ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

আমি চেয়ারম্যানি চাই না, আমার ভাইকে ফিরিয়ে দিন

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৬, ২০২৩
আমি চেয়ারম্যানি চাই না, আমার ভাইকে ফিরিয়ে দিন যুবলীগ নেতা নোমানের ভাইয়ের আহাজারি

লক্ষ্মীপুর: 'আমি চেয়ারম্যানি চাই না, আমার ভাইকে চাই। আমি চেয়ারম্যান হওয়াতে কাশেম জেহাদী (আ.লীগ নেতা আবুল কাশেম জেহাদী) আমার ভাইকে হত্যা করেছে।

তাকে বাঁচতে দেয়নি। আমি এখন কি নিয়ে থাকবো। আমার চেয়ারম্যানি দরকার নেই, আমার ভাইকে ফিরিয়ে দিন। '

কান্না জড়িত কণ্ঠে এমন কথাগুলো বলেন নিহত নোমানের বড়ভাই ও সদর উপজেলার বশিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান।  

তার দাবি, বশিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও চন্দ্রগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কাশেম জেহাদী এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন।  
 
মঙ্গলবার (২৫ এপ্রিল) রাতে লক্ষ্মীপুরের পোদ্দার বাজারে দুর্বৃত্তের গুলিতে জেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল নোমান ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা রাকিব ইমাম নিহত হয়।  

স্থানীয়রা জানায়, সাবেক যুবলীগ নেতা নোমান ছাত্রলীগ নেতা রাকিবকে নিয়ে রাতে মোটরসাইকেলে করে পোদ্দার বাজারে আসেন। মোটরসাইকেলটি রাকিব চালাচ্ছিল। একটি ফোন কল পেয়ে নোমান বাজার থেকে নাগেরহাট সড়কের দিকে ঢোকেন। এসময় স্থানীয় লোকজন তিন/চারটি গুলির শব্দ পান। পরে ঘটনাস্থলে গিয়ে নোমানকে মৃত অবস্থায় দেখতে পান। হত্যাকারীরা তাদের মোটরসাইকেল ও মোবাইল ফোন নিয়ে গেছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় লোকজন।  

নোমানের মৃত্যুর সংবাদে রাতেই সদর হাসপাতালে আসেন জেলা পুলিশ সুপার মো. মাহফুজ্জামান আশরাফ। হাসপাতালে এসে তিনি নিহত নোমানের মরদেহ পরিদর্শন করেন। এসপি চলে যাওয়ার সময় নোমানের ভাই চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান পুলিশ সুপারকে জড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। এসময় তাকে সান্ত্বনা দেন এসপি।  

জানা গেছে, ২০২১ সালের ২৬ ডিসেম্বর বশিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন পান সাবেক চেয়ারম্যান ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে বহুল আলোচিত আওয়ামী লীগ নেতা আবুল কাশেম জেহাদী। তার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে প্রার্থী হন জেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল নোমানের বড়ভাই ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি মাহফুজুর রহমান। নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী জেহাদীকে হারিয়ে বিজয়ী হন মাহফুজ। নির্বাচন কেন্দ্রীক বড় ভূমিকা ছিল নোমানের। ফলে নির্বাচনে পরাজয় হয়েছে আলোচিত সন্ত্রাসী বাহিনীর প্রধান আবুল কাশেম জেহাদীর। এ কারণেই জেহাদীর সঙ্গে নোমানের বিরোধ চরম আকার ধারণ করে। বিএনপি নেতাকে জয়ী করে নৌকাকে পরাজিত করার জন্য যুবলীগ নেতা নোমানকে দোষারোপ করতেন জেহাদী।  

যদিও নোমান ইউনিয়ন ছাত্রলীগের দায়িত্বে থাকাকালীন জেহাদীর আস্থাভাজন ছিলেন বলে স্থানীয় লোকজন জানিয়েছে।  

নির্বাচন কেন্দ্রীক শত্রুতার জেরে বিভিন্ন সময়ে এ দুই নেতা একে অপরকে নিয়ে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ আনতো। গত ৩০ সেপ্টেম্বর রাতে দুর্বৃত্তের গুলিতে খুন হন বশিকপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সহ সভাপতি আলাউদ্দিন। তিনি সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কাশেম জেহাদীর চাচাতো ভাই এবং জেহাদীর সেকেন্ড ইন কমান্ড ছিলেন। আলাউদ্দিনের বিরুদ্ধেও হত্যা, চাঁদাবাজীর বেশ কয়েকটি মামলা ছিল। জেহাদীর হয়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাতো আলাউদ্দিন।  

ওই হত্যাকাণ্ডের জন্য আবুল কাশেম জেহাদী দায়ী করেছেন যুবলীগ নেতা আবদুল্যাহ আল নোমানকে। যদিও পরবর্তীতে হত্যা মামলায় তাকে আসামি করা হয়নি। তবে ওই হত্যার রহস্য এখনো উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ।  

এদিকে স্থানীয়রা মনে করছেন দীর্ঘ দিনের ক্ষোভ এবং আলাউদ্দিন হত্যার ঘটনায় প্রতিশোধ নিতেই যুবলীগ নেতা নোমানকে হত্যা করা হয়েছে।  

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা পুলিশ সুপার মাহফুজ্জামান আশরাফ বলেন, একে অপরকে দায়ী করবে এটাই স্বাভাবিক, পুলিশের কাজ হলো সঠিক তদন্ত করে দোষীকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা।  

সাবেক চেয়ারম্যান কাশেম জেহাদী ও যুবলীগ নেতা নোমানের ব্যাপারে  আগের পাল্টা-পাল্টি অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি যোগদানের পর পোদ্দার বাজারে আইনশৃঙ্খলা মিটিং করেছি। সেখানে বর্তমান চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান ও সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কাশেম জেহাদীও ছিল। তাদের এলাকায় শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখতে বলেছি। তারা মিলে গিয়েছে, আমাকে কথাও দিয়েছে। এখন কারা এ ঘটনাটি ঘটিয়েছে, কোনো ৩য় পক্ষ কি না। আমরা কাউকে দায়ী করছি না, ছেড়েও দিচ্ছি না। পুলিশের কাজ হচ্ছে অনুসন্ধান করা, সন্দেহ করা। আমরা প্রত্যেককে সন্দেহ করছি।

এ হত্যাকাণ্ড আগের যুবলীগ নেতা আলাউদ্দিন হত্যার প্রতিশোধ কিনা- জানতে চাইলে পুলিশ সুপার বলেন, সেটাও আমরা খতিয়ে দেখতেছি।  

বাংলাদেশ সময়: ১২৫৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৬, ২০২৩

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।