লালমনিরহাট: লালমনিরহাটে বৈঠকের নামে গৃহবধুকে জোর করে তালাকে স্বাক্ষর নিয়ে দেনমোহরের পুরো টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ইউপি সদস্যসহ মাতব্বরদের বিরুদ্ধে।
শনিবার (১৩ মে) সকালে ভুক্তভোগী গৃহবধূ আছমা খাতুন বাদি হয়ে ইউপি সদস্যসহ ৪ মাতব্বরের বিরুদ্ধে আদিতমারী থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
ভুক্তভোগি আছমা খাতুন আদিতমারী উপজেলার বড় কমলাবাড়ি গ্রামের দিনমজুর আকতার হোসেনের মেয়ে।
অভিযুক্ত মাতব্বররা হলেন- উপজেলার কমলাবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের ২নম্বর ওয়ার্ড সদস্য সুধাংশু বর্মণ (৪৫), একই ইউনিয়নের বড় কমলাবাড়ি গ্রামের মৃত আব্দুল কাদেরের ছেলে ফজলুল হক (৪৫), ছোট কমলাবাড়ি গ্রামের মজনু মিয়া (৫০) ও আদিতমারী সুইচগেট এলাকার আসাদ মিয়ার ছেলে পারভেজ (২৮)।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, দুই বছর আগে কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা ইউনিয়নের মহিষামুড়ি গ্রামের আব্দুস সবুর মিয়ার ছেলে আলামিনের সঙ্গে এক লাখ ৭০ হাজার টাকা দেনমোহরানায় বিয়ে হয় আছমা খাতুনের। বিয়ের কিছুদিন পরেই যৌতুকের দাবিতে আছমার ওপর নির্যাতন শুরু করে স্বামী ও তার পরিবারের লোকজন। নির্যাতনের একপর্যায়ে আছমাকে বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দেন স্বামী আলামিন।
পরে বিষয়টি স্থানীয় ইউপি সদস্য সুধাংসু বর্মণকে অবগত করে বিচার দাবি করেন আছমা খাতুন ও তার পরিবার। অবশেষে গত বৃহস্পতিবার (১১ মে) সকালে ইউপি সদস্যসহ মাতব্বররা বিষয়টি আপোষ করে দেওয়ার নাম করে আছমা খাতুন ও তার বাবাকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে কৌশলে কাকিনা কাজি অফিস নিয়ে যান।
সেখানে দুই পক্ষের উপস্থিতিতে বৈঠকে বিচারক ইউপি সদস্য সুধাংশু দেনমোহরনা ও খোরপোষ বাবদ এক লাখ ২০ হাজার টাকা ঠিক করেন। এ সিদ্ধান্তে রাজি না থাকায় তালাকের বহিতে জোর পুর্বক আছমার স্বাক্ষর নিয়ে দেনমোহরনার এক লাখ ২০ হাজার টাকা গ্রহণ করেন ইউপি সদস্য।
বাড়ি পৌঁছে সেই টাকা তাদের হাতে পৌছে দেওয়ার কথা বলে আছমাকে বাড়ি পাঠিয়ে দেন। এরপর সমুদয় টাকা ইউপি সদস্যসহ ৪ মাতব্বর নিজেরা ভাগ বাটোয়ারা করে আত্মসাত করেন। টাকা চাইলে আছমাকে বিভিন্নভাবে হুমকি দিয়ে আসছেন বলে অভিযোগ আছমার।
এ ঘটনায় টাকা উত্তোলন ও প্রতারক মাতব্বরদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আদিতমারী থানায় ইউপি সদস্যসহ ৪ মাতব্বরের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন প্রতারিত গৃহবধু আছমা খাতুন। আত্মসাত করা এক লাখ ২০ হাজার টাকা মাতব্বরদের মধ্যে ভাগবণ্টনের একটি অডিও রেকর্ড সংরক্ষণ করে থানায় জমা দিয়েছেন বাদি।
আছমা খাতুন বলেন, শিশু কাল থেকে অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে জমানো টাকা যৌতুক দিয়ে বিয়ে করেছি। সেই সংসারও ভেঙ্গে গেল। জোর করে তালাকের কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে দেনমোহরের টাকাও মেরে দিল মাতব্বররা। এখন টাকা চাইতে গেলে বাড়ি ছাড়া করার হুমকি দিচ্ছে।
অভিযুক্ত ইউপি সদস্য সুধাংশু বর্মণের মোবাইল বন্ধ থাকায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
আদিতমারী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মোজাম্মেল হক বলেন, টাকা ভাগবাটোয়ারার একটি অডিও রেকর্ডসহ বাদির লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০২ ঘণ্টা, মে ১৩, ২০২৩
এসএম