ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

বিআইডব্লিউটিএ’র মেয়াদোত্তীর্ণ সিবিএ’র বৈধতা জানতে চেয়ে ৯ তথ্য তলব

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ২, ২০২৩
বিআইডব্লিউটিএ’র মেয়াদোত্তীর্ণ সিবিএ’র বৈধতা জানতে চেয়ে ৯ তথ্য তলব ফাইল ফটো

ঢাকা: বিআইডব্লিউটিএ শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের (নিবন্ধন নম্বর বি-২১৭৬) মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সিবিএর দায়িত্ব পালনের বৈধতা আছে কি-না, তা নিয়ে জোরালো প্রশ্ন উঠেছে। সংগঠনটির সভাপতি দাবিদার আবুল হোসেন সিবিএ সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারেন কি-না, সে সংক্রান্ত কাগজপত্র তলব করেছে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়।

গত ২৮ মার্চ বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যানের কাছে লেখা এক জরুরি চিঠিতে এ কাগজপত্রসহ আবুল হোসেনের চাকরি জীবনের ৯টি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তলব করা হয়।

মন্ত্রণালয়ের উপসচিব এস এম মোস্তফা কামাল স্বাক্ষরিত চিঠিতে সাত কার্যদিবসের মধ্যে এসব চাওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) দায়িত্বশীল সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।  

চিঠির সূত্র ধরে অনুসন্ধানে জানা যায়, বিআইডব্লিউটিএ শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে নিবন্ধিত হয়। শ্রম অধিদপ্তরে নিবন্ধনকালে সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে যথাক্রমে আবুল হোসেন ও রফিকুল ইসলামের নাম দেখানো হয়। এরপর নানা ধরনের প্রভাব বিস্তার করে কোনো নির্বাচন ছাড়াই ওই বছরের এপ্রিলে বিআইডব্লিউটিএর সিবিএর দায়িত্ব নেয় সংগঠনটি। গঠনতন্ত্রে কমিটির মেয়াদ দুই বছর হলেও গত সাত বছর একই কমিটি বহাল রয়েছে।  

সূত্র মতে, প্রতি দুই বছর পর নিবন্ধিত সবগুলো সংগঠনের অংশগ্রহণে বিআইডব্লিউএর সিবিএ নির্বাচনের আইনি বিধান থাকলেও পরবর্তীতে আর কোনো নির্বাচনই হয়নি। এভাবে বিতর্কিত সংগঠনটি গত সাত বছর ধরে অবৈধভাবে সিবিএর দায়িত্ব পালন করে আসছে।

সূত্র মতে, মেয়াদোত্তীর্ণ সিবিএর সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী আবুল হোসেন বিআইডব্লিউটিএর হিসাব বিভাগের সহকারী হিসেবে কর্মরত থাকলেও সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম ৯ মাস আগে চাকরি থেকে অবসরে গেছেন। অথচ তিনিও বহাল রয়েছেন স্বপদে। এছাড়া মৃত্যু, অবসর, পদোন্নতি, চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত ও সংগঠন থেকে বহিষ্কারজনিত কারণে বিভিন্ন পদের বেশ কয়েকজন নেতা এখন কমিটির সঙ্গে যুক্ত নেই। শ্রম দপ্তরের বিধান মেনে নির্বাচনের মাধ্যমে শূন্য পদগুলো পূরণও করা হয়নি। তা সত্ত্বেও সংগঠনটি সিবিএর দায়িত্ব পালন করে আসছে।

অভিযোগ রয়েছে, কমিটির মেয়াদ পাঁচ বছর আগে শেষ হলেও বিতর্কিত এ সিবিএর কয়েক নেতা সংস্থার কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ওপর অবৈধ প্রভাব বিস্তার করে নানা সুযোগ-সুবিধা নিয়ে থাকেন। টেন্ডার ও ঘাট ইজারায় কমিশন নেওয়া, নিয়োগ ও বদলি বাণিজ্য, ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কাজে সংস্থার গাড়ি ব্যবহারসহ বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।

সূত্র জানায়, বিভিন্ন গণমাধ্যমে বহুবার এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে নৌ মন্ত্রণালয় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিআইডব্লিউটিএকে আগেও একাধিকবার নির্দেশনাও দিয়েছে। ২০১৯ সালের ২১ জুলাই মন্ত্রণালয় সিবিএ সভাপতি আবুল হোসেনকে ঢাকার বাইরে বদলি, সিবিএ কার্যক্রম স্থগিত বা বাতিলসহ কয়েকটি সুপারিশ করেছিল। নানা অজুহাতে ওইসব সুপারিশ বাস্তবায়ন করেনি বিআইডব্লিউটিএ। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে এবার মেয়াদোত্তীর্ণ সিবিএর বৈধতাসংক্রান্ত কাগজপত্র চেয়েছে মন্ত্রণালয়। তবে চিঠিতে শুধু সভাপতি আবুল হোসেনের তথ্য চাওয়া হয়েছে।  

বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যানকে পাঠানো নৌ মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে যেসব তথ্য চাওয়া হয়েছে সেগুলো হলো- ১. আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের কাছে এ যাবত যতগুলো অভিযোগ জমা পড়েছে তার বিস্তারিত ফটোকপি; ২. নৌ মন্ত্রণালয় তার বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত যতগুলো তদন্ত কমিটি হয়েছে সে প্রতিবেদনের চূড়ান্ত রায়ের সত্যায়িত ফটোকপি এবং বর্তমানে কি কি তদন্ত চলমান তার হাললনাগাদ অগ্রগিতর তথ্য বিবরণী; ৩. আবুল হোসেনের শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের (সিবিএ) সভাপতির বৈধতা সংক্রন্ত কাগজপত্রাদির সত্যায়িত ফটোকপি; ৪. বিভিন্ন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর তার বিরুদ্ধে কি ব্যবন্থা গ্রহণ করা হয়েছে বা কি কারণে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি সেই সংক্রন্ত কাগজপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি; ৫. বিআইডব্লিউটিএতে চাকরির শুরু থেকে এ পর্যন্ত আবুল হোসেনের যতগুলো পদোন্নতি হয়েছে সে পদোন্নতির অফিস আদেশের সত্যায়িত ফটোকপি; ৬. একই পদে কত বছর ধরে কর্মরত আছেন তার তথ্যাদি।  

৭. আবুল হোসেনের জামাতা (মেয়ের জামাই) এস এম আরিফের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এআরএল বিডি লিমিটেড এর নামে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষে যতগুলো ঠিকাদারি কাজ পেয়েছেন তার বিস্তারিত তথ্যের সত্যায়িত ফটোকপি এবং ট্রেড লাইসেন্সের সত্যায়িত ফটোকপি; ৮. আবুল হোসেনকে ঢাকার বাইরে বদলিসহ ২০১৯ সালের ২১ জুলাই নৌ মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন শাখার স্মারক নং ১৮০১৬.০২৭.০০.০০.০০২.২০১০-১২৩৩ মোতাবেক পাঁচটি শাস্তিযোগ্য ব্যবস্থা গ্রহণের যে সুপারিশ করা হয়েছিল পরবর্তীতে তার বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তার বিস্তারিত তথ্য, ৯. আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে যদি কোনো মামলা চলমান থাকে তাহলে সে মামলার বিস্তারিত তথ্য।  

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ২, ২০২৩
টিএ/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।