ঢাকা: মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেছেন, ইলিশ নিধন যারা কাজ করবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ) সকালে রাজধানীর ফার্মগেট বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি) মিলনায়তনে ‘মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান ২০২২ এর’ মূল্যায়ন ও ভবিষ্যৎ করণীয়’ শীর্ষক কর্মশালায় তিনি এ কথা বলেন।
শ ম রেজাউল করিম বলেন, জাটকা ও মা ইলিশ সংরক্ষণের উদ্দেশ্য হচ্ছে বড় ইলিশে পরিণত করা। এতে মৎস্যজীবীরা বড় মাছ পেয়ে বেশি টাকা পাবেন। মা ইলিশ ছয় লাখ ডিম দিতে পারে। সেটিকে ধরে কী পরিমাণ ক্ষতি হচ্ছে। সেখানে ১০ হাজার বাচ্চা বড় হলেও বিপুল লাভ।
অভিযান সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন, অভিযানে দুর্বৃত্তরা হামলা করে। গরিবদের অর্থায়ন করে হামলা করতে বাধ্য করে। তারা পেছনে মদদ দেয়।
মেহেন্দিগঞ্জে ওসিকে মেরে হাসপাতালে নিতে হয়েছে। যারা হামলা করবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। হামলাকারীদের কারাগারে পাঠানো হবে।
তিনি বলেন, জেলেদের ২০ কেজির স্থলে ২৫ কেজি চাল দেওয়া হচ্ছে। ছাগল, গরুসহ অন্যান্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ২০টি জেলায় এসব কার্যক্রম চলমান। প্রতিবছর মৎস্যজীবীদের তালিকা প্রণয়ন করতে কমিটি রয়েছে। ইউএন ও ইউপি মেম্বাররাও রয়েছে। প্রকৃত তালিকা দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ৩০ হাজার জেলেকে উপকরণ বিতরণ করা হয়েছে।
মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. ইয়াহিইয়া মাহমুদ বলেন, ৮৪ শতাংশ ডিম দিয়েছে। ৮ লাখ কেজি ডিম দিয়েছে। ৪০ হাজার কোটি জাটকা হয়েছে। ২৩ লাখ পর্যন্ত ডিম দেয় ইলিশ। ৪০০-৫০০ গ্রাম ইলিশ বেশি ডিম দিয়ে থাকে। আকারে বড় হলে ডিম বেশি দেয়। বর্তমানে শূন্য দশমিক ৬ শতাংশে নেমে এসেছে। প্রাকৃতিক খাবার ৫৭ শতাংশ সাগরের। ইলিশ সাগরেও ডিম দিচ্ছে। সরকারের পরিবেশ পরিবর্তনের কারণে। ৯ হাজার নৌকা থেকে ১৫ হাজার হয়েছে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. নাহিদ রশিদ বলেন, সামাজিকতার সঙ্গে অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। যে মাছ জিডিপিতে এক শতাংশ অবদান রাখছে তাকে কেন আমরা মারবো? এটিকে অবশ্যই সংরক্ষণ করতে হবে। বড় হতে দিতে হবে।
কর্মশালায় জানানো হয়, ১৪ বছরে ইলিশের উৎপাদন দ্বিগুণ হয়েছে। ২০০৮-৯ অর্থবছরে ইলিশের উৎপাদন ছিল ২ লাখ ৯৮ হাজার মেট্রিক টন। ২০২১-২২ অর্থবছরে তা বেড়ে সাড়ে ৫ লাখ ৬৭ হাজার মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে। মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) ইলিশের অবদান শতকরা এক শতাংশের বেশি। এর মূল্য হিসাবে ৩৬ হাজার কোটি টাকার বেশি। একক প্রজাতি হিসাবে ইলিশের অবদান ৫ দশমিক ৬৭ লাখ মেট্রিক টন। কর্মসংস্থান রয়েছে ৩০ লাখ মানুষের। সেখানে ৬ লাখ মানুষ সরাসরি ও ২০-২৫ লাখ মানুষ ইলিশ পরিবহন, বিক্রয়, জাল ও নৌকা তৈরি, বরফ উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও রপ্তানিতে জড়িত।
আরও জানানো হয়, ইলিশ আহরণে বিশ্বে ১১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ প্রথম। দেশে ইলিশের ৬টি অভয়াশ্রম করা হয়েছে। সেখানে জমির পরিমাণ ৪৩২ কিলোমিটার।
মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান ২০০৬-৭ থেকে শুরু হয়ে চলমান আছে। ৬৪টি জেলার মধ্যে ৩৮টি জেলা ও ১৭৪টি উপজেলায় এ কার্যক্রম পরিচালিত হয়। দেশে মোট মাছের আহরণের মধ্যে ইলিশের অবদান ১১ দশমিক ৯১ শতাংশ। বিশ্বের মোট উৎপাদিত ইলিশের ৮০ শতাংশই বাংলাদেশের নদ-নদী থেকে আহরণ করা হয়ে থাকে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. নাহিদ রশিদের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. এমদাদুল হক তালুকদার, অতিরিক্ত সচিব মো. আব্দুল কাইয়ূম, মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনের চেয়ারম্যান গাজী আশরাফ উদ্দিন প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৪ ঘণ্টা, মার্চ ৩০, ২০২৩
এমএমআই/এএটি