বরিশাল: পুরান ঢাকার সিদ্দিক বাজারে বিস্ফোরণের ঘটনায় নিহত কাপড় ব্যবসায়ী মো. ইসাহাক মৃধার দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
বুধবার (০৮ মার্চ) দুপুর ২টার দিকে বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার লতা ইউনিয়নের চর সন্তোষপুর গ্রামের বাড়িতে তাকে দাফন করা হয়।
ইসাহাক মৃধা ব্যবসায়ীক কারণে দুই সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে নারায়ণগঞ্জের ঢাকেশ্বরি ২ নম্বর গলিতে বসবাস করতেন।
মৃত ইসাহাকের ভাই জহিরুল ইসলাম সজল ও মো. চাঁন মিয়া জানান, ইসলামপুরের হাজী আহম্মেদ মার্কেটের কাপড় ব্যবসায়ী ছিলেন ইসাহাক মৃধা। শ্যামপুর ইব্রাহিম টেক্সটাইল এলাকায় মায়ের দোয়া ডাইং ফ্যাক্টরির মালিকও তিনি।
সজল বলেন, শবে-বরাতের জন্য একটু আগে দোকান বন্ধ করে বাসায় যাওয়ার জন্য ভাই ইসাহাক গুলিস্তান থেকে রওনা হয়েছিলেন। পথে দুর্ঘটনার শিকার হন তিনি। দুর্ঘটনার পর অজ্ঞাত এক লোক ভাবির কাছে ফোন দিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে যাওয়ার জন্য বলেন। তখন ভাবি বিষয়টি আমাকে জানালে আমি তাৎক্ষণিক ভাইয়ের মোবাইলে কল করি। তখনও অজ্ঞাত ব্যক্তি ফোন রিসিভ করে শুধু দ্রুত ঘটনাস্থলে যেতে বলেন, কোনো কারণ বলেননি।
ঘটনাস্থলে গেলে ফোন করা অজ্ঞাত ব্যক্তি ভাইয়ের মোবাইল ফোন সেট, কারখানার স্যাম্পলের কিছু কাপড় এবং নগদ আট হাজার টাকাও ফেরত দিয়ে চলে যান জানিয়ে চাঁন মিয়া বলেন, আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখতে পাই ভাইকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা। আর হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক ভাইকে মৃত ঘোষণা করেন।
ইসাহাকের স্ত্রী ফাতেমা বেগম জানান, বুধবার দুপুরে তার (ইসাহাকের) সঙ্গে শেষ কথা হয়। শবে বরাতের নামাজ বাসায় আদায় করবে বলে আগেই ফেরার কথা জানিয়েছিলেন। আর ওটাই ছিল তার সঙ্গে ইসাহাকের শেষ কথা।
নিহতের ফুফাতো ভাই মো. হুমায়ুর কবির জানান, ইসাহাক পরিবার পরিজন নিয়ে নারায়ণগঞ্জের ঢাকেশ্বরী এলাকায় বসবাস করতেন। প্রতিদিন ফুলবাড়িয়া বাসস্ট্যান্ড থেকে নারায়ণগঞ্জে যাওয়া-আসা করতেন। বুধবারও তিনি বাসায় ফেরার জন্য ইসলামপুর থেকে থেকে ফুলবাড়ীয়া স্ট্যান্ডে আসছিলেন। সিদ্দিক বাজার অতিক্রম করার সময়ে তিনি ভবন বিস্ফোরণের মধ্যে পড়েন।
তিনি বলেন, ঘটনার সময় ইসাহাক রিকশা না অটোরিকশায় ছিলেন তা আমরা ঠিক করে বলতে পারছি না। এমনকি কীভাবে আঘাত পেয়েছেন তার কিছুই বলতে পারছি না। কারণ খবর পেয়ে আমরা সিদ্দিক বাজারে গিয়ে ওই ভবনের সামনের রাস্তার ওপরে ইসাহাকের ছিন্ন ভিন্ন নিথর দেহ পরে থাকতে দেখি। এর কিছুক্ষণের মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের একটি টিম এসে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়।
নিহত ইসাহাকের মামা শফিকুল ইসলাম ফরিদ খান জানান, চার ভাইয়ের মধ্যে ইসাহাক মেঝ। অত্যন্ত ধার্মিক ব্যক্তি ইসাহাক এসএসসি পাশ করে ঢাকায় চলে যায় কর্মের সন্ধানে। প্রথমে ইসলামপুরে ইব্রাহীম টেক্সটাইল মিল নামে একটি কোম্পানিতে চাকরি নেয়। এর পরে তিন ভাইকে ঢাকায় নিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি দিয়ে স্বাবলম্বী করে তোলে এবং ইসাহাক চাকরি ছেড়ে মায়ের দোয়া নামে একটি ডাইং কারখানা খোলে। তিন বছর আগে তার বাবা মারা গেলে ইসাহাকই তার মায়ের প্রধান ভরসাস্থল হয়ে ওঠে।
স্বজনরা জানান, সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে ঢাকা জেলা প্রশাসক, মহানগর বিচারিক হাকিম ও পুলিশ কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়। পাশাপাশি দাফন সম্পন্নের জন্য নগদ ৫০ হাজার টাকাও দেওয়া হয়েছে। মরদেহ গ্রামের বাড়িতে এনে জোহরের নামাজের পর পারিবারিক গোরস্থানে বাবার কবরে পাশে ইসাহাকের দাফন করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৪০ ঘণ্টা, মার্চ ০৯, ২০২৩
এমএস/আরএ