলেন, গত ৬ মার্চ রাত ৮টার দিকে হাসপাতালে আমার স্ত্রী সুফিয়ার সিজারের মাধ্যমে কন্যা শিশুর জন্ম হয়। জন্মের পর থেকে সুস্থ্যই ছিল। বুধবার দুপুরে বাচ্চা অসুস্থ হয়ে পড়লে কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়। তারা চিকিৎসক দেখিয়ে বলেছেন- ‘পেটে গ্যাস জমেছে। ’ কিন্তু ওষুধ দেওয়ার পরও সুস্থ হয়নি। পরে রাতে মারা যায়।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, শুধুমাত্র আমার নবজাতকেরই মৃত্যু হয়নি। আমার স্ত্রীর অবস্থাও খারাপ। তার ব্যথার যন্ত্রণায় চিৎকার দিলেও নার্সদেরকে পাওয়া যায়নি। তাদের ফার্মেসি বন্ধ থাকে, কোনো ওষধ পাওয়া যায় না।

শাহাজহানারে আত্মীয় জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, সুফিয়ার প্রথম সন্তানের পর দুটি সন্তান জন্মের পর মারা যায়। এটি চতুর্থ সন্তান। অসহায় ও গরীব হওয়া সত্ত্বেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের পরামর্শে সিজার করেন। কিন্তু তাদের অবহেলার কারণে বাচ্চার মৃত্যু হয়েছে। তারা হাসপাতাল না, কসাইখান খুলে বসেছে। কোনো চিকিৎসক নাই, নার্স নাই। তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

অপর নবজাতকের বাবা সন্তু বেপারী বাংলানিউজকে বলেন, বুধবার দুপুরের দিকে আমার স্ত্রী হীরা আক্তারকে চাঁদপুর হাসপাতালে ভর্তি করি। আমার সন্তান তারা ইচ্ছা করে মেরেছে। আমি তাদের বলেছি, নরমাল ডেলিভারিতে সমস্যা হলে সিজার করেন। তাদের হাসপাতালে কোনো চিকিৎসক নেই, তারা কোনো চিকিৎসক ডেকেও আনেননি। হাসপাতালে থাকা আমার স্বজনরা বলেছেন- পেটের মধ্যে চেপে ধরে আমাদের সন্তানকে তারা হত্যা করেছে।

হীরা আক্তারের বোন জামাতা সফিকুর রহমান বলেন, বিয়ের ১১ বছর পর এই প্রথম সন্তান। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সঠিক সেবা দিতে না পারায় নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে। মা হীরা এখনো জানেন না তার সন্তান মৃত। তাকে জানানো হয়নি।  

হাসপাতালের পরিচালক ওটি ইনচার্জ মোরশেদ আলম স্বীকার করেছেন- তিনি ও নার্স আকলিমা হীরার নরমাল ডেলিভারি করেছেন। তবে কীভাবে মৃত্যু হয়েছে এ বিষয়ে আর কিছু বলতে চাননি।

চাঁদপুর সদর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. মোস্তফা জানান, খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। শিশুদের অভিভাবকের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা আমাদের ঘটনা জানিয়েছে। পরিচালক মোরশেদের বিরুদ্ধে অভিযোগ। তাকে আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। ঘটনা তদন্ত করে এবং অভিযোগের ভিত্তিতে পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা।

চাঁদপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ আবদুর রশিদ বাংলানিউজকে বলেন, ঘটনাটি আমি জানতে পেরেছি। অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলা হবে এবং আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০২৪৭ ঘণ্টা, মার্চ ০৯, ২০২৩
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।