ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বৈদ্যুতিক লাইনে ধোঁয়া বের হয়, মুহূর্তেই আগুন

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১২ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭, ২০২৩
বৈদ্যুতিক লাইনে ধোঁয়া বের হয়, মুহূর্তেই আগুন

ঢাকা: ‘আমরা দোকানের ভেতরে ছিলাম। সকাল ১০টার দিকে দেখি চাল থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে।

তখন দ্রুত আমরা পানি ছিটাতে থাকি। কিন্তু ধোয়া কমছে না। মুহূর্তের মধ্যে আগুন ধরে যায়। আর আগুন দ্রুত ছড়াতে শুরু করে। আমার পাশের দোকানটি বন্ধ ছিলো। তাকে ফোন করে জানাই। পরে আমরা ফায়ার সার্ভিসে কল করলে ১০টা ২৫ মিনিটে ঘটনাস্থলে এসে পানি ছিটানো শুরু করে। এর মধ্যে আমার দোকানের সব পুইরা ছাই৷ ঈদের আগে আমরা এখন নিঃস্ব। ’

রাজধানীর উত্তরা ৭ নম্বর সেক্টরে বিজিবি মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত দোকান ‘এস এ লাইট হাউজ অ্যান্ড এসি সেন্টারের’ দোকানী মো. সুমন এসব কথা বলেন।  

এর আগে, সোমবার (১৭ এপ্রিল) সকালে রাজধানীর উত্তরা বিজিবি মার্কেটে আগুনের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে সকাল ১০টা ২৫ মিনিটে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের ৫টি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে চেষ্টা চালায়। বেলা ১১টা ১০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয় ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা।  

এই ঘটনায় মার্কেটের ১২টি দোকানে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সবগুলো দোকানেই মোটরসাইকেল ও গাড়ির পার্টস বিক্রি ও মেরামতের কাজ হতো বলে জানিয়েছে ব্যবসায়ীরা।  

ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, মার্কেটের বৈদ্যুতিক লাইনে ত্রুটি ছিল। বিভিন্ন দোকানে মধ্যে মধ্যে বিদ্যুতের আর্থিং (শর্ট) লাগতো। এ বিষয়ে একাধিকবার বিজিবি মার্কেট কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও তারা মার্কেটের বৈদ্যুতিক লাইনের কোনো মেরামত কাজ করেনি।  

ব্যবসায়ীরা জানায়, বিজিবি মার্কেটে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুনের ঘটনা ঘটেছে। মার্কেটের পেছনের দিকে এস এ লাইট হাউজ অ্যান্ড এসি সেন্টার ও হালিম অটো ইলেকট্রনিক অ্যান্ড এসি দোকানের মধ্যে থাকা বৈদ্যুতিক লাইন থেকে প্রথমে ধোঁয়া বের হয় এবং মুহূর্তেই তা থেকে আগুনের সূত্রপাত ঘটে।  

ক্ষতিগ্রস্ত দোকান এস এ লাইট হাউজ অ্যান্ড এসি সেন্টার দোকনের কর্মচারী ও প্রত্যক্ষদর্শী মো. আনিছ বাংলানিউজকে বলেন, আমি দোকানে বসা ছিলাম। দেখি চালের কাছে বিদ্যুতের লাইন থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে। এতে দোকানে থাকা আমরা সবাই পানি ছিটাতে থাকি। কিন্তু ধোঁয়া বেড়ে আগুন লেগে যায়। আর আগুন মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে থাকে।

‘আমরা দোকানের ভেতর থেকে কোনো মালামাল বের করতে পারিনি। দোকানের ভেতরে থাকা সব মালামাল পুড়ে ছাই হয়ে গেছে’ যোগ করেন তিনি।  

দোকানে কী পরিমাণ মালামাল মজুদ ছিল জানতে চাইলে আনিছ বলেন, আমাদের দোকানের সিলিংয়ের উপরে একটি গোডাউন ছিলো। সেখানে গাড়ির বিভিন্ন ডেকোরেশনের আইটেম ও গাগির এসি ও যন্ত্রপাতি মজুদ ছিলো। আর দোকানে আরও যন্ত্রাংশ ছিল। সব মিলিয়ে প্রায় ১ কোটি টাকার মালামাল পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।  

তিনি অভিযোগ করেন, এই মার্কেটের সব বৈদ্যুতিক লাইন সিলিংয়ের ওপরে ঘেঁষে স্থাপন করা। প্রায় সময় আমাদের দোকান ও অন্যান্য দোকানে বৈদ্যুতিক লাইনের আর্থিং করতো। এ বিষয়ে মার্কেট কর্তৃপক্ষে অনেকবার বলা হলেও তারা কোনো মেরামত কাজ করেনি।  

এদিকে, উত্তরার আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত বিজিবি মার্কেটে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, মার্কেটের মাঝের অংশের ১২টি দোকান আগুনে পুড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দোকানের ভেতরে সব কিছু পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আগুন আতঙ্কে মার্কেটের সব দোকানীরা তাদের সব মালামাল বের করে মার্কেটের দুইপাশের সড়কে রেখেছেন।  

এদিকে ঘটনাস্থলে পুলিশ সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন।  

ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী মো. আব্দুল হালিম বাংলানিউজকে বলেন, আমার দোকানে ১৫-২০ লাখ টাকার মালামাল পুড়ে গেছে। দোকান ভাড়া মাসে ৬০ হাজার টাকা দিই। আবার মার্কেটের নানান সার্ভিস চার্জ দিই। কয়দিন আগে মার্কেটের বৈদ্যুতিক লাইনের কিলোওয়াট বাড়ানোর কথা বলে প্রতি দোকান থেকে ৭ হাজার করে টাকা নিয়েছে। তখনও মার্কেটের বৈদ্যুতিক লাইনে ত্রুটির কথা কর্তৃপক্ষকে বলেছিলাম। কিন্তু তারা কোনো গুরুত্ব দেয়নি। এখন আগুনে আমার দোকান পুড়ছে, ক্ষয়ক্ষতি তো আমারই হয়েছে। মার্কেট কর্তৃপক্ষের কোনো ক্ষতি নাই। কিন্তু তারা আমাদের কোনো সুবিধা দেয়নি৷ 

এদিকে আগুনের ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন পুলিশের ডিএমপি উত্তরা বিভাগের বিমানবন্দর জোনের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) মো. তৌহিদুল ইসলাম। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে মার্কেটের বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত। তবে তদন্ত সাপেক্ষে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলা যাবে।  

এদিকে, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মিডিয়া কর্মকর্তা মো. শাহাজান শিকদার বাংলানিউজকে বলেন, ফায়ার সার্ভিস কন্ট্রোল রুম বিজিবি মার্কেটে আগুনের সংবাদ পায় ১০টা ২৫ মিনিটে। ঘটনাস্থলে ১ম ইউনিট পৌঁছায় ১০ টা ৩৫ মিনিটে। মোট ৬টি ইউনিট ঘটনাস্থলে কাজ করে ১১টা ১০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। পুরোপুরি আগুন নেভানো হয় ১১টা ২৫ মিনিটে।  

তিনি বলেন, তবে এই ঘটনায় কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। আসলে কী কারণে আগুনের সূত্রপাত তা তদন্ত সাপেক্ষে বলা যাবে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৫১০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭, ২০২৩
এসজেএ/এসএ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।