সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরার রেললাইন প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়ন, বসন্তপুরে নৌবন্দর চালু, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম দ্রুততম সময়ে শুরু করাসহ ২১ দফা দাবিতে নাগরিক সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার (৮ এপ্রিল) সাতক্ষীরা কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত নাগরিক সংলাপে এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে আগামী বাজেটে সুস্পষ্ট বরাদ্দ দেওয়ার দাবি জানান জেলার বিশিষ্ট রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও গণমাধ্যম কর্মীরা।
সংলাপে বক্তারা বলেন, প্র্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর দীর্ঘদিনেও নাভারন-সাতক্ষীরা-মুন্সিগঞ্জ রেললাইন প্রকল্পের কাজ শুরু হয়নি। বসন্তপুর নৌবন্দর স্থাপনে সংরক্ষক নিয়োগ করে গেজেট প্রকাশিত হলেও দৃশ্যত আর কোনো কার্যক্রম নেই। সাতক্ষীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে। সাতক্ষীরায় পর্যটন শিল্পের সম্প্রসারণে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা আজো বাস্তবায়িত হয়নি। সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চালু হলেও চিকিৎসক ও জনবল সংকটে সেটি চিকিৎসা সেবায় পরিপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারছে না। ভোমরা বন্দর আজও পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হয়নি। জেলার বিভিন্নস্থানে রাস্তাঘাট ব্রিজ কালভার্ট জনসাধারণের চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। নূন্যতম নাগরিক সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে পৌর এলাকার মানুষ। আয়রন আর্সেনিক লবণাক্ততার কারণে বিশুদ্ধ পানির অভাব জেলার সব এলাকায়। জলাবদ্ধতা ও নদী ভাঙন রোধে সরকার গৃহীত হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্পে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে নদী কেটে খাল এবং খাল কেটে ড্রেন তৈরি করে এই জেলাকে মানুষের বসবাসের অনুপযোগী করে তোলা হচ্ছে। জনগণের হাজারো অভিযোগ এই প্রকল্পের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে।
বক্তারা আরও বলেন, সারা দেশে উন্নয়ন এখন দৃশ্যমান। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর এপারের জেলাগুলোতেও উন্নয়নের জোয়ার বইতে শুরু করেছে। কিন্তু সেই উন্নয়ন যশোর-নড়াইল-খুলনা-বাগেরহাট পর্যন্ত এসে পৌঁছালেও সাতক্ষীরা জেলা এখনো অনেকটা দূরে রয়ে গেছে। সাতক্ষীরা জেলার উন্নয়নের গতি খুবই ধীর। প্রাকৃতিক দুর্যোগ কবলিত এই এলাকায় শিক্ষার হার কম। দরিদ্রতার হার দেশের অন্যান্য স্থানের চেয়ে অনেক বেশি। ফলে মৌলবাদ জঙ্গিবাদসহ নানা সংকটে জর্জরিত এই এলাকা। ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি, শিক্ষার হার বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের মাধ্যমে এই এলাকাকে এগিয়ে নেওয়া প্রয়োজন।
বক্তারা সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির ২১ দফা দাবির প্রতি সংহতি জানিয়ে পাটকেলঘাটা থানাকে উপজেলা এবং সাতক্ষীরাকে প্রথম শ্রেণির জেলা ঘোষণার দাবি জানান।
সংলাপে সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির ২১ দফা দাবি সম্বলিত বুলেটিন প্রকাশ, ৩ মে সাতক্ষীরার সব সংসদ সদস্য, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, জেলা প্রশাসক, পৌর মেয়র ও উপজেলা চেয়ারম্যানদের কাছে এক যোগে ২১ দফা দাবি সম্বলিত স্মারকলিপি পেশ এবং ৮ মে সাতক্ষীরা শহিদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কে গণঅবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
সংলাপে সভাপতিত্ব করেন সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাড. শেখ আজাদ হোসেন বেলাল।
বক্তব্য দেন- জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ও দৈনিক কালের চিত্র সম্পাদক অধ্যক্ষ আবু আহমেদ, জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি শেখ আজাহার হোসেন, শিক্ষাবিদ প্রফেসর আব্দুল হামিদ, জেএসডি নেতা সুধাংশু শেখর সরকার, জাসদ নেতা ওবায়দুস সুলতান বাবলু, উন্নয়ন কর্মী মাধব চন্দ্র দত্ত, গণফোরাম নেতা আলী নুর খান বাবুল, সিনিয়র আইনজীবী আ্যড. ওসমান গনি ও অ্যাড. আজাহারুল ইসলাম, প্রখ্যাত শ্রমিক নেতা শেখ হারুণ অর রশিদ, আওয়ামী লীগ নেতা কাজী আকতার হোসেন, ভূমিহীন নেতা ওহাব আলী সরদার, বাংলাদেশ জাসদের নেতা অধ্যাপক ইদ্রিস আলী, বাসদ নেতা অ্যাড. খগেন্দ্র নাথ ঘোষ, সাংবাদিক আব্দুল ওয়ারেশ খান চৌধুরী, বাসদ নেতা নিত্যানন্দ সরকার, সংগীত শিল্পী আবু আফনান রোজ বাবু, জেলা শিল্পকলা একাডেমির সম্পাদক শেখ মুসফিকুর রহমান মিল্টন, শ্রমিক নেতা আব্দুল্লাহ সরদার, উন্নয়ন কর্মী শেখ মনিরুজ্জামান, কবি মন্ময় মনির, পৌর কাউন্সিলর কায়সারুজ্জামান হিমেল, কৃষকলীগ নেতা অ্যাড. আল মাহামুদ পলাশ, পাবলিক লাইব্রেরির সম্পাদক কামরুজ্জামান রাসেল, উদীচীর শেখ সিদ্দিকুর রহমান, উত্তরণের অ্যাড. মুনির উদ্দীন, সাংবাদিক আব্দুস সামাদ, ভূমিহীন নেতা আব্দুস সামাদ, আদিত্য মল্লিক, সিপিবির আবুল হোসেন, বিল্পবী ওয়ার্কার্স পার্টির মুনসুর রহমান, ভূমিহীন নেতা আব্দুস সাত্তার, কালিগঞ্জের নাগরিক নেতা অ্যাড. জাফরুল্লাহ ইব্রাহিম, কুতুব উদ্দিন, মোহাম্মদ ইব্রাহিম, জোৎন্সা দত্ত, সিনিয়র সাংবাদিক ও প্রখ্যাত নাগরিক নেতা অ্যাড. আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩০ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৮, ২০২৩
আরএ