রাজবাড়ী: রাজবাড়ী জেলার অধিকাংশ পাকা সড়ক এখন কাদামাটির রাস্তায় পরিণত হয়েছে। গত চার/পাঁচ মাস ধরে ইটভাটায় মাটি নেওয়ার সময় সড়কে যে মাটি পড়ে সেগুলো বৃষ্টিতে ভিজে পিচ্ছিল হয়ে মরণ ফাঁদ হয়ে দাঁড়িয়েছে যানবাহনের চালক, যাত্রী ও সাধারণ মানুষের জন্য।
জেলার ৫ উপজেলার অধিকাংশ সড়কের চিত্রই এখন এমন। দীর্ঘদিন ধরে জেলায় শতাধিক ইটভাটার মাটি ট্রাকে পরিবহন করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। পিচ্ছিল সড়কে ঘটছে দুর্ঘটনা।
এদিকে ইটভাটার মালিকরা জনদুর্ভোগকে পাত্তা না দিয়ে তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
রোববার (১৯ মার্চ) দুপুর ১২টার দিকে বৃষ্টি শুরু হয়। এ সময় বালিয়াকান্দি উপজেলার সদর ইউনিয়নের বালিয়াকান্দি থেকে নারুয়া, বালিয়াকান্দি থেকে তেঁতুলিয়া ও গনপত্যা, জামালপুরসহ প্রতিটি রাস্তায় ব্যাপক কাদার সৃষ্টি হয়। এতে রাস্তার চলাচলকারী মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার, যাত্রীবাহী বাস, মোটরসাইকেল, অটোভ্যানের চালক, যাত্রী ও পথচারীরা পড়েন চরম ভোগান্তিতে।
প্রতিটা ইটভাটার সামনে থেকে দুই-তিন কিলোমিটার পর্যন্ত মাটি বৃষ্টির পানিতে ভিজে পিচ্ছিল হয়ে মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, গত চার/পাঁচ মাস ধরে ট্রাক ও ট্রাক্টরে করে ইটভাটার জন্য মাটি পরিবহনের সময় উপজেলার প্রতিটি সড়কে সেই মাটি পড়ে স্তুপ হয়ে গেছে। আর বৃষ্টি হওয়ায় সেই পানিতে ভিজে মাটিগুলো পিচ্ছিল হয়ে গেছে। সবার জন্য এখন সড়কগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। যানবাহনগুলো তাদের নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে। যাত্রীরা পড়ছেন দুঘটনার মুখে।
বালিয়াকান্দি টু নারুয়া সড়কে মোটরসাইকেল চালক জাহিদুল ইসলাম বলেন, ইটভাটার কাজে নিয়োজিত মাটিবাহী যানবাহন থেকে রাস্তায় পড়ে যাওয়া মাটি রোদের সময় শুকিয়ে ধুলা হয় আর বর্ষায় কাদাময় হয়ে থাকে দেখে বোঝার উপায় থাকে না এটা পাকা রাস্তা। এতে বছরজুড়েই এই সড়কে চলাচল করতে পোহাতে হয় দুর্ভোগ।
অটোরিকশাচালক শফিকুল হোসেন বলেন, বৃষ্টি হওয়ার পরে বালিয়াকান্দি উপজেলার সড়কগুলোতে কাদা জমে পিচ্ছিল হয়েছে গেছে। শুকনা মৌসুমে ধুলায় চলাচল করা মুশকিল ছিল আর এখন কাদায় পিচ্ছিল হয়ে দুর্ভোগ আরও কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। এই অবস্থা থেকে আমরা মুক্তি পেতে চাই।
মোটরসাইকেল চালক কালাম মোল্লা বলেন, স্থানীয় ইটভাটার মালিকরা তাদের ব্যবসা চালানোর জন্য মাটি টেনে রাস্তাগুলো শেষ করে ফেলেছে। ভাটা মালিকরা প্রভাবশালী হওয়ায় তারা তাদের খেয়াল খুশি মতো চলছে। রাস্তায় মাটি ফেলে আমাদের জন্য মরণফাঁদ তৈরি করেছে। আমরা এই অবস্থার প্রতিকার চাই প্রশাসনের কাছে।
শালমারা থেকে বাইসাইকেলে বালিয়াকান্দিতে আসা আজিজ মণ্ডল বলেন, সাইকেলে করে যাচ্ছিলাম বালিয়াকান্দি বাজারে। বালিয়াকান্দির ইটভাটার সামনে এসে রাস্তা পিচ্ছিল হওয়ায় পড়ে গেছি। হাঁটুটা একটু ছিলে গেছে। এই যুগে এসে পাকা রাস্তায় যদি পড়ে যেতে হয়, এর থেকে বড় দুর্ভাগ্য কী হয় আর।
অটোরিকশাচালক প্রণব বলেন, এই ইটভাটার জন্য আমরা শুষ্ক মৌসুমেও ঠিকভাবে গাড়ি চালাতে পারি না। রাস্তায় ধুলা-মাটির কয়েক ইঞ্চি প্রলেপ পড়ে থাকে। এই মাটি ও মাটি টানার অবৈধ গাড়িতে বেশ কিছু অ্যাক্সিডেন্টও হয়েছে। মারা গেছে কয়েকজন। মাটি টানতে তো মানা নেই, কিন্তু তারা এমনভাবে মাটি টানুক যেন রাস্তায় না পড়ে। তাহলেই তো ভোগান্তি দূর হয়। কে শোনে কার কথা। যারা মাটি টানে তারা প্রভাবশালী। তাদের বিরুদ্ধে কথা বলতেও সবাই ভয় পায়।
বালিয়াকান্দি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম আজাদ বাংলানিউজকে জানান, বালিয়াকান্দির বিভিন্ন রাস্তা এখন ভয়ংকর হয়ে উঠেছে। রাস্তায় পড়ে থাকা মাটি বৃষ্টিতে পিচ্ছিল হয়ে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। যারা মাটি টানেন তাদের আরও সতর্ক হওয়া উচিত। এই বিষয়গুলো যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেজন্য প্রশাসনের উচিত কঠোর হওয়া।
বালিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। আমরা দ্রুতই এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছি। যাদের কারণে রাস্তার এমন দশা হচ্ছে বিশেষ করে ইটভাটা তাদের রাস্তা পরিষ্কারের নির্দেশনা দেওয়া হবে। তারপরও যদি এমনটি ঘটে থাকে তাদের জরিমানার আওতায় আনা হবে। তাদের জন্য সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ হবে এটি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৮ ঘণ্টা, মার্চ ২০, ২০২৩
আরএ